কর্ণ : শুভ্রা বেজ
অনেক দিন আগের ঘটনা। চক্রধরপুরে রেলের জমাদার ছিল বুধিয়া। তখন পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে সবাই ঐ চাকরি করত। বুধিয়ার স্বামী ছিল স্টেশনের ঝাড়ুদার। নিঃসন্তান এই উড়িয়া দম্পতির মহল্লায় বেশ সুনাম। হাসিখুশি, পরোপকারি বুধিয়া আর নকুল বাচ্চাদের খুব ভালবাসত।
তখন তো ভোর পাঁচটায় বেরোতে হত। বুধিয়ার হাতে বেলচা আর বালতি। নকুলের ঝাড়ু স্টেশনেই থাকত। জমাদার বা চলতি কথায় মেথরপাড়ার লোকজন কেবল প্রতিবেশি। প্রয়োজনে ডাক পড়ত বাবুদের বাড়িতে। রেল কেন্দ্রিক শহর। নানা ভাষা, নানা জাতি।
এক শীতের সকালে দেরি হয়ে গেছে। কোনক্রমে গরম চা গলায় ঢেলেই বুধিয়া বেরিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পরে নর্দমায় বেলচার খোঁচায় যেন একটা আওয়াজ শুনতে পেল। বেড়াল বা শূয়োরের বাচ্চা মনে করে আবার খোঁচাল। স্পষ্ট মানুষের বাচ্চার কান্না। বুধিয়া উত্তেজনা ও ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপতে লাগল। নোংরা আর পাঁকে ভর্তি নর্দমা থেকে টেনে বের করল ঐ বাচ্চাটাকে। পরণের জামাকাপড় ভিজে, নাকে মুখে নোংরা। ভোরে বুধিয়ার আর্ত চীৎকারে ঘুম ভাঙল কলোনির।
একজন তাড়াতাড়ি করে গরম জল দিল। ভালো করে পরিস্কার করে নিজের চাদর দিয়ে ভাল করে মুড়ে দিল। কোয়ার্টার থেকে একটু গরম দুধ পাওয়া গেল। কুঁতকুঁতে ফর্সা, দেবদূতের মত চেহারা, ঐ ছোট্ট শিশু নিশ্চয়ই কারোর পাপের ফল। ফেলে দিয়ে গেছে যাতে মরে যায়। আ হা। এরকম মা হয়! মা তো নয় ডাইনি। কথা হল বেওয়ারিশ বাচ্চার দায়িত্ব নেবে কে? পুলিশকে জানাতে হবে। বুধিয়া কেঁদেকেটে, হাতজোড় করে পুলিশের কাছে বাচ্চাটাকে ভিক্ষে চাইল। বেলচার খোঁচায় অনেক জায়গা ছড়ে গেছে। খুব বেশি হলে বয়স হয়তো দুদিন।
পুলিশ ঝামেলা এড়াতে থানায় ডেকে কিছু কাগজ পত্রে সই করিয়ে বাচ্চাটাকে বুধিয়ার কাছে ফিরিয়ে দিল। নকুলের কাছেও খবর গেছিল। নিঃসন্তান দম্পতি খুশি।
নিশ্চয়ই কোন বড়ঘরের ছেলে। ওরা নাম রাখল “কর্ণ”। করণ বলেই মহল্লার সবাই ডাকে। দুজনেই রেলের চাকুরে। খুব যত্ন করে মানুষ করতে লাগল। হৃষ্টপুষ্ট কর্ণ সবার চোখের মণি। ঘটা করে অন্নপ্রাশন হল।
সূর্য পুত্র না হলেও সূতপুত্র তো বটে। সকলের কোলে পিঠে মানুষ হতে লাগল। যখনকার কথা বলছি তখন মানুষ আজকের মত স্বার্থপর ছিল না। মেথরপট্টির ছেলে বলে প্রথমে ভাল স্কুলে ভর্তি হতে পারল না। বেহেরা দম্পতি লেখাপড়া জানত না। অগত্যা রেলের স্কুল। সেখানে ভর্তি নিতেই হবে। কর্ণ বেহেরা ভর্তি হল স্কুলে। একমাথা কোঁকড়ানো চুল, টকটকে ফর্সা গায়ের রং আর মুখে ঝোলান হাসি। বুধিয়া-নকুল প্রথম যেদিন ছেলেকে নিয়ে যায় বিশ্বাস করতে সময় নিয়েছে অনেকেই।
স্কুলটা দূরে। দশটার মধ্যে পৌঁছতে হবে। কর্ণ একটা রিক্সায় যায়। কি করে ছেলের দল জানতে পারল কর্ণ মেথরের ছেলে। ব্যাস। স্থান হল লাস্ট বেঞ্চে। সঙ্গে টীকা টিপ্পনি সব চলতে লাগল। কতদিন মারপিট করে ঘরে এসেছে। কিন্তু পড়াশোনায় তাকে কেউ টপকাতে পারছে না। বরাবর প্রথম স্থান কর্ণ বেহেরার। স্কুলে ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে চললেও ভালবাসে সব টিচার। কিন্তু বন্ধু নেই। হঠাৎই ক্লাস সেভেনে বন্ধুত্ব হল রাখালের সঙ্গে। রাখাল সানগিরি। সে দ্বিতীয় /তৃতীয় হয়। সে বলে বিবেকানন্দ পড়েছি কেন? সবাই আমার ভাই।
এতদিন কোনভাবে চলছিল। এবার টিউশন নিতে হবে। নবীন কিশোর সত্যিই ঐ মহল্লায় বেমানান। নকুল বুধিয়া কারোর মত দেখতে না। ওরা প্রায়ই আফশোস/ হাহুতাশ করে। নিশ্চয়ই কোন বড় ঘরের ছেলে হবে। টিউশন পড়াবেন বললেন স্কুলেরই এক শিক্ষক। সে একাই পড়ে। কিন্তু কিভাবে কর্ণ জেনে গেল তার জন্ম কাহিনী। কদিন চুপ করে থাকল। নকুল বুধিয়া কিছুই লুকোয় নি।
কাগজপত্র সব দেখাল। কর্ণ শর্ত করিয়ে নিল যেন কোনদিন নকুল বুধিয়া তাকে ত্যাগ না করে।
রাখাল ছিল ধূর্ত। বন্ধুত্ব সেজন্যই। হিন্দি মিডিয়মে পড়ে। এ যেন দৈত্যকূলে প্রহ্লাদ বা বাঁশবনে শেয়াল রাজার মত। উড়িয়াদের মধ্যে জাত নিয়ে প্রবল জাত্যাভিমান। রেলের স্কুলে তখন অনেক বড়লোক এবং ভাল ঘরের ছেলেরাও পড়ত। কোন পরীক্ষায় ফল বের হলে মেথরপট্টীতে মাইক, খানাপিনা সব হত। রাখালের গা জ্বলত কিন্তু বন্ধুর মুখোশ কোনদিন খোলেনি।
ঘিঞ্জি এলাকা, শূয়োরের চাষ, মদ খেয়ে খিস্তি সব চলত। যেকোন কারণেই হোক কর্ণ মহল্লার সকলের সঙ্গে খুব ভাল মিশতে পারত, অনেক গুণের একটি। টিউশন টিচারের কাছেও সে অপ্রতিরোধ্য। একাই পড়ত। রাখাল তার কাছ থেকে সব নোটস নিত। দেখতে দেখতে মাধ্যমিক পরীক্ষা চলে এল। কর্ণ এখন ষোল বছরের একজন সুঠাম চেহারার ছেলে। এলাকার অনেক মেয়ের নজর তার ওপর। কিন্তু ঐ একটা তকমা। অন্ত্যজ। মহল্লার ফুলকিকে ওর ভাল লাগে। কিন্তু ফুলকির বাবা-মা সাবধান করে দিয়েছে যে ওর জন্মের কোন ঠিক নেই। মুখে না বললেও ফুলকি তাই এড়িয়ে চলে। তখন বাবা মাকে অমান্য করার হিম্মত বেশির ভাগের ছিল না।
একদিন টিউশন থেকে ফিরতে খুব দেরী হচ্ছে। বুধিয়া ঘর-বার করছে। কর্ণ ফিরল রক্তাক্ত হয়ে। সাইকেল ভাঙা। ওর নিজেরও হাত ভেঙেছে।
ঃকঅঅঅরঅঅঅণ!
বুধিয়ার আর্ত চীৎকারে সবাই ছুটে আসে। হাতে প্লাস্টার। কর্ণ একদিন সংক্ষেপে মহাভারতের কাহিনী শোনায় তার বাবা মাকে। কর্ণ থাকলে অর্জুন তো থাকবেই। শুধু কর্ণের শেষ পরিণতিটা আর বলে নি। বাঁ হাত ভেঙেছিল। ডানহাতে পরীক্ষা দিয়ে প্রত্যাশিত ফল করল। রাখাল চারটে টিউশন নিয়েও ওর ধারেকাছে আসেনি। তখন এত মিডিয়ার ছড়াছড়ি ছিল না। তাই এই ঘটনা বিস্তার পায় নি। এরমধ্যে ফুলকির বিয়ে হয়ে গেল।
প্রায় দশ বছর পরে
বেরহামপুরের একটি হাসপাতালে ওপিডির বাইরে অপেক্ষা করছে কর্ণ। সে একজন মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ। কিছু পরে ভেতরে ঢুকল। সুদর্শন কর্ণকে দেখে অবাক ডাক্তার মণীশা মিত্র। কর্ণ ওষুধ সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ শোনাচ্ছে। মণীষার কানে কিছুই ঢুকছে না।
ঃ আপনার নামটা যেন কি?
ঃকর্ণ বেহেরা। বললাম তো।
ইংরেজিতে কথা চলছে। বাড়ি, ঠিকানা সবকিছুই জানতে চাইলেন ডাক্তার মিত্র।
ঃ ওগুলোর সঙ্গে আমার কাজের কোন যোগ নেই।
নকুল রিটায়ার করেছে। বেহেরামপুরে একটা ঘরভাড়া করে ওরা তিনজনেই থাকে। আবার বদলি হয়েছে। এবার কলকাতা। হ্যাঁ। মাকে বলেছে ঐ মহিলা ডাক্তারের কথা। মুখে কিছু না বললেও মনে মনে শঙ্কিত হল বুধিয়া।
শুধু নিজের বুকের দুধটাই খাওয়াতে পারেনি। আর সবকিছু দিয়ে আগলেছে তার কলজের টুকরোকে।
কলকাতা এল সপরিবারে। আবার একটা ঘরভাড়া নিল। পদে পদে হেনস্থা হতে হচ্ছে। চাকরি ক্ষেত্রে জাতের কি? জাতের নামে বজ্জাতি। কিন্তু মেধাবী কর্ণকে জব্দ করতে পারছে না কেউ। মদ খায় কিন্তু পার্টিতে যায় না।
ইতিমধ্যে জীবনে প্রায় ধূমকেতুর মত এল মেহুল। কর্ণ বাংলা বলতে পারত খাপছাড়া ভাবে। বুঝতে তো পারতই। মেহুল ওদের পাশের বাড়িতে থাকে। বুধিয়া সামনে আঁচল করে শাড়ি পরত। ওড়িয়া-বাংলা মিলিয়ে কথা বলত। ভীষণ ভদ্র বলে নতুন এসে অতটা অসুবিধা হয় নি। মেহুলের এ বাড়িতে বেশি আনাগোনা দেখে বুধিয়া সজাগ হয়। মেহুলের বাবা খুব রাগী মানুষ। মা বাবা দুজনেই বিয়ের তাগাদা দেয় কর্ণকে। কর্ণ মনে মনে ভালবাসে মেহুলকে। কিন্তু কিছু বলতে পারে না কারণ পরিণতি জানে।
চাকরির জায়গাও কর্ণের কাছে বিষময় লাগে। হঠাৎই একদিন রাখালের সঙ্গে দেখা। সে এখন ডাক্তার। তখন মুঠোফোন ছিল না। কাজের সূত্রেই দেখে সামনে জ্বলজ্বল করছে ” ডাক্তার রাখাল সানগিরি”। সেও তো হতে চেয়েছিল। গরীবের ছেলের সে শখ পূরণ হয় নি। এম আর হয়েই থেকে গেল। চেম্বারে ঢুকতেই চমকে উঠল দুজনেই। সেই মারপিটের পরে কথা ছিল না। রাখাল ব্যঙ্গার্থে ভাল অভ্যর্থনা করতে গেল। কর্ণ জানিয়ে দেয় সে ডিউটিরত।
তারা থাকে ভবানীপুরে। বুধিয়ার এক দূর সম্পর্কের দাদার মেয়ে আছে। কর্ণকে না জানিয়েই ঠিক করল সেই মেয়ের সঙ্গে কর্ণের বিয়ে দেবে। এক রবিবার ওরা বড়বাজারের কাছে সেই দাদার বাড়িতে গেল। কর্ণ যায় নি, ট্যাক্সি করে দিল।
সন্ধ্যায় হঠাৎ মেহুল এল। কর্ণকে জড়িয়ে ধরে। তাকে সিনেমার নায়কদের মত দেখতে বলে হেসে গড়িয়ে পড়ে। কর্ণ আড়ষ্ট। তার জন্ম বৃত্তান্ত এখানে কেউ জানে না।
: আমি কি খারাপ দেখতে কর্ণ?
: না।
: আমাকে বিয়ে করবে?
চুপ করে থাকে। হঠাৎই মেহুলকে জড়িয়ে ধরে ডিপ কিস করে। মেহুল আঁকড়ে ধরে কর্ণকে। বেহেরা-দত্তের মধ্যে এলই না কোন বৈষম্য। খালি ঘরে মেহুলের শরীর কর্ণের হাতের মধ্যে। খেলতে পারত। সরিয়ে দিল। মেহুলকে বোঝাল বিয়ের আগে এসব ঠিক না। বারংবার অতীত সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। প্রকৃত পরিচয় জানার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। ছোটথেকে নিজের কমিউনিটি ছাড়া সব জায়গায় হেনস্থা হতে হয়েছে ছোটজাত বলে।
বিবেকানন্দের কথা কজন মনে রেখেছে? বুধিয়া নকুলকে সে পূজো করে দেবতাজ্ঞানে। পিঠে বেলচার খোঁচা তার জন্মচিহ্ন যেটা মনে করিয়ে দেয় সে জারজ সন্তান। কলিযুগের কর্ণ, হারতে শেখেনি। যদিও কবচ-কুন্ডল শুধুমাত্র মেধা।
নকুল বুধিয়া বিয়ে প্রায় পাকা করেই এল। নিজেদের বেরাদরি। সবকিছু জানে। মেয়ে দেখতে সুন্দর। আর কি চাই? কর্ণ আপত্তি করল।
একদিন দুপুরে একটা চিঠি এল। সযত্নে রেখে দিল। কর্ণ কাজের সূত্রে গেছে বিলাসপুর। হপ্তাখানেক বাদে ফিরলে তাকে চিঠিটা দেখায়। বজ্রকঠিন মুখ দেখে ভয় পায় বুধিয়া। নকুলও কিছু জিজ্ঞেস করেনি। কর্ণ জানায় সামনের রবিবার বাড়িতে দুজন অতিথি আসবে। ওরা খুব বড়লোক।
রবিবার আসতে এক সপ্তাহ দেরী। এই প্রথম কোনও ভদ্রলোক তাদের বাড়িতে অতিথি। নকুল বুধিয়া দুজনেই উত্তেজিত।
মঙ্গলবার। ঝুপঝুপ করে বৃষ্টি পরছে। কর্ণ জোরে বাইক চালাচ্ছে। ওদের গলির মুখেই মেয়ের গলার আওয়াজ। বাঁচার আর্তনাদ। কর্ণ বাইক থামিয়ে আওয়াজ লক্ষ্য করে এগিয়ে যায়। মেহুলের গলা না? কঠিন হয় কর্ণের মুখ। মনে পড়ে ছোটবেলার মারপিট। দুটো ছেলে মেহুলের কামিজ টেনে ছিঁড়ছে। কর্ণ একজনের ঘাড় ধরে তলপেটে এক লাথি মারে। আরেকজনের চুলের মুঠি ধরে দেয়ালে ঠুকে দেয়। অর্ধনগ্ন মেহুলের গায়ে নিজের জামা পরিয়ে দেয়। মেহুলের বাবা ঘরেই ছিলেন। মেয়ের এই অবস্থা দেখে ওর মা কাঁদবার আগেই ওর বাবা চুপ করিয়ে দেয়। পরেরদিন মেহুলের বাবা মা দুজনে আসেন কৃতজ্ঞতা জানাতে।নকুল বুধিয়া খুশি হয় এই ভেবে যে আনপড় বাবা-মায়ের মানুষ করার মধ্যে কোন ত্রুটি ছিল না। তারা মেহুলের সঙ্গে কর্ণের বিয়ের প্রস্তাব রাখেন।
: আমি এ যুগের কর্ণ। শাড়ি খোলার বদলে শাড়ি পড়িয়ে দিতেই ভালবাসি। মেয়েদের ওপর অত্যাচার দেখে হাসি না। শাস্তি দিই। আমি কর্ণ। আমার আসল মা বাবা এই বেহেরা দম্পতি। জাতিতে মেথর। নালা থেকে কুড়িয়ে মানুষ করেছে আমাকে নিজেদের সবটুকু দিয়ে।
ঘামতে শুরু করেছেন মেহুলের বাবা মা। নমস্কার করে উঠে যান। হয়তো ঘরে ফিরে স্নানটাও করবেন।
এসেগেল রবিবার। বেলা প্রায় দশটা নাগাদ একটা সাদা অ্যাম্বাসেডর এসে থামে। গাড়ি থেকে নেমে আসছেন যারা তাদের মধ্যে মহিলা কর্ণের চেনা।
কর্ণের ওষুধের কোম্পানিতে ফোন করে তার বর্তমান ঠিকানা জোগাড় করেন। কর্ণ অবাক হয়। আন্দাজ করার বয়স তার হয়েছে। কোন ভণিতা না করেই তিনি জানান কর্ণ তার সন্তান। হে ভগবান! বুধিয়া পড়ে যাওয়ার আগেই ধরে ফেলে কর্ণ। মনীষা ব্যাগ থেকে একটি ছবি বের করে। কর্ণের বাবার ছবি। কিন্তু ওর সঙ্গে মনীষার বিয়ে হয় নি। যেন কর্ণের জেরক্সকপি। সঙ্গের ভদ্রলোক এতক্ষণে মুখ খুললেন।
: আমি সব জানি। মনীষা তোমাকে দেখেই চিনতে পেরেছিল। আমরা নিঃসন্তান। তুমি কেন এখানে থাকবে? আমাদের সঙ্গে চল। ছোটবেলার একটা ভুলের জন্য ক্ষমা করে দাও।
বুধিয়াকে জড়িয়ে ধরে কর্ণ খানিক হাসল। অভয় দিল মা বাবাকে।
: আমার নামটা একদম ঠিকঠাক। ভিক্ষা চাইছেন? কিন্তু এটা তো কলিযুগ। আমি ভিক্ষা দিতে পারব না।
নিজের সব রাগ ক্ষোভ উগরে অপমান করে দূর করে দিল। ” শালা। ফূর্তিবাজ মাগী।”
কয়েকমাস বাদে দেখা রাখালের সঙ্গে। ওর মুখে যা শুনল থ হয়ে গেল। মেহুলের সঙ্গে রাখালের বিয়ে! আরও শ্লেষাত্মক যে ছোটজাত বলে কর্ণকে নিমন্ত্রণপত্র দিতে পারল না। চাবুক মারল যেন কেউ।
জাত, জাত আর জাত। ছোটথেকে এই শব্দ কর্ণকে তাড়া করে ফিরেছে। বড়বাজারের সেই মেয়ের সঙ্গেই বিয়ে হল কর্ণের। সুখে আছে তারা। বাবা মা আজ নেই। চুলে পাক ধরছে।
এখনো যখন সারা পৃথিবীতে এই বর্ণ বৈষম্যের খবর দেখে, অবাক হয়। আজও আমরা মানুষ হই নি।Brutal World.
শেষ করে দিচ্ছে পৃথিবীর ভারসাম্য। সোশ্যাল মিডিয়া ভাইরাল করে এই দুঃখজনক ঘটনাগুলোকেই। এগুলো পণ্য নয়। অত্যাচার কি পণ্য হয়? এখনো দক্ষিণ ভারতে তামিল ব্রাহ্মণের প্লেটে দেওয়া হয় কলাপাতা। সামাজিক বৈষম্যের এইরূপ বদলাবে কি?
Posted in: July 2020 - Cover Story, STORY
Khub Bhalo laglo…amader samaj-er bastob chitro phute utheche…