অর্ঘ্যদীপ রায়-র কবিতা
(১)
সোঁদা গন্ধের কোনো দেশ হয় না। হয় বিলাস। অপ্রতুল না হবার সুখ অথবা উপচে না পড়ার স্বস্তি। পরিমিত মাখন রুটিতে মাখাতে মাখাতে বেলা নামে সে দেশে। টিভির সামনে বসে আধ কামড়ে বিস্মিত হয় সে দেশ। দেখে বানের জলে ভেসে যাওয়া মানুষ ভিড় করেছে একটি চতুষ্কোণ নিসর্গতে। দেখে অনিকেত জীবনযাপন নতুন এসেছে বাহারি চিড়িয়াখানায়। তাদের অঙ্গভঙ্গি, প্রসাধনহীনতা ও পরিবার-পরিজন দেখতে দেখতে শেষ হয়ে আসে রুটিবিলাস।
কেউ এক ফুলের নাম দিয়েছিলো জিরহুল। কেউ এক গাছের নাম দিয়েছিলো পান্থপাদপ। অথচ সেইসব দিনকাল রাখা থাকে না শিয়র জুড়ে। সেই অনাবিল পাতাগুলি কোনো পঙ্গপাল খেয়ে গেলো। সেই পয়স্বিনী ফুলগুলি মাড়িয়ে গেলো বর্গিরা। যে চড়ুই রিনরিন করতো প্রহর-ডালে, তাদের জামা হারিয়ে গেছে। ঝুলছে কিছু মৃতদেহ হ্যাঙ্গারে। সময় নেই অঙ্গ ব্যবচ্ছেদের। অবকাশ নেই মাটি চাপা দেওয়ার কবরে। রোদের সামনে বসবে বলে অনেকগুলি মেঘলা বছর কেটে গেলো তাদের।
কিন্তু অবশেষে রোদ আসবেই। হাড়ের গায়ে লেগে থাকে টুকরো মাংসগুলির অভিষেক হবে নতুন করে। মেলায় চুড়ি কিনতে যাবার ইচ্ছে হবে রাজকন্যের। অথবা সোঁদা গন্ধের অপরিবর্তনীয়তা যাচাই করতে একটি দূরের মানুষ হাজির হবে বধ্যভূমিতে। অবশ্য তখন সমস্ত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াই শেষ। ওঁ লেখা শ্রাদ্ধের কার্ড ছিঁড়ে ফেলতে ফেলতে ডাস্টবিন ভরে উঠবে তার ।
(২)
ফ্রিজের মধ্যে একটি অদৃশ্য মানুষের উপস্থিতি টের পাই। অন্ততঃ, একটি মানুষ তৈরীর সমস্ত উপকরণই মজুদ আছে সেখানে। হাড়, মাংস, রক্ত, জল, খনিজ এবং মৃত্যুহীন পলিথিন। যদিও সে মানুষটির সাথে আমার দেখা হয় না, তবু সে আছে বুঝতে পারি। হয়ত সে অনুষ্ণশোণিত, তাই নিরক্ষীয় রসিকতা ভালো লাগে না তার। ভালো লাগে না রোদে চামড়া পোড়া ট্রপিক্যাল হৃদয়। ক্লান্ত সকালে কখনো দেখা যায় কমে গেছে কাল রাত্রের বাঁচিয়ে রাখা ডাল অথবা দু একটা পুঁটিমাছ নেই। স্বল্পাহারী সে। গৃহস্বামীকে বুঝতে দেয় না কিভাবে একটি জীবন কাটিয়ে দিতে পারে সে পরজীবিতায়। টমেটোতে লুকিয়ে রাখে প্রাণ অথবা একটি টমেটো থেকে আরেকটি টমেটোতে প্রতিস্থাপন করে নিজের জীবন। এভাবে ফ্রিজময় একটি জ্বীন বাসা বাধে। মনে হয় বহুদিনের ক্ষুধা তার। কোনো এক রেললাইনে ঘুমিয়ে ছিল সে। পাশে রাখা ছিল কয়েকটি রুটি। সে ঘুম ভাঙেনি আর। যে ক্লান্তি ঘুমকে মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে যায় তাকে সম্পূর্ণ করে একটি ট্রেন। পড়ে থাকে রুটিগুলি। পড়ে থাকে রুজিগুলি। অতৃপ্ত ক্ষুধার্ত মানুষটির সত্ত্বা বাসা বাধে একটি মধ্যবিত্ত ফ্রিজে। কখনো পেয়াঁজের ঝাঁঝে চোখে জল আসে। কখনো বিবমিষা আসে বাসি লিভার ফ্রাইয়ে। তবে একদিন সে খুব খুশি হয়েছিল। খবর পেয়েছিলো, মৃত্যুরুটিগুলি স্থান পেয়েছে জাদুঘরে। অতো সুন্দর গোলাকার রুটি কেউ দেখেনি আগে। শ্রমিকের রুক্ষ তালু নাকি নিখুঁত বৃত্ত রচনা করে।
Related posts:
Posted in: August 2020 - Cover Story, POETRY
অসম্ভব ধারালো আপনার কলম দাদা। অনুমানব থেকে অতিমানবে পৌঁছানোর পথে এই লেখাটা যেন কোনও অনির্বাণ মশালের মুক্ত বিদ্রোহ।
অসংখ্য ধন্যবাদ শিখণ্ড