এই হাত আগুনের (মেটাফর): ভারতীয় প্রতিস্পর্ধী কবিতার অনুবাদ : তনুজ ও শর্মিষ্ঠা

এই হাত আগুনের (মেটাফর) : ভারতীয় প্রতিস্পর্ধী কবিতার অনুবাদ
নির্বাচন, অনুবাদ ও প্রাক-কথন : তনুজ ও শর্মিষ্ঠা
উৎসর্গ : এই দুনিয়ার সমস্ত শাহিনবাগকে

চতুর্থ কিস্তি
কমল কুমার তাঁতীর কবিতা
মূল ভাষা ও অনুবাদের সোর্স ভাষা: অসমীয়া

সমসাময়িক অসমীয়া কবিতার অন্যতম প্রতিস্পর্ধী স্বর কমল কুমার তাঁতী। তাঁর জন্ম (১৯৮২) আসামের এক চা-বাগান শ্রমিক পরিবারে। ২০০৭-এ প্রকাশিত প্রথম কবিতার বই ‘মারাংবুরু, আমার পিতা’র জন্য তিনি ২০১২ সালের সাহিত্য অকাদেমি যুব পুরস্কার পান। দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘উত্তর ঔপনিবেশিক কবিতা’ প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালে। মার্ক্সীয় চিন্তাপদ্ধতি ও মূলত উত্তর ঔপনিবেশিক চর্চা তাকে প্রভাবিত করেছে। উত্তর ঔপনিবেশিক তত্ত্ব ও আসামের নিম্নবর্গের ইতিহাস নিয়ে লিখেছেন অজস্র গুরুত্বপূর্ণ লেখা, যা তাঁর ‘নিম্নবর্গ সমাজ ঐতিহ্য’ (২০০৭) বইয়ে সংকলিত হয়েছে। পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক কমল কুমার তাঁতী বর্তমানে আসামের শিবসাগরে থাকেন।

উত্তর ঔপনিবেশিক কবিতা

ফাগুন বাতাস উড়িয়ে এনেছে
পথের ধুলো, সাথে মাঠের পুরনো ঘাস।

তখন নিমগ্ন চিত্তে বড়োপুকুরের পারে
বসে ছিল এক কাছারি বুড়ো।
তার মনকে ধাওয়া করে চলেছে অজস্র, নিরন্তর অতীত।

বীতজীবনের কিসসা-কাহিনী ও
বীতসময়ের হিসেব-নিকেশ উলটে-পালটে

কাছারি বুড়োকে একসময় জিজ্ঞেস করে ফেললাম আমি—
বুড়ো, জীবনটা কি? কচু পাতায় জল?

আর ইতিহাস কি? নিছকই দেশ,কাল ও পূর্বপুরুষের গল্পগাছা,
না মানুষ আদান-প্রদানের হিসেব-নিকেশ,
নাকি নিজেদের মগজ ও মন বিক্রি করে দেয়ার দলিলপত্র, প্রমাণ?

কাছারি বুড়োকে আবার জিজ্ঞেস করলাম—
আমরাই বা কারা?

গোরা আদমির পায়ের নীচে চাপা পড়া সামান্য কচু পাতা?
অশ্বারোহীদের উল্লম্ফনে কাদা হয়ে যাওয়া পুকুরের জল,
নাকি বন্দুকের গুলির শব্দে
সর্বদাই আতঙ্কে থাকা চিরকালের এক বিজিত হৃদয়?

এরপর জিজ্ঞেস করলাম তাকে —
আচ্ছা, আপনি কে?

আমি? আমিই ইতিহাস, আমি দু-দুটো লুপ্ত শতকের ইতিহাস,
আমিই এই উপনিবেশের ইতিহাস,
আমিই এই উপনিবেশ অধ্যুষিত মানুষের ইতিহাস।

আমরা শুনেছি,
ইতিহাসবিদেরা আমাদের
‘অন্যান্য’ মানুষ বলে থাকে।

অথচ আমরাই প্রথম এসে থিতু হই এই দেশের মাটিতে,
তারপর তারা—অন্তরে অহং ভরে আসে।

আমরা ছিলাম কালো, খর্বকায়, মাটির—
তারা লম্বা, দীর্ঘ, ফরসা, ছিন্নমূল।

ভাষা, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি থেকে
এক চিরন্তন দূরত্বে তারা রেখেছিল আমাদের—
আমরা বন্দী ছিলাম নাগপাশে, তাদের
ভাষার কুলুপ আঁটা মায়ায়।

সাগর-মহাসাগর পেরিয়ে,
সোনার খনি পেরিয়ে ওপার থেকে তারা এসেছিল

এই পূর্বে, পূর্বের সোনার খনির সন্ধানে।

তারা খুঁজেও পেয়েছিল
সোনা, রূপা, হীরা-জহরতের স-ব, সব খনি।

আমরা শুধু হাঁ করে দেখতাম তাদের আর
কথা বলতাম নীরবতায়, আমাদের ভাষায়।

এখনও অবধি এই নীরবতাই আমাদের ভাষা

কিন্তু আমরা কখনও কী খুঁজে পাবো আমাদের ভাষা,
যা হবে কোনো ‘অন্য’ ভাষা এবং একমাত্র আমাদের?

শেষ যুদ্ধের শেষ রাতে
সকল পরাজিত সেনানায়ক ও
তাদের বিফল সৈন্যদের জন্য
অন্তিম ভোজের আয়োজন করা হয়।

ক্ষণে ক্ষণে খানিকটা মৃত্যু আত্মস্থ করা সেই মুহূর্তে
দেখা গেল,তাদের খেতে দেয়া হয়েছে
শুয়োরের বিষ্ঠা, কুকুরের বিষ্ঠা।

যে কোনো সময় তাদের গলা চিরে মেরে ফেলা হবে।
তার আগে কোনোরকম আপত্তি না করেই
সব সেনানায়ক নির্বিকার ভাবে এই খাবার,
এই দাসত্ব, এই খাবারের দাসত্ব গ্রহণ করলেন।

দূরে বিজয়ী জল ও স্থলদস্যুদের স্বগতোক্তি শোনা যাচ্ছে—
প্রথমেই পরাজিতদের জমিন কর্ষণ করা হোক,
তবেই তাদের ক্ষেতে, নালায়, বস্তিতে, বনে-জঙ্গলে,
সর্বত্র জন্মাবে কুকুরের,শুয়োরের আরো নিত্যনতুন দল।

আচ্ছা, বিজয়ী সেনানায়ক গেল কোথায়?

ইতিমধ্যেই একটা শুয়োরের ফার্ম খুলে
গোগ্রাসে শুয়োরের মাংস ও মদ গিলতে ব্যস্ত সে।

স্বাধীন দেশের
একশো কোটি শুয়োরের দল তখন থেকে
খুঁজে চলেছে সেই হারিয়ে যাওয়া,নিরুদ্দেশ শুয়োরদের।

নিজেকে বারবার বলি—
কী আছে এই দেশে,
কী আছে এই উর্বর মাটিতে?

যখন আমার নিজের ছেলেরাই প্রশ্ন করে—
কেন যে আছি এই দেশে,
কেন পড়ে আছি এই অথর্ব জমিনে?

এই দেশে বাস করেও
আমার ছেলেরা হয়েছে বিদেশী।

বহুযুগ ধরে যে কটা হেয়াঁলি আমার
চৈতন্যকে বিবশ করে রেখেছে,
আমার ছেলেদের কথায় আজ দেখছি
তাদেরই উত্তর নিহিত আছে—

আমার জীবন সহ
আমাদের সকলের জীবনই
প্রহেলিকাময়

মেঘে ঢাকা, আচ্ছন্ন, মেঘে

এবং আমাদের যে ইতিহাস, তা হচ্ছে
এক ভগ্নাংশের ইতিহাস।

অমিল

রক্ত বিলি করছি তখন, দেখলাম
আমপাতার গায়ে রক্তের ছিটে।

যে জায়গার বাতাস কোনো এক কালে
আমার পূর্বপুরুষদের ঘামের গন্ধে মুখরিত থাকত,
সেখানে আজ উষরতা ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই আর।

শরীরে পাথর ও ক্রমে আস্ত অরণ্য
গজিয়ে ওঠার সেই দিনগুলোতে
আমি রক্ত বিলি করছিলাম

তখনই আমার মনে পড়ে গেল
চাবুকের শপাং সপাং আওয়াজ ও
একটা ঘর্মাক্ত পিঠ ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে, এই দৃশ্য—
আর রক্ত, রক্ত, রক্ত!

রক্ত!

আমার রাত ও দিন
এবং তাদের দিনরাতের মধ্যে

এই একশো বছরের বিরতি ছাড়া
আর কী কী পার্থক্য আছে?

এই একশো বছরে আমাদের চেনা হল বহির্জগৎ এবং
তাদের পরিচয় ঘটল অন্তর্জগতের সাথে।

অথচ আজ তারা কি সহজেই বলতে পারে:

দেখ, তোমাদের মত
আমাদের রক্তও লাল

কই, আমাদের মধ্যে তো এক কণা অমিল নেই।

ভালোবাসার কবিতা

এক শরৎকালে
আমি বাগান করেছিলাম,
প্রিয় ওই কিশোরীটিকে
গোলাপের কলি উপহার দেব বলে

পরের শরৎকালে
গোলাপ ফোটে ও জমা হয়

সেই কিশোরীর কবরের ওপর

তার পরের শরতে,সেই বাগানেই,
আমাকে দাফন করা হল।

ফিরে তাকালেই দেখি,
কত জবাফুল!

যেদিকে যাই,তারা
আমাকে অনুসরণ করে

বিস্ময় হয়, ভাবি—

এই ফুলগুলো কী সত্যিই ফুল,
নাকি আসলে চোখের পাতা তারা,
আমার কান্না যেখানে নিয়ত খসে খসে পড়ে।

কুঁজ

বুড়ো লোকটার পিঠের ওপর ছিল একটা কুঁজ ও
তার চোখের সামনে জ্বলছিল একটা কেরাসিনের বাতি।
সহসাই আমরা কেরাসিনের বাতিটা নিভিয়ে দিলাম;
নিভিয়ে দিতেই অন্ধকার ঘরে
তার কুঁজটা প্রকট হল।

একইভাবে ইতিহাসও নিজের কুঁজ আড়াল করে রাখে,
যদি না একদিন কোনো ইতিহাসবিদ তাকে প্রকাশ্যে
টেনে এনে আমাদের দেখায়।

মাংসের টুকরো

কালো কুকুরদের দল ঝগড়া শুরু করতেই অকস্মাৎ
সেখানে হাজির হল এক শেয়াল—মতামত জানাতে।

জ্ঞানী পুরুষেরা বলে গেছেন,গণতন্ত্রে
সকলেরই নিজস্ব মত প্রকাশ করার অধিকার আছে।

মত প্রকাশ করার পেছনে যদিও কাজ করে স্বার্থ ও
সঠিক সুযোগের সদ্ব্যবহার, তাই এই মতামত সম্বন্ধিত
বিলাসিতার নামে অচিরেই চালু হয়ে যায়
দেনা পাওনা, ধর-পাকড়, অজস্র হিসেব-নিকেশ।

যা বলছিলাম, ওই কুকুরের দল নিজেদের মধ্যে
ভাগ করে নিতে চেয়েছিল উপস্থিত মাংসের টুকরোগুলোকে।

তবে তারও আগে ওপরের শেয়ালটা এল, ফাঁদ পাতল,
অর্থাৎ নিজের মতামত জানাল

ফলে মাংসের টুকরোগুলো গোপনে সরিয়ে ফেলা
অনেক সহজ হয়ে গেল।

বন্দুক

ঠাকুরদার সিন্দুক খুলে
পুরনো বন্দুকটা বার করে যে মাত্র আমি
বাড়ির উঠোন বরাবর রাখলাম,আমার বৃদ্ধ বাবা
কিছুক্ষণ আমার দিকে নিষ্পলক চেয়ে থেকে বললেন—
‘এসবের দিন গেছে, বুঝেছ? গুলিতেও মরচে পড়েছে,
বন্দুকের ঘোড়াটাও কবেই ভেঙ্গে দু-টুকরো হয়ে গেছে’

তারপর আমি বন্দুকটাকে তুলে
বড়োপুকুরের জলে দাহ করতে যাই

যেহেতু শরীরের বদলে নিজের
আত্মাকেই গুলি করে মেরে ফেলেছি,
এই বন্দুকের আমার আর কোনো প্রয়োজন নাই।

সওদাগরের আঙুল

দুহাতের আঙুল বেয়ে
ফোঁটা ফোঁটা কাঁচা রক্ত
পায়ে এসে জমাট বাঁধলে,
আমি বুঝতে পারলাম যে

আমার সময় শেষ হয়ে এসেছে।
আর মাত্র হাতেগোনা কয়েকটা দিন।

এই দেশ এখন আর
আমার দেশ নেই।

এই মাটি এখন আর
আমার মাটি নয়।

আমার দেশ, আমার বাতাস,
আমার জল, আমার অরণ্য,
আমার নদী, আমার দেশের মানুষ

এরা সকলেই এখন
দূরের এক ধনী সওদাগরের
লাঙ্গলে বাঁধা গরু হয়ে গেছে।

আমার এই কথা শুনে
আমার ছায়াও কথা বলে উঠল—

আর সেই সওদাগরের তালুতে রোজ জমা পড়ছে
আমাদের শরীরের তাজা রস, রক্ত।

বহুমাত্রিক মাধ্যাকর্ষণ

মাধ্যাকর্ষণের জোরে ভাসমান চড়ুইপাখিটিকে
আমি জিজ্ঞাসা করলাম—
‘তোমার ওজন কত?’

ভ্রু কুঁচকে চড়ুইপাখিটা বলল—
‘আমি থাকি বহুমাত্রিক বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের আবদ্ধ পর্দায়
আর তুমি থাকো ত্রিমাত্রিক বিশ্বে!’

‘আমার সাথে তোমার ওজনের তুলনা করে
কী লাভ, বলো?’

ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে নিজের শরীরের দিকে
আমার নজর গেল

তবে কী আমি মহাশূন্যে তীব্র বেগে ধাবমান
একটা গাঁটরিতে পরিণত হয়ে যাচ্ছি?

বিকল্প রাজনীতি

একটা বিকল্প রাজনীতি কী করে গড়ে তোলা যায়?
তাত্ত্বিক ও বুদ্ধিজীবী সমাজের কাছে
প্রশ্ন রাখলেন নেতা মশাই।

তারা কিছুক্ষণ একে অপরের
মুখ চাওয়াচাওয়ি করে বললেন—
বিকল্প রাজনীতি? এটা আবার কী বস্তু?

যেখানে স্বকীয় কোনো চিন্তাধারাই নেই,
সেখানে আবার এইসব ভাবতে যাওয়া কেন!

যেখানে কোনো ধরনের
ভাবনারই বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই,
সেখানে তো এই প্রশ্নটাই বেমানান!

রাজনীতি কী?
রাজার নীতি? জনগণের নীতি?
জনগণের জন্য নীতি? নাকি জনগণকে
শাসন করতে রাজার বানানো নীতি?

আত্মসচেতনতাই যেদিন
সামাজিক চেতনায় রূপান্তরিত হবে,
সেদিন এগুলো বলতে এসো—
তাত্ত্বিক সাফ বলে দিলেন নেতাকে।

ঘরের ছেলে আমিও
সুতরাং ফিরে এলাম ঘরে।

বন্দী সাপ

আমি একটা সাপ। বন্দী সাপ।
চোখ মেলে দেখি। দেখি চোখ মেলে।
শত্রু কে, মিত্র কে,
বুঝতে পারি না।।

আমি চিনতে পারি ক্ষুধা। আকাল।
চোখ মেলে দেখি। দেখি চোখ টিপে।
খাদ্য কী, অখাদ্য কী
ধরতে পারি না।।

আমি একটা সাপ। বন্দী সাপ।
চোখ মেলে আছি। আছি চোখ মেলে।
এই শহরের অলিগলি আমার চেনা।
তবু নড়তে পারি না, চড়তে পারি না।।

আমি চিনেছি শরীরের খেলা। আর দেহের রস।
চোখ মেলে দেখি। দেখি চোখ টিপে।
শরীরের সমস্ত আঁকা পথ, বাঁকা পথ আমার চেনা।
কিন্তু তাকে, এই শরীরকে ছুঁয়ে থাকতে পারি না।।

আমি একটা সাপ। বন্দী সাপ।
চোখ মেলে আছি। আছি চোখ মেলে।
একটু একটু করে ঘরে ফেরে
আমার নিম্নাংশ।।

আমি চিনতে পারি মানুষ। যারা সরল নয়, সহজ নয়।
চোখ মেলে দেখি। চোখ টিপে দেখি।
সামনে জোড়া দরজা।
অথচ তাদের চৌকাঠদুটো পেরোতে পারি না আমি।।

আমি একটা সাপ। বন্দী সাপ। বন্দী নিজের
খোলসে। নিজের খোলসে একটা সাপ আমি বন্দী।।

ঝুলন্ত পাকা ফল

ঝুলন্ত পাকা ফলটাকে
আঙুল দিয়ে টোকা মারতেই দেখলাম
রসালো সেই সুগোল ফলটা
দুলে উঠল

গাছের ডালে

নাকি লালপেড়ে শাড়ি পরে
ঝুমুর নাচছে যে মেয়েটি,
তারই কলিজার কোনো এক কোণে দুলে উঠল সে?

এই প্রসঙ্গে আমার মনে পড়ে যায়
বৃদ্ধ কার্বি লোকটির উত্তর—

‘কোথায় বা আছে সুখ, কীভাবে পাওয়া যাবে তাকে?’

তবে কী সেই ঝুলন্ত ফলটাকে গাছ থেকে পেড়ে,
চাকু দিয়ে কেটে হাতে চটকে খেয়ে ফেলাটা বেশি সুখের

না ঝুলন্ত ফলটাকে গাছে
ঝুলতে দেয়াতেই সুখ?

কার্বি লোকটিরই মত
আমিও ঝুলন্ত ফলে একটা লাশ দেখতে পাচ্ছি,
এখন দেখি খুঁজে পাই কিনা।

তিন দিন

একটা তেকোনা পাথর
আমি খুঁজে পেয়েছিলাম
এই পাহাড়ি নদীর পারে।

আজ তিন দিন ধরে,নদীতটে
লাশটাকে পাশে রেখে বসে আছি।

খাওয়ার কিছু নেই
গত তিন দিন ধরে—

তাই ভাবছি,
কি খাবো—

পাথরটাকে,
না লাশটাকেই।

অসম্পূর্ণ

শেষ হতে চেয়েও নিঃশেষিত কিছু কথা
এখনও বলা হয় নি

শেষ হতে চেয়েও নিঃশেষিত কিছু গান
এখনও গাওয়া হয় নি

শেষ হতে চেয়েও নিঃশেষিত কিছু কবিতা
এখনও লেখা হল না

আমি তাই ফিরে আসছি,কাজিরাঙ্গায় মিশে যাবে
এমনই কোনো পথ ধরে যা
শেষ হতে হতেও শেষ হয় না।

আমি তাই ফিরে আসছি,চিনামরায় মিশে যাবে
এমনই এক রেলপথ অনুসরণ করে
যা শেষ হতে হতেও শেষ হবে না।

এবং আমি ফিরে আসছি তাই,
অসম্পূর্ণ অনেক কথা পুনরায় শুরু করতে
অর্ধেক সেই কবিতা লিখে শেষ করতে
অর্ধেক গাওয়া সেই গানের বাকিটা গেয়ে উঠতে জোরে।

আমি ফিরে আসছি
অসমাপ্ত যা কিছু,
তাদের কাছে।

আমি আবার এসেছি ফিরে।
সহরার আঁকাবাঁকা গলির পাশে দাঁড়িয়ে আছে
আমার শুভ্র ঘোড়া।

ঘোড়াটি দাঁড়িয়ে আছে
আমার জন্য,আমাদের সকলের জন্য।

**সহরা—চেরাপুঞ্জির পুরনো নাম।
___________________________________________

[তনুজ – কবি,অনুবাদক,গদ্যকার ও সম্পাদক-( ‘হারাকিরি’)
শর্মিষ্ঠা – অনুবাদক, ইদানীং ধারাবাহিকভাবে ভারতীয় প্রতিস্পর্ধী কবিতা অনুবাদ করে চলেছেন।]

Facebook Comments

Leave a Reply