পূবালী রাণা-র কবিতা

কানামাছি

অতীতকে তোমার মনে পড়ে দিগন্ত? মনে কি পড়ে আলপথ ধরে হেঁটে যাওয়া ক্ষেতখামার ? কুমড়োফুলে গন্ধ হয় না তুমি বলেছিলে। আমি বলেছিলাম, গন্ধ থাকুক বা না থাকুক সব ফুলই পরাগি। ফল দেওয়া নিয়তি।
এখন আমার তো দুচোখ বাঁধা। কোন অদৃশ্য শক্তি বেঁধে দিয়েছে চোখ। আমি হাতড়াচ্ছি , কাউকে ছুঁয়ে দিতে চাইছি। এমন অপদার্থ কানামাছি খেলা শেষই হচ্ছে না। কিন্তু কাউকে পাচ্ছি না যাকে আমার চোখ বাঁধা অবস্থান দিয়ে হেঁটে যাব নদীর দিকে।

অতীতকে আমার আর মনে পড়ে না দিগন্ত। চোখের সামনে ভেসে ওঠে শুধু খান কয়েক ব্যর্থতার ছবি। আমার নগ্ন যোনীকঙ্কাল আমাকে দেখেই হেসে ওঠে। আমার কঙ্কাল আমাকে আদেশ করে। আমার হাড় রক্ত খেতে খেতে বেঁচে থাকে। আমি তো কিচ্ছু চাইনি। একবার আর পরিযায়ী শ্রমিকের মিছিলের পা মেলাতে চেয়েছিলাম। দলিত কৃষকের ফসলের ক্ষেতে গিয়ে সাহস দিতে চেয়েছিলাম যে, ওদের পুলিশের বুলেট তোমার হাসিটির চেয়ে কম ক্ষুধার্ত ।

আদৌ কি অতীত বলে আমাদের কিছু ছিল? শুধুই অন্ধকারে পাক খেয়েছি গোলকধাঁধা মতো। তারচেয়ে এই ভালো। আলো অন্ধকারের এই খেলা। চোখ বাঁধা থাকলেও সয়ে যাবে এই অন্ধকার। কোনো এক যাদুকরের স্পর্শে আমরা আস্তে আস্তে এগিয়ে যাব আলোর পৃথিবীর দিকে।

আমার এই নগ্ন চোখে পৃথিবী রাক্ষসের মতো। সেই রাক্ষস আমাদের বর্তমান খেয়েছে, অতীত খেয়েছে, ভবিষ্যৎও খাচ্ছে এখন। কোন দিকে যাবো দিগন্ত? তুমি কি বুড়ো হয়ে গিয়েছ? দৃষ্টির যেখানে শেষ হয়, সেইখান থেকে তো তোমার শুরু। তুমি কি নতুন ভোর শুরু করতে পারবে আর একবার?

Facebook Comments

Leave a Reply