রেদওয়ান খান-র কবিতা

দেহবিতান

৩৩

অবচেতনের আয়না হয়ে পড়ে থাকবে এইসব কথা ও কবিতা ।
একদিন আষাঢ়ের জলে ভিজেছিল গৃহহীন চৈতন্যের বিস্তীর্ণ ছায়াপথ
সেই সিক্ত পথ রঙিন হয়ে উঠেছিল কী জানি কার ঘুংঘুরের শব্দে
হয়তো কোথাও কেউ ফুলের গন্ধের মতো ভাসিয়েছিল অদৃশ্য জীবন ।

তুমি পড়ে নিও, যদি কবর-ফলক ভিজে ওঠে অক্ষরে অক্ষরে
শব্দে শব্দে যে ব্যবধান র’য়ে গেল
সেই ফাঁক তুমি পূর্ণ করে নিও মৃত-অভিমান জোড়া দিয়ে দিয়ে
সে-জীবন তুমি পুনরায় লিখে নিও আপন ভাষায় ।

যদি খুঁজে পাও খুন-হওয়া অপূর্ণ বালকের মমি-ইতিহাস–
স্তরে স্তরে তার দেখতে পাবে মসলিনে মোড়া বিগত জীবন
পরাজয়ের ঐশ্বর্য্যে ডুবে থাকা মুখ তুমি চিনে নিও– কী রকম জীর্ণ ভঙ্গুর
নক্ষত্রের আত্মীয় সভায়, লোক-লোকান্তরে উঠবে কি বেজে ব্যথার ঘুংঘুর!

বর্ণমালার বর্ষণ-বয়নে তুমি লিখে নিও আত্মহননের নিহিত কারণ।

৩৪

সংক্রমণের মৌসুম বলে নয়, পুরুষ জাতি সর্বদা মৃত্যুর ঝুঁকিতেই আছে।
তবু সে আষাঢ়ের প্রথম দিবসে প্রতিজ্ঞা করে, নব-কিশলয় নারীর জঙ্ঘায়–
পুঁতে দিয়ে সারিয়ে তুলবে জগতের অসুখ,অরণ্য সবুজ পাতায় ও গাছে
সাজাবে আরণ্যক-বাড়ি । নারীস্পর্শই মহাসংক্রমণ তার,গোধুলি সন্ধ্যায়
একাকী দেহের ভারে পুরুষই অপেক্ষা করে, তার স্বপ্নকল্প ঘরের দুয়ারে
সন্দেহ বাতিকে কাঁপে নারীর কঠিন হৃদয়, বৃক্ষতলে একাকী ম’রে দেবদাস
কালের দুর্ভাগা সে, শ্রম,ঘাম ও ভিক্ষার ধনে একদা সাজিয়েছিল তাহারে
লৌকিক আলতায় । সংক্রমিত কবরে নাই প্রার্থনা,হলদে ঘাস– উপহাস !

৩৫

দেহ আছে, ক্ষুধা আছে যদ্যপি, নষ্ট নেতার থুথু চেটে খাই
কখনও বা পরম সৌভাগ্যে, ‘জয়বাংলা’ বলে সিঙারা পাই!
মুজিবের জন্মদিন, মৃত্যুর দিনে আমি হই নামহীন কাঙাল
কাঙালী ভোজন খায় সহস্র শহীদের এক সহোদর–বাঙাল!

৩৬

তোমার কাছেই রেখেছিলাম ভঙ্গুর দেহজ-আত্মার অদৃশ্য সিন্ধুক
সেই থেকে,সেই গোপন সিন্ধুক হাতে নিয়ে হয়েছো তো নিন্দুক!
নবাবপুরের রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাজাও কি আমারই নিন্দাগীতি-ঢোল
চিৎকারে চৌদিক চৌচির ছিন্নভিন্ন, কী করে পাল্টায় মানবীর ভোল…

সিন্ধুক খুলিয়া দেখো,কি দশা হইছে সেই স্বপ্নডানা ভ্রমরটি–কালো
জীবনে জীবন গেঁথে, চরিত্রহীন–যার চোখে আর নাই কোনও আলো ।

৩৭

আত্মার ভারে কাঁপে কম্পিত আজরাইল
কাফনে মোড়ানো দেহ–মানুষের কাঁধে
কই নিয়ে যায় তারে এত ভালোবেসে–
চিবাইয়া খাইছে যারে লৌকিক কালে।

৩৮

কে বলবে,আমার এতো ক্ষুধা কেন?
করোনা-কীটের মতো অঙ্গে অঙ্গে ক্ষুধারা দৌড়ে বেড়ায়
সুতরাং ক্ষুধা-ই স্বর্গ থেকে বিতাড়িত সুদক্ষ শয়তান
যে আমার দেহ-কলিজা ও আত্মার শিকড়ে দেয় টান
আমার জীবিত কোষের প্রতিটি প্রান্তে যার অবাধ গমন–
তারে করা যায় কি কখনও দমন?
আমার সিনায় তো কখনও জ্বলে নাই ঐশী আলো
সুতরাং ক্ষুধার্ত শয়তানই আমারে বেসেছে দারুণ ভালো!

৩৯

কোনও দিনও হয় নাই দেখা
সামান্য শখের বশে, নিজেরই করতল-রেখা
বিস্তূীর্ণ সৌরলোকের করাল-কৃষ্ণ শিকড়-বাকড়
করতল-বৃক্ষে নাকি করে তোলপাড়–মহাজাগতিক ঝড় !
নিজের কপাল-রেখাও তো নিজে, কোনও দিন দেখি নাই আমি
প্রতি বরষার বেদেনী সখিরা কয়, ‘ও তো রাজকপালের চেয়েও দামি!’

Facebook Comments

Posted in: August 2020, POETRY

Tagged as: , ,

Leave a Reply