রামায়ণের সমাজ ও স্বাধীনতা : কৌশিক চট্টোপাধ্যায়

স্বাধীনতা ধারণাটির সংজ্ঞাগত ভিত্তি হল উপলব্ধি। এই উপলব্ধি হল সচেতন হওয়ার ক্ষমতা, যাকে বলা যেতে পারে দৈনন্দিন জীবন অভিজ্ঞতায় টের পাওয়া এক চেতনা। ব্যক্তি মানুষের উপলব্ধির অভাব কোন সমাজে অসাম্য আর বঞ্চনার একটা চরিত্রলক্ষণ। স্বাধীনতার এই উপলব্ধি নিছক মানসিক একটা বোধ নয়, এটার একটা বস্তুগত ভিত্তি আছে। সেই বস্তুগত চেতনা ব্যক্তির সামাজিক অবস্থানের ওপর নির্ভরশীল। যিনি বঞ্চিত, তিনিও বঞ্চনার স্থায়িত্বকে ভবিতব্য হিসেবে মেনে নিয়ে অসাম্যের অস্তিত্বে শক্তির জোগান দেন। এতে সমাজে অসাম্যের মাত্রা গভীর হয়। পরাধীনতাকে স্বীকার করে নেওয়া হয়। সমাজ স্বীকৃত পরাধীনতায় স্বাধীনতা উদযাপিত হয়।
স্বাধীনতা তাই সেই ধরনের বস্তুগত উপলব্ধিকে নিশ্চিত করে যেখানে মানুষ খেতে চাইলে খেতে পায়, শিক্ষিত হতে চাইলে শিক্ষার সুযোগ পায়, অসুস্থ হলে চিকিৎসা ব্যবস্থাকে নাগালের মধ্যে পায়, চাহিদা অনুসারে সামর্থ্য ও সক্ষমতা প্রকাশের অনুকূল পরিস্থিতিকে পাশে পায়, ইত্যাদি। এই সকল নিশ্চয়তার উপলব্ধি হল স্বাধীনতা। স্বাধীনতার উপলব্ধি সমাজের বহুমুখী প্রকাশে সাহায্য করে। বহুমাত্রিক বিকাশের সেই পথ খুলে দেয় যে পথে সমাজ নির্মাণের উদ্দেশ্যগুলি অন্তর্নিহিত হয়ে ওঠে উন্নয়নের ধারণায়। স্বাধীনতা উন্নয়নকে প্রগতির সমার্থক করে তোলে।
সামাজিক ভূমিকার বদল না ঘটালে স্বাধীনতার এই উপলব্ধি চেতনায় জাগে না। ব্যক্তি মানুষ যদি তার নিজস্ব ভূমিকাকে প্রশ্নের মুখোমুখি না করে তোলেন, তবে তিনিও অসাম্যের ধারা অক্ষুণ্ণ রাখতে সেই ভূমিকা পালনে প্রশ্নাতীত থাকেন। আত্মজিজ্ঞাসার চেতনায় স্বাধীনতার উপলব্ধি জাগে। শ্রম বিধ্বস্ত গৃহপরিচারিকা, শোষিত শ্রমিক, ঋণগ্রস্ত চাষি নিজেরাই তাদের বস্তুগত উপলব্ধিতে স্বাধীনতাকে পরিমাপ করে নিতে পারবেন। দেখে নিতে পারবেন যে তিনি যেটা চান, সেটা পান কিনা।
পালিত ভূমিকাসমূহের সংশ্লেষে নাগরিক চেখে দেখতে পারবেন স্বাধীনতার স্বাদ। গৃহপরিচারিকা তার ভূমিকাকে প্রশ্ন করলে তবেই তিনি গঞ্জনার অবকাশগুলিকে দেখে নিতে পারবেন। শ্রমিককুল কর্ম-সময়ের মূল্যবিচারে জীবনযাত্রার মান পরিমাপ করে নিতে পারবেন। চাষি তার ফসলের ন্যায্যমূল্যের মাপকাঠিতে প্রচলিতের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সক্ষম হবেন। এই সামর্থ্য অর্জনের নিশ্চয়তা স্বাধীনতাকে জানান দেয়। সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষমতা স্বাধীনতার চিহ্ন বহন করে। মানব উন্নয়ন সূচকের এই দৃষ্টিকোণে আমারা স্বাধীনতার পরিসরগুলিকে দেখে নিতে পারি।
নাগরিক জীবনে স্বাধীনতা নিশ্চিত না করলে সমাজের উন্নতি যে সম্ভব নয়, তা আজকের দিনে কোন নতুন কথা নয়। আমরা আজ এও জেনেছি যে জীবনযাত্রায় উন্নত অবস্থা নিশ্চিত করতে নাগরিক উপলব্ধিতে স্বাধীনতার হাজিরা নিশ্চিত করা দরকার। সেই নিশ্চয়তায় সত্য তথ্যের অবাধ ও স্বাধীন প্রচার যেমন থাকবে, তেমনি সেখানে থাকবে সামাজিক নিরাপত্তাকে যথাযথ মাত্রায় বজায় রাখতে সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ সুযোগের ব্যবস্থা। বেঁচে থাকার মৌলিক সুযোগগুলো সমাজে না থাকলে স্বাধীনতা অর্থহীন, উপলব্ধিহীন। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আঙ্গিকে স্বাধীনতা দৈনন্দিন জীবনে গণতান্ত্রিক অধিকার, গণমাধ্যমের মুক্ত হাজিরা, দ্রব্য ও শ্রম বাজারে প্রবেশের সমানাধিকার, ইত্যাদিকে নিশ্চিত করে। দেশের আয় বৃদ্ধি পেলেই যে সেই সকল নিশ্চয়তা নাগরিক জীবনে স্থায়ী হবে –এমন কোন স্থিরতা নেই। আবার উল্টো দিক থেকে দেখলে দেখা যাবে যে উন্নত সমাজ বলে যাদের কথা আমরা জানি, নাগরিক সমানাধিকার সহ বেঁচে থাকার অনেক নিশ্চয়তাই তাদের সেখানে নেই। আছে শুধু পণ্যমালিকানা, যার সঙ্গে স্বাধীনতার সবটা যোগ করা যায় না।
জনমানসে স্বাধীনতার বস্তুবাদী উপলব্ধি সহজেই একটা ভূখণ্ডের অগ্রগামী গতিপথকে মসৃণ করে। সামর্থ্য নিয়ে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা অনিবার্য হলেও সবটা ব্যক্তি নাগরিকের চেষ্টায় সফল হয় না। রাষ্ট্রের কল্যাণকামী নীতি সেই স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করতে পারে। নীতির প্রকট ও প্রচ্ছন্ন রূপ বিচারের সক্ষমতায় স্বাধীনতার উপলব্ধিতে নিশ্চয়তার দিকগুলি সবসময় কল্যাণকামী হয়। প্রজা হিতৈষী হয়। দীর্ঘ আয়ু, সুস্থ স্বাস্থ্য, জ্ঞান সম্পৃক্ত কর্মক্ষমতা এবং সমানাধিকারের হাজিরায় নাগরিক স্বাধীনতা ভোগ করেন।
স্বাধীনতার এই দৃষ্টিকোণে আমরা রামরাজ্যের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিসরগুলিকে সহজেই নতুন করে দেখে নিতে পারি। যদিও রামের জীবন কাহিনী ও তাঁর শাসন প্রণালীর বর্ণনা ‘নানা মুনির নানা মতে’ বিভ্রান্তিকর। বাল্মীকির রামায়ণ, তুলসীদাসের রামায়ণ, কিম্বা কৃত্তিবাসী রামায়ণ পড়ার পর কবি অদ্ভুতাচার্য্যের রামায়ণ হয়ে, চন্দ্রাবতীর রামায়ণ ঘেঁটে রাজশেখর বসুর সারানুবাদ দেখলে এটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে রামরাজ্য সম্পর্কে সত্য তথ্যের অবাধ ও স্বাধীন প্রচারের কোন সুযোগ পাঠকের হাতে থাকছে না। পাঠকের স্বাধীনতা এখানে প্রথমেই হৃত। রামায়ণ পাঠে পাঠক কিছু অতিকথনের মুখোমুখি হন, যেগুলি এই মহাকাব্যটিকে ধর্মগ্রন্থের সমতুল বর্ণনায় টেনে নিয়ে যায়। তবু এটা ধর্মগ্রন্থ নয়।
রামায়ণের কিছু বর্ণনা বাল্মীকির মূল রচনার পরে যে যুক্ত হয়েছে সেটা অনেকেই মেনে নেন। বাল্মীকির রচনার কাল ধরে সময়ের কাঁটায় চোখ ফেরালে সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ থেকে তৃতীয় শতকের ছবিতে ভারতীয় সমাজের কথা এখানে উঠে আসে। তবে মনে রাখতে হবে রামায়ণ ইতিহাস নয়। এই কাহিনী লেখক ভেদে বদলে গেছে। আর্য ও অনার্য পরম্পরায় সচল থাকা নীতিবোধ, বিশ্বাস, আচার ইত্যাদি সাংস্কৃতিক ধারাগুলোর মধ্যে বিদ্যমান টানাপড়েনের ইতিকথা বদলে গিয়ে হয়েছে রামচরিতমানস বন্দনা। কিন্তু এই বর্ণনা তাদের রাজনীতি, ধর্মনীতি ও সমাজনীতির প্রত্যক্ষ ইতিহাস হয়ে উঠতে পারেনি।
বৌদ্ধ ধর্মের উন্মেষ কালে এই কাহিনীর রচনা বৃত্তান্তের কথা ধরে নিলেও, আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানগুলির কর্মধারা বিচারে রামায়ণের রচনাকালে বৌদ্ধযুগ, ভবিষ্যতের গর্ভে নিহিত ছিল। তবে অযোধ্যাকাণ্ডে ‘বুদ্ধমতানুসারী তথাগত নাস্তিক’ কথাটা বলা আছে। তবুও এই রচনাকে ইতিহাস না বলে এটাকে যদি ভারতীয় ঐতিহ্যের পরিসরে দেখা হয় তাহলে যেকোনো গবেষকমন সেই সময়ের সমাজচিত্রে নানা ঘটনার ছবি আঁকতে পারে। আর সেটা শুরু হতে পারে ঐতিহাসিক গ্রন্থ রাজ-তরঙ্গিণীতে রামায়ণের উল্লেখ থাকার কথা দিয়ে। আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে সেই কোলাজ নানা ভালোমন্দে ভরে উঠতে পারে। ঘটনার বহুমাত্রিকতা এবং তার সংখ্যাধিক্যে হাজিরা গবেষককে একটা স্পষ্ট বার্তা দিতেই পারে। সেই স্পষ্ট রূপরেখায় যা ফুটে ওঠে তা স্বাধীনতার পক্ষে অথবা বিপক্ষে, যে অবস্থানকেই নির্দিষ্ট করুক না কেন, তাকে নতুন করে খোঁজা যেতে পারে।
আদিকাব্য রামায়ণ মহাভারতের মতো জোর দিয়ে সহমরণের কথা বলে না, কিন্তু আর্য-সভ্যতা বিস্তারের কাহিনী হিসেবে এটিও বিবেচিত হতে পারে। রামায়ণ হল সংগ্রামের কাহিনী। ত্রেতাযুগে নররূপী নারায়ণের সঙ্গে অসভ্য রাক্ষসদের লড়াই, যার ফলে দাক্ষিণাত্যে আর্য-সভ্যতার প্রসার, ব্রাহ্মণ্যধর্মের পরিধি বৃদ্ধির সঙ্গে কৃষি ব্যবস্থার উন্নতি সংক্রান্ত এক রূপক ব্যাখ্যা হল রামায়ণ। এই সংগ্রামের কাহিনী চূড়ান্ত বার্তা হিসেবে যা স্পষ্ট করে সেখানে স্বাধীনতা হল লক্ষ্য। সীতা হলেন এখানে ভূমিকর্ষণোপযোগী লাঙ্গলের ফলা, যাকে হরণ করে আর্য সমাজের কৃষিজ্ঞানে অন্ধকার নামিয়ে এনেছে অনার্য রাক্ষসগণ। কৃষির সেই জ্ঞান, যা স্বাধীনতার দ্যোতক, তার পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় এই সংগ্রাম। বাল্মীকির রামায়ণ তেমনটিই ব্যাখ্যা দেয়।
রামায়ণের এই ব্যাখ্যা কৃত্তিবাসে বদলে যায়। বাল্মীকির রাম-সীতা কৃত্তিবাসের অমৃত কথায় বাঙালির মনে কুলদেবতা নারায়ণ ও লক্ষ্মীরূপে আসন পাতেন। কৃত্তিবাস বাল্মীকির কল্পিত মূল চরিত্রগুলির গুণাবলী কিছুটা এক রেখে স্বাধীনভাবে সেগুলোকে বাঙালির একজন করে তোলেন এবং তাতে সফল হন। কবিদের কল্পনায় এই স্বাধীনতা পাঠকের প্রকৃত তথ্য পাওয়ার বিভ্রান্তিতে স্বাধীনতা হরণ করে। তবে তাঁরা সকলেই রামের চরিত্রকে সুনির্দিষ্ট গুণাবলীতে ফুটিয়ে তোলেন যেখানে ‘প্রভু রাম’ হলেন গুণবান, বীর্যবান, ধর্মজ্ঞ, সত্যবাদী, দৃঢ়ব্রত, চরিত্রবান, প্রিয়দর্শন, বিদ্বান, সকলের মঙ্গল করতে সমর্থ, সংযতচিত্ত, জিতক্রোধ, দীপ্তিমান, এবং যুদ্ধে এতোটাই পরাক্রমশালী যে দেবতারাও তাতে ভয় পান। ৩৩৩৯ জন দেবতার মহিমায় আশীর্বাদধন্য শাসকের এহেন সব গুণাবলী কল্যাণমূলক প্রজাপালনে আদর্শ রীতি-নীতির জন্ম দিতে পারে। সকলের মধ্যে সাম্য, স্বাধীনতা, এবং ভাতৃত্ববোধের স্বাভাবিকতায় রামরাজ্য গড়ে উঠতে পারে। যদিও এই ‘প্রভু’ ধারণা বর্ণনার প্রথমেই একটা অসাম্যের জন্ম দেয়, আর রাজনীতির মেরুদণ্ডকে মন্ত্রগুপ্তির হাতে সঁপে দিয়ে স্বাধীনতার উপলব্ধিকে অনিশ্চয়তায় ভরিয়ে তোলে।
অসাম্যের প্রতিবেশ অন্যত্রও আছে। যদিও রামায়ণ হল প্রথম সেই কাব্যগ্রন্থ যেখানে দেবভাষার পরিবর্তে বিশুদ্ধ ও সহজ সংস্কৃত ভাষার ব্যবহার প্রচলিত হয়। আর্যদের প্রাচীন সাহিত্যে দেবভাষার ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। বেদ সেই ভাষায় লেখা হয়েছে। অনার্যদের ছিল পৈশাচী ভাষা। আর্য সমাজে সাধারণ মানুষের ভাষা, যা লৌকিক ভাষা হিসেবে প্রচলিত ছিল, তার বাইরেও দেবভাষার তিনটি আঙ্গিক ছিল। মন্ত্রের ভাষা, কল্পের ভাষা এবং ব্রাহ্মণের ভাষা হল সেই তিন ঘরানা।
ভাব বিনিময়ের ভাষায় স্বাধীনতার অভাব না থাকলেও বর্ণের ঘেরাটোপে তার ব্যবহার ছিল সীমায়িত। এই সমাজে মূল্য বিনিময়েও ছিল ভিন্নতা। অনার্য সমাজে বিনিময় প্রথার সচল-মাধ্যমকে দ্রব্যগুণে মেনে নিলেও রাজা দশরথের রাজ্যে একটা শ্রেণী মুদ্রা বিনিময়ে অভ্যস্ত ছিল। সমাজের সেই অংশ বাজার-বিনিময়ে নিষ্ক এবং সুবর্ণ নামের দুটি মুদ্রা ব্যবহার করতো, এবং তা যে জনপ্রিয় ছিল, তার উল্লেখ রামায়ণে আছে।
রামায়ণের সমাজে লৌকিক আচরণে একটা অদ্ভুত নিয়ম ছিল। সেখানে পুরুষের স্নানে স্ত্রীলোকের ব্যবহার প্রচলিত ছিল। এই সামাজিক রীতি প্রবরতন্ত্রী নীতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। হয়তো সেই কারণেই রামায়ণের সমাজে বিলাপের রীতি সম্মানের তারতম্যকে ঘোষণা করতো। এই সমাজে একজন সদস্য কোন নিশ্চয়তায় স্বাধীনতা ভোগ করতো তার বিশ্লেষণ কাণ্ড ধরে করা যায়। বিশদ বিবরণের অবকাশ এখানে যেমন নেই, তেমনি সাধারণ নাগরিকের কথাও রামায়ণে কম বলা আছে। সকল স্তরের অল্প কিছু ঘটনার উদাহরণে সেই সমাজের চালচিত্রটা দেখে নেওয়া যেতে পারে। অন্তত বাল্মীকির কল্পনায় রচিত রামায়ণের সমাজে আমরা একটু ঘুরে আসতে পারি।
উত্তরকাণ্ডের বৈধতাকে মেনে না নিলেও বাকী থাকে ছয় কাণ্ড। প্রথমটি হল বালকাণ্ড বা আদিকাণ্ড। এখানে বাল্মীকি তাঁর উপাখ্যানে দশরথকে দিয়ে অন্ধকমুনির পুত্র সিন্ধুকে হত্যা করাচ্ছেন। আবার পুত্র লাভের বাসনায় যজ্ঞ করাচ্ছেন। মানবিক মূল্যবোধের নিক্তিতে এবং বেঁচে থাকার সম্ভাবনা মাত্রায় পরিমেয় স্বাধীনতায় দশরথের রাজত্ব নৈরাজ্যের প্রতিচ্ছবিতে পরিচিত হয়, এবং পুরুষতন্ত্রের প্রতিলিপি রচনার মধ্যে দিয়ে এই আখ্যান শুরু হয়। কন্যা শান্তার দুর্গতির কথা পাঠককে পীড়া দেয়। সেই সন্ধিক্ষণে রাম সহ বাকী তিন পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। যজ্ঞ সফলতা দাবি করে। পুত্র সন্তানেরা সকল শিক্ষায় পারদর্শী হন, যেখানে রাম অনন্য। এই পর্বেই চার ভাইয়ের বিবাহ এবং পরশুরামের দর্পচূর্ণ হওয়ার কথাও বলা হয়।
এই আদিকাণ্ডে বিবাহ নামক আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানটিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে পরাধীনতার বহু অবকাশ সেখানে আছে। জনক রাজার পছন্দে নির্দিষ্ট করা কিছু পাত্রের মধ্যে রাম হরধনুভঙ্গ করে মাত্র তেরো বছর বয়সে ছয় বছর বয়সী পাত্রী সীতাকে বিবাহ করেন। সিদ্ধান্তগ্রহণের এই ক্ষমতাহীন অবস্থা ভবিষ্যৎ নিশ্চয়তায় স্বাধীনতার দিশারী হয় না। বাল্যবিবাহ স্বাধীনতার দিশারী হতে পারে না। অপরদিকে আর্য সমাজে এই স্থিরীকৃত বিবাহ-রীতি অনুসারে পাত্র-পাত্রী নির্বাচনে অভিভাবকদের ভূমিকা ছিল স্পষ্ট। এই রীতিতে অনার্যরা ছিল তুলনামূলক ভাবে বেশী স্বাধীন। তাদের রাক্ষস বিবাহ-রীতি সেই স্বাধীনতাকে ঘোষণা করে যা পরবর্তীতে আর্য সমাজেও চালু হয়। মহাভারতে তার উল্লেখ আছে। তবে পৈশাচ বিবাহ-রীতি আর্য-অনার্য উভয় সমাজেই প্রচলিত ছিল যেখানে নারী ছিল অত্যাচারের কেন্দ্রবিন্দু।
রামায়ণের দ্বিতীয় কাণ্ডটি হল অযোধ্যাকাণ্ড। আজকের অযোধ্যায় যেমন রাম মন্দির প্রতিষ্ঠা কাণ্ডে আদবানির নাম স্মরণ করা হয়, কিন্তু তাঁর আনুষ্ঠানিক হাজিরার স্বাধীনতা হরণ হয়ে যায়। ঠিক তেমনভাবেই সেদিনও কুঁজীর মন্ত্রণায় প্ররোচিত হয়ে কৈকেয়ীর ছলনায় রামের রাজসিংহাসন লাভের প্রস্তাব খারিজ হয়ে যায়। পিতৃসত্য পালনে রামচন্দ্রকে বনবাসে যাওয়ার উদ্যোগ নিতে হয়। স্ত্রী সীতা এবং ভাই লক্ষণ সঙ্গী হন। বিতর্কিত হলেও বলা যায় যে রামের বয়স তখন পঁচিশ, সীতার আঠারো।
অযোধ্যাকাণ্ডে দশরথের মৃত্যু কোন বড়ো ঘটনা নয়। ভরতের অযোধ্যায় ফিরে আসা এবং রামকে বন থেকে খুঁজে অযোধ্যায় ফিরিয়ে নিয়ে আসার ব্যর্থ চেষ্টাও কোন বড়ো ঘটনা নয়। বড়ো ঘটনা হল রাজ পরিবারের অভ্যন্তরে জটিল ও কুটিল রাজনৈতিক সমীকরণের উপস্থিতি। অবদানে বেঁধে ফেলার কৌশলী নীল নকশার হাজিরা স্বাধীনতার চর্চাক্ষেত্র হতে পারে না। স্বাধীনতা ধারণায় ষড়যন্ত্রের কোন স্থান নেই। রামের পরিবারকে যদি সেই সময়ের এক নমুনা হিসেবে ধরে নেওয়া হয়, তবে সেখানে প্রচলিত ধান্দা পূরণের অসাধু পন্থা (মায়াবাদীদের বিরুদ্ধে যা বৈধভাবেই ব্যবহৃত হতো) কখনই স্বাধীনতার দ্যোতক হতে পারে না।
অরণ্যকাণ্ড হল রামায়ণের তৃতীয় কাণ্ড। এই কাণ্ডের মূল বিষয় হল রাম, সীতা ও লক্ষ্মণের বনবাসী জীবন এবং রাবণ কর্তৃক সীতা হরণ। বর্ণনার শুরুতে দেখা যায় যে তাঁরা তিনজন চিত্রকূট, অগস্ত্যের বন হয়ে পঞ্চবটীতে আসেন। দণ্ডকারণ্যের বিস্তীর্ণ অরণ্যে তাঁরা তখন প্রায় দশ বছর কাটিয়েছেন। সেই ঘুরে বেড়ানোতেই তাঁদের নিজের এলাকায় পেয়েছেন সূর্পণখা। রাম ও লক্ষ্মণকে দেখে তাঁর ভাল লেগেছে। ভালবাসা জন্মেছে মনে। কিন্তু সকল পরিচয় খোলসা করে বলার মধ্যে দিয়ে প্রেম নিবেদনের অপরাধে তাঁর জুটেছে শাস্তি। কাটা গেছে নাক আর কান। রামের অনুমতিতেই লক্ষ্মণ নারী নিগ্রহের সেই কাজটা করেছেন। সংযতচিত্তের পরিচয় এটা নয়। এটা যেন আর্যের জাতি শ্রেষ্ঠ ঘোষণার অহংকারী স্বর। অনার্যের প্রতি অবজ্ঞা। বর্ণ-বৈষম্যের কথা মাথায় রেখে জাত্যভিমানের দর্প, যেখানে আর্য যুবার প্রতি অনার্য দলিতের প্রকাশে প্রেমের অধিকার নেই। সেটা অপরাধ। আর্যের রাজত্বে অনার্য বিনা তর্কে নতমস্তকে স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে, কিন্তু সমকক্ষ দাবি করাটা সেখানে অন্যায়, নীতিবিরুদ্ধ।
অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে কণ্ঠ পুরোপুরি স্তব্ধ করার ঘটনাও এই কাণ্ডে আছে। সূর্পণখা রক্তাক্ত হয়ে তাঁর সকল ব্যথার কথা ভাইয়েদের জানালে তাঁরা প্রতিবাদী হন। এই বিরুদ্ধাচরণ ভারতীয় সমাজের ঐতিহ্য। সেই ধারায় খর ও দূষণের প্রতিবাদী হওয়া। ফলাফল অকাল মৃত্যু। অগত্যা রাবণের স্মরণাপন্ন হওয়া। এই অন্যায়ের শাস্তি বিধানে রাজা রাবণের কৌশলে মারীচের তখন উলুখাগড়া অবস্থা। মায়ার জাল না ধরলে রাবণের ক্রোধে বলি হওয়া, আর ধরলে রামের হাতে যে নিশ্চিত মৃত্যু, তা তাঁর জানা। মারীচ হলেন সাধারণ জনগণের ঐতিহ্যবাহী প্রতিনিধি।
অরণ্যকাণ্ডে সীতা হারা রাম যেন মণি হারা ফণী। ২৮ বছরের সীতার প্রতি ৩৫ বছরের রামের ভালোবাসা এবং তার গভীরতা এই পর্বে দেখা যায়। আর একটা বিষয় যার সন্ধান আগেও ছিল, কিন্তু এখানে বেশ স্পষ্ট প্রকাশ পায় তা হল খাদ্য-খাবারের প্রকৃতি। বনবাসী রাম গোধা (গোসাপ) খেতে পছন্দ করেন। বরাহের মাংসও তাঁর অপছন্দ নয়। সীতা রুরুর (হরিণ বিশেষ) মাংস ভাল রাঁধেন। রামায়ণের সমাজে খাদ্যাভ্যাসের রীতিতে আর্য-অনার্যের খুব বেশী কিছু প্রভেদ নেই। চণ্ডালের হাতে তখন ক্ষত্রিয় কেবল মাত্র ঘি দিয়ে রান্না করা আমিষ (পশুর মাংস) খাবার গ্রহণ করতে পারতো। তাও নিতান্ত কোন বিশেষ প্রয়োজনে। বর্ণক্রম রক্ষা করাটা রাজার কাজ।
রামায়ণের চতুর্থ কাণ্ড হল কিষ্কিন্ধ্যা কাণ্ড। এখানে মূলত বানরদের সঙ্গে মিত্রতা এবং সীতা উদ্ধারের পরিকল্পনা বর্ণনা করা হয়েছে। এই কাণ্ডেই হনুমানের মতো বীরকে রামের পাশে পাওয়া। এখানে রাজনীতি নেই যে তা নয়। বালী-বধের প্রতিশ্রুতিটা নিজেই একটা রাজনৈতিক অভীপ্সা। সেই কর্মসূচী পালনে এক শরেই বালীকে বধ করে সুগ্রীবকে বানর রাজ্যের অধীশ্বর করেছেন রাম। সীতাকে উদ্ধারের জন্য সুগ্রীবকে দরকার ছিল, সেটা ঠিক। কিন্তু একজন ক্ষত্রিয় বীর যুদ্ধরত অপরকে আড়াল থেকে হত্যা করবে – সেটা কেমন নীতি? আপন ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থের জন্য অন্য এক স্বাধীন-রাজ্য প্রশাসনের ওপর হস্তক্ষেপ, প্রশাসকের প্রাণনাশ! এটা কেমন? মহাশক্তিধর রাম প্রয়োজনে বালীকে সম্মুখ -সমরে আহ্বান করতে পারতেন! তা বলে প্রজা-শাসন ও মৃগয়ার (যদিও বানর মাংস অভক্ষ্য) অছিলায় নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা! এমন আগ্রাসী রাজা কীভাবে স্বাধীনতার পূজারী হয়?
পঞ্চম কাণ্ড হল সুন্দর কাণ্ড। এই কাণ্ডে হনুমানের লঙ্কা যাত্রা, লঙ্কায় প্রবেশ, সীতার কাছ থেকে অমৃতফল লাভ, মধুবন ভঙ্গের মধ্যে দিয়ে বানরকুলে সেই আনন্দ বার্তা প্রচার, ইত্যাদিতে ভরা এই পর্ব। এই মধুবন প্রসঙ্গের বাইরে জানকীকে উদ্ধার প্রসঙ্গে হনুমান, জাম্ববান, সুগ্রীব, দধিমুখ যে আলোচনা করেন তা গণতান্ত্রিক রীতি মেনেই হয়। সেই অর্থে বানরকুলে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত ছিল। তবে বাল্মীকি থেকে চন্দ্রাবতী, সকলেই রামায়ণের সমাজে পুরুষতান্ত্রিক ধারা বজায় রেখেছেন। এমনকি এই বানরকুলেও যুদ্ধ ও রাজনীতি হয়ে উঠেছে পুরুষের বিষয়!
এরপর লঙ্কাকাণ্ড। এই ছয় নম্বর কাণ্ডটিতেই বাল্মীকি রামায়ণের সমাপ্তি। কথিত যে পরের কাণ্ডটির রচনাশৈলী পূর্বোক্ত ছয় কাণ্ডের সঙ্গে মেলে না। লঙ্কাকাণ্ডে পুরোপুরি যুদ্ধের বর্ণনা। ইন্দ্রজিতের বীরত্বের প্রকাশ এই কাণ্ডের এক বিশেষ আকর্ষণ। এ যেন মহাভারতের কর্ণ। তবে একে একে কুম্ভকর্ণ থেকে তরণীসেন হয়ে ইন্দ্রজিতের মৃত্যু, এই পর্বকে বড়ো বেদনার বার্তাবাহক করে তোলে। অকাল বোধনের প্রয়োজনীয়তায় দুর্গোৎসবের মধ্যে দিয়ে শক্তির আরাধনায় অশুভের বিনাশ এবং শুভ শক্তির জয় নিশ্চিত করতে চান স্বয়ং রামচন্দ্র। সেই উপাসনা সর্বশেষে রাবণ-বধে রামরাজ্যের প্রতিষ্ঠায় রামায়ণকে এক মিলনান্তক বর্ণনায় প্রকাশ করে।
উত্তরকাণ্ডের কথা ধরলে মিলনান্তক বর্ণনা এক নিমেষে বিয়োগান্তক হয়ে ওঠে। যদিও এই কাণ্ডের বর্ণনা প্রক্ষিপ্ত, তবুও এই বর্ণনায় দেখা যায় যে রামরাজ্যে গর্ভবতী নারীকে লোকনিন্দায় ত্যাজ্য হতে হয়। তাঁর অগ্নিপরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হয়। শূদ্র হয়ে তপস্যা করার অপরাধে শম্বুকের মাথা কাটা যায় রাজা রামের হাতে। রাম বর্ণাশ্রমের পক্ষে দাঁড়ান, যা শ্রম-বাজারে প্রবেশের সমানাধিকার দাবি করে না। আবার সেই রাম চণ্ডালরাজ গুহকের বন্ধু! এই চারিত্রিক বৈপরীত্যের কি উত্তর আছে? হয়তো বহু উত্তর সেখানে বর্তমান, কারণ মহাকাব্য বহুমাত্রিক সমাধানে সিদ্ধ।
আবার অশ্বমেধ যজ্ঞের ঘোড়া ছুটিয়ে রাজ্য বিস্তারের রাজবার্তা রামের সাম্রাজ্যলোভী পুরুষতান্ত্রিক মনের পরিচয় বহন করে। একইভাবে অগ্নিদেবের কাছেই সীতার সতীত্বের পরীক্ষা, অথবা তাঁর পাতাল প্রবেশ, জনমোহিনী রাজা রামের প্রজাবৎসল মনের এবং গণতন্ত্রের প্রতি আস্থার পরিচয় দিলেও সন্দেহের বশে প্রত্যাখ্যান, নারীর প্রতি গঞ্জনা এবং স্বামী হিসেবে তাঁর যথাযোগ্য ভূমিকা পালনের অযোগ্যতাকেই প্রকাশ করে। এই কাণ্ড রামরাজ্যে নারীর স্বাধীনতাহীন অবস্থাকেই স্পষ্ট করে। কারণ সামাজিক নিরাপত্তার অভাববোধ হল চিহ্নহীন স্বাধীনতার উপলব্ধি।
যাইহোক, সাতকাণ্ড রামায়ণ পড়ে সীতার সঙ্গে রামের সম্পর্ক-প্রকৃতি কেউ নাই বুঝতে পারেন। তাতে দোষের কিছু নেই। দোষের বিচার অন্যত্র। রামকে যখন রাজনীতির আঙ্গিনায় নামিয়ে ব্যবহার করা হয়, তখন সেটা দোষের হয়। আপামর ভারতবাসীর সঙ্গে রাম ও রামায়ণের কোন বিরোধ নেই। আর্য-অনার্য বিরোধ মিটে সংকর জাতি চেতনায় এবং বহু ধর্ম ও সংস্কৃতির ঐতিহ্যে বেড়ে ওঠার দৃপ্ততায় ভারতবাসী দীর্ঘদিন এই মহাকাব্যের চরিত্রগুলোকে আঞ্চলিক কল্পনায় স্বাধীনতা, মৈত্রী ও সৌভ্রাতৃত্ববোধকে জাগিয়ে তুলে আদর্শ সামাজিক পরিসরের দিকে এগিয়ে যেতে চেয়েছে। আজকের একমুখী বাধ্যবাধকতা সেই প্রবাহে গোল বাঁধাচ্ছে।
আজ নতুন বয়ানে রামায়ণ লেখা হচ্ছে। রামের ছবিতে প্রসন্নতা গৌণ হয়ে মুখ্য হয়ে উঠছে তাঁর সংহারী রূপ। মানুষের মনে জানকী হয়ে উঠছেন পতির অনুগত প্রেয়সী, যার আনুগত্য অনুসরণীয়। নতুন মূল্যবোধের ঝাপটায় আজকের রামায়ণে নৈর্ব্যক্তিক বিচার উগ্র হিন্দুত্বের অধীনে থেকে স্বাধীনতা ভোগের উপলব্ধিতে গ্রহণীয় হয়। আর সেটা করার বাস্তব পরিস্থিতি নির্মাণের চেষ্টা প্রতিমুহূর্তে চালানো হচ্ছে রাষ্ট্রীয় মদতে। রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার কাজকে স্বপ্নের রামরাজ্য গড়ে তোলার প্রথম ধাপ হিসেবে দেখানোটাও সেই কাজ। এই কাজের যে একেবারেই কোন সারবত্তা নেই, তা নয়। কিন্তু এটা ঠিক যে ভারতীয় সমাজের ঐতিহ্য হল বিরোধিতা। সেটা রামায়ণের সমাজেও ছিল, আজও আছে।
রামায়ণী যুগ ভারতীয় সমাজের লিপিজ্ঞানী অবস্থার পরিচয় বহন করে। সেই জ্ঞানে প্রজাদের বুদ্ধি পরিশুদ্ধ করতে রাজার কর্তব্য হিসেবে ঠিক হয় নাস্তিককে দণ্ড দেওয়ার কাজ। ঠিক তখনই রামরাজ্যে স্বাধীনতার মানে খুঁজে পাওয়া যায় না। প্রশ্ন ওঠে, যে সমাজে ষড়যন্ত্র, নির্বাসন, অত্যাচার, গুপ্তহত্যা, অবজ্ঞা, যুদ্ধ ও নিধনের ঘটনা ব্যক্তি ইচ্ছায় সচল থাকে, সেখানে সাধারণ জনজীবনে সকল নিশ্চয়তা কীভাবে সহজলভ্য হয়? নারী যে সমাজে ভোগ্যবস্তু, কিম্বা পণ্যদ্রব্য বিবেচিত হন, সেখানে কীভাবে স্বাধীনতা সর্বব্যাপী হয়? যে বর্ণনা ভবিষ্যতের আভাসে অধর্মের পাল্লাভারী হওয়ার কথা বলে, তা কীভাবে সাম্যের পক্ষে দাঁড়িয়ে পরিবর্তনের বার্তাবাহক হয়?
স্বাধীনতার পরিসরে ক্ষমতায়নকে দেখলে সমাজের সংস্কারী বহতা যখন যুগ-বিচারে শূদ্রের সামর্থ্য অর্জনের পক্ষে কলিকালকে দাঁড় করায়, শাস্ত্র তখন তার শ্বাসরোধের বিধান দেয়। স্বাধীনতার নামে রামরাজ্য দলিত ও বিধর্মীদের পিটিয়ে মারে। প্রশাসনিক ক্ষমতা সেই কাজের দ্বাররক্ষী হয়। উত্তরকাণ্ড ছেঁটে ফেলেও সেই সব হাতিয়ার লুকিয়ে ফেলা যাবে না। শূদ্র আজ জ্ঞান তপস্যায় সফল। বর্ণাশ্রমের শেকল ভাঙারা আজ জানেন যে এই রচনায় রসের গভীরতা থাকলেও রামায়ণের সমাজ ও স্বাধীনতা দেশের ধন নয়।

[লেখকএম. এ, পি এইচ. ডি, সহকারী অধ্যাপক, সমাজতত্ত্ববিভাগ, প্রফেসর নুরুল হাসান কলেজ, ফারাক্কা, মুর্শিদাবাদ]

Facebook Comments

Leave a Reply