যশোধরা রায়চৌধুরী-র কবিতা

রাত্রির কবিতাগুচ্ছ

রাত্রি এক দাপটময় অত্যাচার
অন্ধকার দুহাত আর অন্ধকার ঘুর্নিঢালা
অন্ত্র তার

কেউ কি সব, পুরোটা চায়? রাত্রিকে?
কেউ কি বোঝে ঝাপট, তান, মাতৃকার?

দাঁত খিঁচোয়। প্রাণ ঘোরে কোন কূপে
বারান্দায় জানালাময় পেত্নি দেয়
কোথায় কার দরজা পড়ে দমদমাস
কোথায় কার অহংকার চূর্ণ হয়
থালা গেলাস…

ঝনঝনাত শব্দ হয়, কষ্টচয়
খুব ফাটে, কী উতরোল, মুক্তি চায়
রাত্রি এক ক্ষিপ্ত ষাঁড়, ভ্রূণ পাচার
রাত্রি এক দুর্গতের ত্রাণ অসাড়
খুব তেতো, খুব কষায়…

বিষ ঢালা, তরল বিষ, উপচানো পিত্তাশয়
রাত্রি এক…

অর্গল খুলে যাবে একদিন
সেইদিন আমি বলতে পারব, পারবই রাত্রির কথা
গলগল করে বলব আমাদের যাবতীয় মনোবাঞ্ছা আর কৃতকর্মদোষ

কীলক খুলে ফেলব একদিন
প্রতিটি মন খারাপ থেকে তুলে নেব অপরাধবোধের পেরেক
সেইদিন পায়ের তলায় নরম দুর্বাদলশ্যাম
সেইদিন জুতো ছুঁড়ে ফেলব অনেক দূরে
নিশানা করে

যেদিক দিয়ে জুতো পড়বে, অন্য দিকে রয়ে যাবে নিশানা
জুতো ল্যান্ড করবে আমাদের পরচর্চার পায়েসে
আমরা ল্যান্ড করব আমাদের আত্ম অহংকার নামক ফোঁড়ার ঠিক মধ্যখানে
তরল ফুটন্ত পুঁজ ফুটন্ত লাভার মত ছড়িয়ে যাব

অর্গল খুলে যাবে একদিন
সেদিন আবার বলব তমসার কথা, রাত্তির রাত্রি রাতের কথা

আমাদের আবিল করতলের কথা বলি
আমাদের চিকন মনোরথের কথা বলি
আমাদের রোদ্দুর আসা চৌকো উঠোনের জন্য কাঁদি
আমাদের স্পষ্টতার অভাবের জন্য নীলচে জানালায় নাক ঘষি
আমাদের প্রতিদিনের চশমায় পুরু অন্ধকার জমেছে
আমাদের প্রতিটি কথার মধ্যে সরের মত জমে আছে রাত্রিদোষ

মিথ্যা আর চর্বিত চর্বণ
কোনটা বেশি খারাপ জানিনা
মিথ্যা আর ঈর্ষাজনিত অর্ধকথন
কোনটা বেশি অসত্য জানিনা
মিথ্যা আর নীরবতায় ডুবিয়ে দেওয়া এক রাশ মানুষকে
কোন অত্যাচার অধিক, মরণোপম, ক্লেশদানকারী?

কে জানে, মেয়েরা ছাড়া?
রাত্রিকে ত মেয়েরাই জেনেছে

আর, কবিরা।

Facebook Comments

1 thought on “যশোধরা রায়চৌধুরী-র কবিতা Leave a comment

  1. দিন জানে না রাত্রি তার মা , রাতের গর্ভেই তাদের জন্ম । জন্মের পরেই চোখ ফোটে না … আলোতে দিক্‌দর্শন রাত্রির কোলে, অন্ধকার মহাবিশ্বের গর্ভে কিঞ্চিৎ নক্ষত্রেরা আলো দেয় আরও কিঞ্চিৎ গ্রহ কণাকে মহতী প্রেমে।

Leave a Reply