খগেন্দ্রনাথ অধিকারী-র কবিতা
মানুষ
মনুষ্য আকার হলেও, দানবের রক্তদেহে,
এদের সংখ্যাও বেশ বিশ্বউদ্যানে,
জাতির গরিমার নামে রাইন দানিয়ুবের কূলে
দলেছে জীবনকলি দু’পায়ে নিষ্ঠুরভাবে
মত্ত হাতির তালে নাৎসি পশুর দল অযুতে নিযুতে
আমার বর্ণ নিয়ে যুগযুগান্ত ধরে, শ্বেতাঙ্গ বর্বরতা
মিসিসিপি-মিশিগান-হাডসন মুসৌরীর তীরে,
জীবনবৃন্তে ফোঁটা ঝরিয়েছে আকাশে কলি কালো রঙ হওয়াতে।
কাবুল-যমুনা-শ্যেন-তাইগ্রিস-ইউফ্রেটিস,
পারস্য সাগরের তটে, নীল নদের পাশে,
কিস্টো-খিস্টো-আল্লা, এদের শিখণ্ডী রেখে
চলেছে শোণিত হোলি শ্বাপদ উল্লাসে।
কৃষ্ণকায় হলেই তারা ছাগল-হরিণ-ভেড়া, মোরগ-মুরগীর মত
জীবন্ত পণ্য হবে — অভিশপ্ত এ দাস রীতি
পৌনে দু’শতাব্দী আগে লিঙ্কন করেছিলেন লোপ,
নিজ প্রাণ দিয়ে বর্লি ঘাতক বুথের হাতে
পিটারসন হাউসের ফোর্ড থিয়েটারে।
খুনিদের প্রেতাত্মাগুলি হেরাল্ড-পাওয়েল-মেরী-জন-উইলকেস,
মানব অধিকার নেতা লুথারের হত্যাকারী
জেমস বের সাথে মিশে আঁধারেতে ঘোরে।
মেনোপোলিশ শহরে এদের ইন্ধনের তারয় তেতে
বুটের গলাটা চেপে হাঁসাটে পুলিশ কেভিন
ফ্লয়েডকে মেরেছে।
প্রতাপী কর্ণধার হোয়াইট হাউসে বসে,
হুমকি দিয়েছে যেন মুখ কেউ না খোলে,
শূন্যগর্ভ আস্ফালনে থোড়াই কেয়ার লোকের,
অমানুষ থাকলেও কিছু গণিতে বেড়েছে মানুষ,
আরাকানস-লরেসের ধারে আমেরিকার বুকে।
রবসনের গান মুখে হাজারে হাজারে তাই
বজ্রনির্ঘোষে আগায় প্রতিবাদের পলাশভরা
নিযুতের মিছিল পথে
লুমুম্বা-পার্কস-এর ছবি সকলের হাতে হাতে
ধলোরাও মিশেছে তাতে
মার্কিন অধীশ্বর গুটিয়ে লেজটি তার বাঙ্কারে ভয়ে।
লালকেল্লায় ভাষণ দাতা ছাপ্পান্ন ইঞ্চি ছাতির মিত্রোঁ,
হুঁশিয়ার তৈরি থেকো,
তোমারও পরিণতি একই সত্বর ঘটবে।
সবরমতীর থেকে, অশোক আকবরের দেশে
ভাসিয়েছো কত যে লাশ তাপ্তি-গঙ্গার জলে,
রামের দোহাই পেড়ে, ধ্যানের ধ্যানাচি করে,
কোথায় সে কেকাধ্বনি, আষাঢ়ে পেখম খোলা?
কৈফিয়ত দেবে।
Posted in: August 2020 - Cover Story, POETRY