রাহাত ইন্দোরির কবিতা : ওয়াসিম আনসারি

ইন্দোরে এক সাধারণ পরিবারে জন্ম রাহাত ইন্দোরির। বাবা কাপড়ের কলের কর্মী। চার ভাই বোনের কনিষ্ঠতম রাহাত ছোট থেকেই হিন্দি, উর্দু ইত্যাদি ভাষায় কবিতা, প্রবন্ধ লিখতে ভালবাসতেন। সেই সূত্রেই সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা। বরকাতুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উর্দু সাহিত্যে এমএ করেন। এর পর শিক্ষকতা ও লেখালিখি দুইয়েই মনোনিবেশ করেন। সহজ ভাষার ব্যবহার, মধুর শব্দচয়ন, রোমান্টিক ভাবনা ও মাঝে মাঝে হাস্যরস – অচিরেই তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন রাহাত। ডাক আসতে থাকে বলিউডেও। তাঁর লেখা মুন্নাভাই এমবিবিএস-এর টাইটেল সং আজও মনে আছে অনেকেরই। বিশ্বের ২০টিরও বেশি দেশে একাধিকবার কবিতার আসরে যোগ দিয়েছেন রাহাত। কবি, চিত্রকর এবং বলিউডি ছবিতে গীতিকার। অনেক পরিচয় ছিল তাঁর। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, এনআরসি বিরোধী আন্দোলনে গত বছর যখন গোটা দেশ উত্তাল, তখন রাহাত ইন্দোরির বিখ্যাত উর্দু কবিতার পংক্তি উদ্ধৃত করতেন প্রতিবাদীরা। “সভি কা খুন হ্যায় শামিস ইহাঁ কি মিট্টি ম্যায়, কিসি কি বাপ কা হিন্দুস্তান থোড়ি হ্যায়!” বিখ্যাত এই লাইন অনেককেই উদ্ধৃত করতে দেখা গিয়েছিল সেইসময়।

কপালে লেখা অদৃষ্টকে খুঁজে পেলাম না।
পাগড়ি কোথায় পাব যেখানে মাথা পেলাম না।

ভবঘুরেমির ডুবন্ত সূর্যের সাথে ঘনিষ্ঠতা আছে,
সন্ধ্যার পর আমাকেও তো ঘরে খুঁজে পাই না।

কাল সারারাত আয়নাদের উৎসব হল,
অন্ধ তামাশা দেখা মানুষ খুঁজে পেল না পাথর।

আমি চাইছিলাম নিজের সাথে দেখা হক একবার,
কিন্তু আমার সমান কোনো আয়না খুঁজে পেলাম না।

যদি ভিনদেশে যাও সব ভালো করে দেখে নাও
হতে পারে ফিরে এসে ঘরটা নাও পেলে।

ডাকবে কিন্তু তুমি যেও না,
এটা দুনিয়া এখানে এসো না।

আমার বেটা কাউকে ভালোবাসো,
কিন্তু নিজেকে অতিক্রম কর না।

নক্ষত্র গুলো ছিঁড়ে নিয়ে আসব আমি,
কিন্তু খালি হাতে বাড়ি ফেরা যাবে না।

এখন চারিদিকে ছড়িয়ে আছে মহামারি,
এই সময়টা মরের যাওয়ার জন্য না।

ওরা গলার মাপ নিচ্ছে নিয়ে নিক,
কিন্তু অত্যাচারীকে ভয় পাওয়া যাবে না।

কতটা খেয়েছি মদ কিভাবে কেটেছে রাত আমার মনে নেই।
রাতের সাথে সাথে ভুলে গেছি সব আমার কিচ্ছু মনে নেই,

আমার এটাও জনা নেই যে যেতে হবে কোথায়।
কেউ ধরে নাও আমার হাতটা আমার কিচ্ছু মনে নেই।

চোখের জল আর মদে কেটে গেল জীবন,
কবে দেখে ছিলাম বৃষ্টি আমার কিচ্ছু মনে নেই।

কি জানি কি ভাঙলো গেলাস নাকি আমার হৃদয়
ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে মন আমার কিচ্ছু মনে নেই।

চোখ তৃষ্ণার্ত একটা দৃশ্য দিয়ে দাও,
এই দ্বীপটাকেও একটা সমুদ্র দিয়ে যাও।

নিজের মুখের ছবি খুঁজে যাচ্ছি,
যদি আয়না না হয় একটা পাথর দিয়ে যাও।

বন্ধ কুঁড়ি গুলোর শিশির চাই,
এই প্রদীপ গুলোকে আলো দিয়ে যাও।

পাথর গুলোর ঋণ শোধ করে,
এই শতাব্দীকে কোনো পয়গম্বর দিয়ে যাও।

হাসির শব্দে কেটে যাচ্ছে জীবন,
কোন একদিন বিষন্ন করে দিয়ে যাও।

আবার বলো না আত্মহত্যা পাপ,
আজ সময় নিয়ে ফয়সালা করে দিয়ে যাও।

বিরুদ্ধে থাকলে থাকতে দাও জীবন থোড়াই ।
এই সবটা ধোঁয়া কোনো আকাশ থোড়াই।

আগুন লাগলে ঘরে অনেক আঘাত আসবে,
এখানে আমার একার বাসা আছে থোড়াই।

আমি জানি শত্রুও কিছু কম যায় না কিন্তু,
আমার মতো জীবন বাজি রেখেছে থোড়াই।

আমার মুখ থেকে যা বেরহয় সেটাই বাস্তব,
আমার মুখে তোমার ভাষা আছে থোড়াই।

যারা আজ মসনদে আসিন কাল থাকবে না,
ভাড়াটে ওরা পূর্বপুরুষের সম্পত্তি থোড়াই।

সবার রক্ত মিশে আছে এই মাটিতে,
হিন্দুস্তান কারোর বাপের থোড়াই।

যখন কারোর সাথে বন্ধুত্ব করা হবে,
তখন শত্রুদেরও মত নেওয়া হবে।

মৃত্যুর বিষ বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে,
এবার কোথায় গিয়ে শ্বাস নেওয়া হবে।

আমার অতীতের ক্ষত গুলো শুকিয়ে যাচ্ছে,
আজ আবার কোনো ভুল করতে হবে।

বোতল খুলে পান করেছি বছর বছর,
আজ হৃদয় খুলে পান করা হবে।

Facebook Comments

Leave a Reply