ঝুরোগল্প : কাজল সেন

সন্দেহ

সন্দেহটা গোড়া থেকেই ছিল চন্দ্রলেখার। অতসীআন্টি একই কথা বলায় সন্দেহটা আরও পাকাপোক্ত হলো। কিন্তু অতসীআন্টির তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নাক গলানোয় রীতিমতো অসন্তুষ্টও হলো চন্দ্রলেখা। এটা তো একান্তই তার ব্যক্তিগত সমস্যা! তাহলে অতসীআন্টির কেন এত শিরঃপীড়া? হ্যাঁ, একথা ঠিক যে তার বিয়ে করা বর স্বপ্নিলের পরকীয়ার ব্যাপারটা বিয়ের আগে তার জানা ছিল না। বিয়ের পরও প্রথমটা জানতে পারেনি। তবে স্বপ্নিলের কিছু আচরণে তার মনে একটা সন্দেহ জেগেছিল। মনে হয়েছিল, স্ত্রী হিসেবে তাকে খুশি করা ছাড়াও স্বপ্নিল আরও কাউকে খুশিতে রাখার জন্য ব্যস্ত ও ব্যগ্র থাকে। তবুও যেহেতু চন্দ্রলেখার কাছে কোনো ‘আই উইটনেস’ প্রমাণ ছিল না এবং তখনও পর্যন্ত অতসীআন্টি তাঁর ‘আই উইটনেসে’র খবরটা চন্দ্রলেখাকে পৌঁছে দেননি, তাই চন্দ্রলেখাও স্বপ্লিলকে মনে মনে সন্দেহ করলেও সন্দেহের কথাটা মুখে উচ্চারণ করেনি। কিন্তু সন্দেহটা যখন থেকে অতসীআন্টির কথায় পাকাপোক্ত হয়ে তার মনের ওপর চেপে বসল, তখন সেই চাপে চন্দ্রলেখা দিশেহারা বোধ করল। সে ঠিক বুঝে উঠতে পারল না এবার কী করবে! একটা সারাদিন ও রাত খুব গভীর ভাবে ভেবে দেখল, কী করলে ভালো হয়! প্রথমত সে স্বপ্নিলকে অভিযুক্ত করে কান্নায় নিজেকে ভাসিয়ে দিতে পারে। তার কান্না দেখে হয়তো নিজের ভুল বুঝতে পেরে স্বপ্নিল সংযত হতে পারে। দ্বিতীয়ত স্বপ্নিলকে অভিযুক্ত করে সে চন্ডাল রাগে ফেটে পড়তে পারে। সেই রাগে ভয় পেয়ে স্বপ্নিল তার পরকীয়ায় রাশ টানতেও পারে। তৃতীয়ত স্বপ্নিলকে অভিযুক্ত করে দাম্পত্য সম্পর্কে ইতি টানার হুমকি দিয়ে মা বাবার কাছে চলে যেতে পারে। সেই হুমকিতে ঘাবড়ে গিয়ে স্বপ্নিল ভাবতেই পারে যে, বিবাহ বিচ্ছেদের পরে চন্দ্রলেখাকে প্রতিমাসে মোটা খোরপোষের খরচ দিতে হলে পরকীয়ার খরচ টানা আর সম্ভব হবে না। কিন্তু চন্দ্রলেখার মুশকিল হলো, যেহেতু অতসীআন্টির নাকের উচ্চতা কম হওয়া সত্বেও অন্যের ব্যাপারে নাক গলানোর বিশ্রী প্রবণতা আছে এবং চন্দ্রলেখা তা সহ্য করতে পারে না, তাই অতসীআন্টির সঙ্গে তিনটি অপশনের মধ্যে কোনটা বেছে নেওয়া ঠিক হবে, তা আলোচনা করার আদৌ কোনো ইচ্ছে নেই। অন্যদিকে চন্দ্রলেখা কোনো সমস্যার মুখোমুখি হলে নিতান্তই ধীরেসুস্থে সেই সমস্যা গভীরভাবে ভেবে দেখতে পারে এবং কীভাবে সেই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারে তার বিভিন্ন সম্ভাবনাগুলো মানে একাধিক অপশন মনে মনে সাজাতে পারে, কিন্তু কোনো একটা অপশন বেছে নিতে গেলেই একেবারে ল্যাজেগোবরে হয়ে যায়।

কিন্তু তাই বলে তো আর চুপচাপ বসেও থাকা যায় না! কিছু তো একটা বিহিত না করলেই নয়! চন্দ্রলেখা ভাবতে থাকে। গভীরভাবে ভাবতে থাকে। তিনটে অপশনকেই আগাপাস্তালা চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে থাকে। কিন্তু যত বেশি ভাবতে থাকে, ততই গন্ডগোলে জড়িয়ে পড়ে। শেষপর্যন্ত তার সব রাগ উথলে ওঠে অতসীআন্টির ওপর। এই অতসীআন্টিই যত নষ্টের গোড়া। বেশ তো মনে মনে সন্দেহ পুষে রেখেও চন্দ্রলেখার দিন কেটে যাচ্ছিল। অতসীআন্টি আগ বাড়িয়ে নাক গলিয়ে সব ভন্ডুল করে দিল!

Facebook Comments

Posted in: July 2020, STORY

Tagged as: ,

Leave a Reply