তন্ময় ধর-এর কবিতা

জন্মান্তর

১।

মণিকর্ণিকায় দৃশ্যের উত্তাপে এসে দাঁড়িয়েছি আমি। দূরে জলের শব্দে শব ভেসে যাচ্ছে। শবের ওপর একটি কুকুর চিবিয়ে চলেছে শীতল মাংস। শব শেষ, কুকুর শেষ, সব শেষ। আমার তীব্র দাঁত থেকে মাংসের আঁশ বের করতেই দৃশ্যের দাহগন্ধ লাগল তোমার অন্নপূর্ণ পাত্রে। ছাইরঙা আরেকটা কুকুরের চোখ কামড়ে ধরল আমাদের অতল ঈশ্বরচিহ্নকে। দৃশ্যের উত্তর আকাশে দু’টি তারা ফুটে উঠল।

২।

শূন্যতার নীচে দু’টি রঙে পাখিরা জাগছে। আমাদের গল্প থামিয়ে প্রসববেদনায় উজ্জ্বল হল পুবের আকাশ। তোমার ভ্রুণ থেকে পিছল সিঁড়িতে চমকে উঠল মহাকাল। মৃতশিশুর গানে আটকে গেল বক্ষবন্ধনী। উতল জাহ্নবীজীবনের স্মৃতিহীনতায় আমরা লুকিয়ে পড়লাম। অনেক শতাব্দী পরে মৃত নদীতে পাখির কঙ্কাল দেখে চমকে উঠল আমাদের পায়ের ছাপ।

৩।

সন্তানভুক এক পিতার পায়ের শব্দে খসে পড়ল তোমার রক্তবস্ত্র। ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার হল একটি ফলের যন্ত্রণা। অথচ সহস্রযুগ পেরিয়ে যাচ্ছে, দূর নক্ষত্রের ফার্নেস জ্বলছে-নিভছে, আমরা কোন যন্ত্রণায় ভাঙতে পারছি না ঘুম কিম্বা অবিকৃত দেহবোধ। আলোকিত কাঁচের ওপারে ছটফট করছে পতঙ্গের আঁকা একটি বিন্দু। ভোর হয়েই চলেছে তোমার প্রসবনালীতে।

৪।

পাখিরা ফিরে চলেছে অর্ধপথে। বহুযুগ পরে আমরা নামছি ছায়া-শিকারের শরীর নিয়ে। আলোকবর্ষ দূর থেকে অনন্ত বসন্তের একটা পৃথিবীর শব্দগুলোকে সাজাতে সাজাতে একই দূরত্বে ফেরা হচ্ছে না আর। আরো অনেক দূর থেকে দেখছি, দীর্ঘ অনভ্যাস বদলে নির্মম হয়ে উঠছে এক একটি পাখিদৃশ্যের আস্তরণ। দৃশ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে একটা ঢেউ।

৫।

দৃশ্যভুক পাখিরা কয়েক ফোঁটা অন্ধকারকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে আলোয়। সেই আলোয় আমরা অন্ধ হয়ে উঠছি। শূন্য অন্নপাত্রের ক্ষতচিহ্নে লেগে যাচ্ছে সামান্য আলো। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ক্ষতবিক্ষত হতে পারছি না আমরা। নিঃশেষিত একটি মেঘলা দিনের পাশে অন্ন ফেলে রেখে হঠাৎ পালিয়ে যায় দু’টি ঈশাবাস্য পাখি। দৃশ্যদোষে দরবারী বাজতেই থাকে।

Facebook Comments

Posted in: July 2020, POETRY

Tagged as: , ,

Leave a Reply