শৌভ চট্টোপাধ্যায়-এর কবিতা
শিরোনামহীন
১
আর এই চেয়ে-থাকাটুকুই, অন্ধকারে, ক্রমশ জমাট বাঁধতে-বাঁধতে
আস্ত একটা মানুষের চেহারা নিল। মনে হল, আমার দিকে ঝুঁকে,
সে তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, করমর্দনের ভঙ্গিমায়।
রাত্রি এক ভাষাহীন মিনারের ছায়া। তার পাথরের ফাঁক দিয়ে,
গড়িয়ে পড়ছে চটচটে কালো রক্ত, দুর্গন্ধময় পুঁজ। তার দেয়াল
ক্রমাগত অবিশ্বাস আর সন্দেহের লালায় স্যাঁতসেতে, নোনাধরা।
ব্রাবান্টের জনৈক শিল্পীর আঁকা সেইসব কুৎসিত আকার, আর বীভৎস
রোমশ অন্ত্র, আমি চোখ বন্ধ করলেও দেখতে পাই। ঘষা কাচের
জানলার মধ্যে দিয়ে, অনেকক্ষণ একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকার পর, অবশেষে
নিজের সঙ্গেই আমার চোখাচোখি হয়ে গেল।
দূরে, একটা অদৃশ্য সেতুর নীচে, জলের শব্দ। এবং পাথরের।
তাছাড়া কোথাও,
আর কোনো সংলাপ নেই।
২
আর কোনো সংলাপ নেই। কেননা, সে জানে
চুপ করে যাওয়াই, এই উচ্চারিত পৃথিবীর বিরুদ্ধে,
এই শব্দময় সভ্যতার বিরুদ্ধেও, তার অন্তিম
ও একমাত্র প্রতিবাদ। যেকোনো অভিনয়ই
এখন বাহুল্যমাত্র। যেকোনো সম্পর্ক, যেকোনো বস্তু
আর মানুষ, শুধু একটা নাম।
যে-নামেই ডাকা হোক, সে বুঝতে পেরেছিল,
এই অর্থহীন শূন্যতাকে সহনীয় করে তোলা
আর কখনোই সম্ভব হবে না। সে দেখেছিল,
সমুদ্রের ধার দিয়ে, যে-মেয়েটি ছুটে যাচ্ছে—
ত্রস্ত, আতঙ্কিত—তার নাম এলিসাবেত।
আর তার পিছনে, যে-মেয়েটি চীৎকার করতে-করতে
ছুটে আসছে, ও আলমা।
অথবা,
সমুদ্রের ধার দিয়ে, যে-মেয়েটি ছুটে যাচ্ছে—
ত্রস্ত, আতঙ্কিত—তার নাম আলমা।
আর তার পিছনে, যে-মেয়েটি চীৎকার করতে-করতে
ছুটে আসছে, ও এলিসাবেত।
এভাবেই, আস্তে আস্তে,
একটা নামহীন মানুষকে ঘিরে ধরছিল
একটা নামহীন মানুষের ছায়া