মণিদীপা সেন-র কবিতা
এই সমস্ত চেঁচামেচিকে, চিয়ার্স!
আমাদের ঘরে ইঁদুর বাড়লে একটা ছোটো খাঁচা পাতা হয়। সাথে খানিকটা লোভ বা ক্ষুধা। এই দুইয়ের মাঝে একটা সরু লোহার আংটা। তার জিভটাই আসল। সেই ডাকে। অস্থায়ী প্রাণী ছুঁলেই পরিত্রাণের শরীর মুচড়ে ওঠে, ঝপ করে বুজে যায় জোর করে খুলে রাখা দুয়ার। তারের ফাঁকে সব দেখা যায়। শ্বাস নেওয়া যায়। শুধু ফেরা যায় না।
এক রাতে ইঁদুরটা পড়ল। পড়েই দারুণ অবাক। এ কী জায়গা! খাবার ছিল। ক্ষিধে ছিল। এলাম। এবার বাড়ি নাকি এটাই। এটাই নাকি দেশ! সে চেঁচালো। সারারাত, সারাক্ষণ চেঁচাল- তার দেশ চাইনা, মাগনা খাবার চাইনা। তাকে শুধু ফিরতে দেওয়া হোক। মানুষের মত শুয়োরের বাচ্চা সে বলেনি। খানকির ছেলেও না। মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণীসমাজে খানকি বলে কিছু হয় না।
কেউ তাকে মুক্তি দিল না। কারণ তখনও রাত। সবাই ঘুমাচ্ছে। ইঁদুরটা অনেকক্ষণ চেঁচিয়ে ক্লান্ত হয়ে গেল। তারপর চুপ করে গেল৷ সে জানত সকাল হতে অনেক দেরী। সে জানত, মানুষ আর ইঁদুরের রাতের দৈর্ঘ্য সমান নয়।
তবে জেগে ছিল একজন। আমি। আমি বুঝলাম ইঁদুরটা প্রতারিত। খুব সূক্ষ্ম প্রতারণা। সে বোঝেনি। আমি একটা সিনেমা চালালাম। একটা খাঁচায় মানুষখেকো মানুষ, মানুষ ধরে রেখেছে।
সকাল হলে ইঁদুর শুদ্ধু খাঁচাটা বের করলাম। তখনও সে চেঁচাচ্ছে। তাকের কোণে তাক করে দরজা খুলে দিতেই লাফ দিয়ে মিশে গেল, চলে গেল যতটা আড়ালে গেলে তার বাসা পাওয়া যায়! না ধন্যবাদ সে দেয়নি। মানুষ ছাড়া দুঃখিত বা ধন্যবাদ আলাদা করে কোনো প্রাণী বলে না।
আমি চাই আমার মতো আরও কিছু আমি জাগুক। ইঁদুরের কলোনিতে এক একটা খাঁচাদেশ খুলে দিক। আমি চাই প্রতিবাদ চলুক। চেঁচামেচি চলুক। এই লম্বা রাতে সবাই ঘুমালেও কেউ না কেউ, কোনো না কোনো আমি ঠিক জেগে থাকে। শুনতে পায়। তারা দরজা খুলতেই জন্মায়। তারা ধন্যবাদকে সখ্যতার পূর্ণচ্ছেদ ভাবে তবে প্রকৃত কৃতজ্ঞতায় তাদের গায়ে কাঁটা দেয়। চোখে জল আসে। সে প্রকৃত মানুষ। মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী অত্যন্ত ভালোলাগায় স্বচ্ছভাবে কাঁদতে পারেনা।