ইয়েস ম্যা’ম : সুকল্প দত্ত

নীতি বলছিল ও নাকি বাথরুম ছাড়া কাঁদতে পারে না। শরম লাগে, মরম লাগে, গরম লাগে বড়ো। কচি করে তাই শাওয়ারটা চালিয়ে নেয় সে। চট করে প্রেমে পড়ে গেলে কোনো রেস্তোরাঁর,তাকে এতো স্বাস্থ্যবতী মনে করার কোনো কারণ আছে কী? যেমন ধর জম জম বা সিম সিম। ইদানীং ঘাড় নীচু করে মোবাইল করায় তাঁর স্পন্ডেলাইটিস। ছত্রিশটা বছর তাঁর একটা ফ্রাইপ‍্যানে খালি ফুটতে থেকেছে। পুড়ে গন্ধ বেরিয়েছে। আঁচ নেভানোর সুযোগ আসেনি।
রোববার একটা খারাপ দিন। কী করলাম সকাল থেকে? আমি খালি লোহার বালতির আওয়াজ শুনে ছুটেযাচ্ছি কখন তুমি জলে গা ভেজাবে বলে। যাবতীয় দাম্পত্য সমস‍্যার রফা হয় রাতের বিছানায় এ আমাদের শিশুপাঠ‍্যে ছিল। বাড়িতে সবাই জানে নীতি আমার বাইপ্রোডাক্ট। এ বাজারেযা কিছু নিত্য,যেমন আমার পেশা। তাকে কতটা আরও কতটা প্রেজেন্ট করা যায় তা নীতি জানে।
নমিতার সংসার শনি আর রবি খোলা। বাকি দিনগুলো ব‍্যাচ কে ব‍্যাচ এক বি.এ পাশ গেঁও বধূ ছাগল চরিয়ে বেড়ায়। অ-এ অজগর আসছে তেড়ে, আ-এ আমটি খাব পেড়ে। সারাজীবন খালি গাছ চিনে গেলাম, আম খাবার মুরোদ হল না। আমার বিজ্ঞাপন জীবনে এই একটা জিনিস,যা অপ্রত্যাশিত। আমি কখনও বউয়ের বিজ্ঞাপন করতে পারিনি। নমিতা কখনও পিকনিক, পার্টি,থিয়েটার কিংবা সিনেমা একসঙ্গে অ্যাটেন্ড করেনি। আমি কতবার ভেবেছি এসব প্রেস্টিজ ইস‍্যু। নীতি প্রক্সি দিতে চেয়েছিল কিন্তু আমি পারিনি। সে যাই হোক,এই ভালো একা,একা একা বেঁচে থাকা।
যেহেতু মফস্বলে সবাই আমায় কমবেশি চেনে,তাই তাকে নিয়ে শহরে ফ্রিলি ঘুরে বেড়াই। হৃদয়ে কফ জমলে অফিস ট‍্যুরগুলোয় বুকে শেঁক দিয়ে থাকে সে। এসব নিয়েই গড়ে ওঠে আমার ব‍্যক্তিগত সচিবালয়।
নীতি আমাকে শিখিয়েছে বেশকিছু নীতি। তাতে আমার কোনো নেতিবোধ জন্মায়নি। সে যে ব্র‍্যান্ড ইউজ করে তা আমারই বিজ্ঞাপিত। নীতি মাখে অলিভ তাই ওর গা থেকে কেমন এসেন্স বেরোয়,আর নমিতা মাখে সরষের তেল। যা আমি ঘেন্না করি। কতবার বারণ করেছি,বলেছি অসুবিধা হয় শুতে। শোনেনি কিছুতেই। তাই চাদর নিয়ে টানাটানি করতে দেখিনি তাকে। নিরোধ নিয়ে সে বিরোধ করেনি কখনও। শেষরাতে সে শুয়ে থাকে বিছানার এককোণে। আমি চাদর চাপাই। নমিতা উলু দিয়ে যায়,তাঁর শাঁখা বেড়ে যায় বারবার। তার মাঝে আমি শাখামৃগ হয়ে দোল খাই।
সাত তারিখ এখনও হয়নি,কাল সকালে হবে সাত তারিখ। তবে আমি মিনু ট্রাভেলসে ঢুকব। কথা বলব নেক্সট ট‍্যুরপ্রোগ্রাম নিয়ে। নমিতা সেদিন গলার শিরা ফুলিয়ে বলল–তোমার জামার বোতামগুলো বারবার ছেঁড়ে কেন?-আমার গরম করলে ছিঁড়ে ফেলি পটাপট। হ‍্যাঁ নীতির এই স্বভাব। ধৈর্য্য ধরতে পারে না। বোতাম ধরে টান মারে। যেন মটরশুঁটির কোয়া। আর নমিতা লাগিয়ে দেয়।
এবার ঠিক ষোলোই ডিসেম্বর নীতির জয় বাংলা হল। জয় বাংলা হলে নীতি সবসময় গগলস্ পড়ে ঘরের মধ‍্যে ঘুরঘুর করে। ওর নাইটির খাঁজে গোঁজা থাকে রুমাল। মাঝেমধ্যে চশমা সরিয়ে অমন ফালাকাটা বাদামী চোখে রুমাল বোলায়। আর আমাকে বেড়াল ভেবে কাছে ঘেঁষতে দেয় না। আমার যদি হয়ে যায়?
পাকাচুল তুলতে তুলতে,ব্রেসিয়ারের হুক খুলতে খুলতে আমি ক্লান্ত। একদিন নীতিকে বলেই ফেললাম বোতামের কথা। নমিতা বলেছে এই শেষবার। আর লাগাবে না। শুনে সে হাসছিল ঘেঁটি নাড়িয়ে নাড়িয়ে। ওর নড়বড়ে গজদাঁতে লিপস্টিক লেগেছিল। টিস্যু দিয়ে তা মুছে দিতে দেখলাম মাড়িতে রক্ত। একটা পিল খেয়ে পিলপিল করে ও বাথরুমে গেল। শাওয়ারের শব্দ কানে আসছিল।
নীতি সেলাই জানে না। ও একটা গ্লিসারিন সাবান। হাত থেকে খালি পিছলে যাচ্ছে। থেঁতলে,দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে। হাইড্রেনের অববাহিকা দিয়ে ভেসে যাচ্ছে বারবার। আর আমি ধরতে পারছি না।

Facebook Comments

Posted in: July 2020, STORY

Tagged as: , ,

Leave a Reply