ইন্দ্রনীল চক্রবর্তী-র কবিতা
(১)
কালকেও দেখা গেছে। আজকাল প্রায়শই দেখা যাচ্ছে, চালের গুদামের পাশে একটা করে কবিতা পড়ে থাকতে। মালিক এসে সকালে “আহা বাছা” করে চা বিস্কুট দেয়। কবিতারা অবাক চোখে দেখে, কিন্তু পরম তৃপ্তিতে তা খায়। তারপরে তারা কোনো মতে উঠে পড়ে, পা টেনে টেনে রাস্তায় আসে, কিন্তু রোদ্দুরে থাকতে না থাকতে, সূর্যের আলোয় তাদের গায়ে আগুন ধরে যায়। তীব্র চিৎকার করে ওঠে। ভয়াল চিৎকার শুনে সকলের রক্ত হিম হয়ে যায়। আগুনের ফুল্কি আর ছাই হয়ে সমস্ত রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে। সবাই আলোচনা করে নিশ্চই পিশাচ ছিল, তাই সূর্যের আলো সহ্য হয়নি। এই ভেবে মানুষ শান্তি পায়।
(২)
কিউমিউলাসের ইচ্ছা ছিল যে সে স্ট্রম চেসার হবে। বিশেষত ঘূর্ণি ঝড়ের চোখে বসে থাকা দৈত্যটাকে সে ধরবেই ধরবেই। সবাই বলতে থাকে যে কি সাংঘাতিক সাহস কিউমিউলাসের, তাকে বীর হিসেবে পুজো করতে থাকে। সে ও ভয়ঙ্কর ঘূর্ণি ঝড়কে ধরার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। অবশেষে ঘূর্ণি ঝড় এলে সে সবার নিষেধ উপেক্ষা করে ঝড়কে ধাওয়া করে। প্রচণ্ড সাহস ও শক্তি নিয়ে ঝড় উপেক্ষা করে সে ঘূর্ণির চোখের কাছে চলে যায় দৈত্য ধরবে বলে। কিন্তু কি অবাক কাণ্ড ! কোথায় দৈত্য , শুধু প্রজাপতি আর প্রজাপতি, কত রঙের প্রজাপতি। নানান রঙের সেই সমস্ত প্রজাপতি ঝড়ের চোখ জুড়ে পাঁক খেয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে। কি অপূর্ব সেই দৃশ্য। তার চোখ জুড়িয়ে যায়, কিন্তু সে হতাশ হয়ে পড়ে, দৈত্য ধরা হাতছাড়া হয়ে যায় বলে। তার বীরত্মর কাহিনী আর লেখা হবে না বলে।
(৩)
রোদের দিনে পিঁপড়েরা খাবারের কাছে যায়। কেউ কেউ পিঁপড়ের খাবারে সভ্যতা মিশিয়ে দেয়। পিঁপড়েরা খাবারের সাথে সাথে সভ্যতাও খেতে শুরু করে। তারা ভাবে তারা যদি এই খাবারটা জমিয়ে রাখতে পারত, তাহলে কি ভালোটাই না হত। তারপর থেকে তারা বর্ষার দিনের জন্য জমিয়ে রাখতে শুরু করে। খাবারের সাথে সভ্যতাও জমতে থাকে। পিঁপড়েরা জানত না, সভ্যতারও একটা সাঙ্ঘাতিক খিদে আছে। জমে থাকলে তারও খিদে পায়। পিঁপড়েদের সে সবের খেয়াল নেই। তারা খাবার জমাতে ব্যাস্ত। এবং শেষমেশ একদিন যা হবার তাই হল। সভ্যতা না থাকতে পেরে সমস্ত পিঁপড়েদের খেয়ে ফেলল।
(৪)
মেঘ থেকে অবিরাম জল পড়ে। পড়াই তাদের কাজ, মাটিতে মিশে যায়। পুকুরে, খালে, বিলে মিশে যায়। কিছু জলের ফোঁটা গাছের পাতার উপরে পড়ে। বন্ধু ফোঁটাদের কথা ভেবে হাসে। উপর থেকে দেখে আর ভাবে, কি ভাবে তাদের বন্ধুরা মাটির সাথে মিশে গিয়ে গাছের পুষ্টি যোগাচ্ছে, আর গাছ তাদেরকে কেমন সুন্দর পাতার উপর উঁচুতে রেখে দিয়েছে। গাছ অবশ্য এসব কিছু বঝে না, সে নির্বিকার থাকে। কিন্ত গাছের বন্ধুরা অবশ্য অন্যরকম। তারা অবশ্য নির্বিকার থাকতে পারেনা। বিশেষত হাওয়া আর সূর্য, তারা গাছকে খুব ভালবাসে। গাছের পাতায় জলের ফোঁটা দেখতে পেয়ে তারা ক্ষেপে যায়। সূর্য জ্বলে ওঠে আর ফোঁটারা সব বাষ্প হয়ে যায়। হাওয়া এসে সমস্ত বেঁচে থাকা ফোঁটাকে পাতার থেকে মাটির উপর ফেলে দেয়। সেখানে তারা গিয়ে মাটির সাথে মেশে গাছের পুষ্টি যোগায়। এবার বন্ধুরা তাদের দেখে হাসে।
Posted in: August 2020, POETRY