নগেন : সিদ্ধার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়

মুখ থেকে মুখোশ টা সরিয়ে  মুড়িটা মুখে ঢালল নগেন।  আজ সকাল থেকে ব্যস্ততার শেষ নেই। চিরকাল নিজেকে অন্ধকারের লোক মনে করে এসেছে নগেন।  বাবা মাটির প্রতিমা বানায় কুমোরটুলিতে।  সেই প্রতিমা বাবুরা কিনে নিয়ে যায়, শহরটাকে আলো ঝলমলিয়ে তোলে।  নগেন বাপের সাথে রয়ে যায় অন্ধকারে।  নগেন কোনদিন এই মাটির কাজে হাত দেয় নি।  বাপি দার সাগরেদ হয়েছে নগেন।  আলোয় থাকা বাবুদের কাছ থেকে তোলা আনা থেকে শুরু করে অন্ধকারে লাশ গায়েব, সবটাই করেছে সে।

 শেষ তিন মাসে যেন নগেনও বদলে গেছে। কোন এক জ্বর শুরু হলো চারিদিকে। সরকার সমস্ত কিছু বন্ধ করে দিল, বাইরে বেরোনো যেত না।  বাপিদাও আন্ডারগ্রাউন্ড।  রোজগারের কোন রাস্তাই নগেনের খোলা ছিল না।  বাপটা শ্বাসকষ্টে ভুগছিল, হঠাৎ একদিন পুলিশ এসে বাপটাকে তুলে নিয়ে গেল।  নগেন ভেবেছিল পুলিশ নগেনকে ধরতে এসেছে কোন পুরনো কেসে।  তারপর থেকে বাপটার  আর কোনো খোঁজ নেই।  বাবা চলে যাওয়ায় নগেন যেন আরো একা হয়ে পড়ল। এর মধ্যে হঠাৎই সেই ভীষণ ঝড়।  গঙ্গার পাড়ের কুঁড়েটায় নগেন এক কোনায় বসে কাঁপছিল।  অকুতোভয় নগেনকে যেন হঠাৎ এই এক ভীষণ ভয় গ্রাস করেছে।  ঝড় থামলে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে চারদিকটা থেকে নগেনের মুখে শব্দ রইল না।  একি অবস্থা শহরটার!  সমস্ত ভেঙেচুরে গেছে, গাছ উপড়ে পড়েছে।  অন্ধকারের মানুষ নগেন যে আলোয় থাকা বাবুদের ঘৃণা করে এসেছে তারা যেন আজ নগেনের সাথে এসে অন্ধকারে আশ্রয় নিয়েছে।

 আজ সকালে পুলিশ এসে সব কুমোরদের কাজ শুরু করতে বলে গেছে -কিন্তু মুখোশ পরে, হাতে শুকনো সাবান লাগিয়ে।  বিছানা থেকে উঠে নগেন বেশ্যাপাড়ার মাটি নিয়ে এসেছে।  বাপের ফেলে যাওয়া কাজ শেষ করতে হবে। ভেঙে যাওয়া শহরটাকে আবার ঝলমলিয়ে তুলতে হবে। 
 তারপর আবার না হয় নগেন ফিরে যাবে তার নিজের অন্ধকারের দেশে..।

Facebook Comments

Leave a Reply