নব জেন গল্প – জুমাচিং ও তার টিয়া হৃদিপাং লিং : জুয়েল মাজহার
এক পার্বত্য গ্রামের বোকাসোকা এক লোক। নাম জুমাচিং বো। সে লোকের ফুটফরমাস খাটে। আর আনন্দগাছের ফল কুড়িয়ে খায়।
একদিন ভিনগাঁয়ের একজন তাকে ডেকে বললো, আমার গাধাটি অসুস্থ। কাল সকালে তুমি একটি বস্তা উত্তরের পাহাড়ে বয়ে নিয়ে যেও। বিনিময়ে তুমি পাবে একশো করতালি।
জুমাচিং আনন্দে লাফাল। তার একটি টিয়াপাখি আছে। নাম ” হৃদিপাং লিং”।
সেটিকে সকালে খাঁচায় না পুরলে আর বিকেলে খাঁচার বাইরে বের করে না আনলে মরে যাবে।
গাঁয়ের লোকের সামনে উঠানময় না নাচলে,
নিজের ঠোঁটের গরিমা ও ডানার রঙবাহার না দেখালে তার হৃৎস্পন্দন থেমে যাবে।
প্রশংসা ও সমবেত করতালিই টিয়ার খাদ্য।
এটাই টিয়ার ভাগ্যলেখা।
একথা সে ভিনগাঁয়ের লোকটিকে খুলে বললো। লোকটি জবাবে বললো, নিশ্চয় নিশ্চয়।
জুমাচিং মনের খুশিতে
পিঠে বস্তা চাপিয়ে
দুর্গম উঁচু পাহাড়ের দিকে
“মনচিউন চিঁও-চিঁও”
নামের স্বলোকগীতি
গাইতে গাইতে পাকদণ্ডি পথ বেয়ে চলে গেল ।
কিন্তু প্রবল তুষারঝড়ের কারণে ফিরতে দেরি হলো তার। দ্বাদশ দিনের রোদঝলমল বিকেলে ফিরে এসে সে দেখল তার পোষা টিয়া হৃদিপাং লিং উঠানে নেই। নাচও নেই। গাঁয়ের লোকেদের কেউ-ই নেই হাততালি দেবার জন্য। সবকিছু সুমসাম। টিয়ার বদলে একটি লাল ফল ফেটে পড়ে আছে; আর এর ভেতর থেকে লকলকে মাথা নেড়ে চলেছে একটি লম্বা শূঁয়াপোকা।
জুমাচিং ঘরে গেল। দেখল টিয়া হৃদিপাং লিং চিৎপাত হয়ে মরে পড়ে আছে খাঁচার ভেতরে। তার ঘাড় ঢলে আছে। ভিনগাঁয়ের নিশানায় তার বুজে যাওয়া চোখ ঘুরে আছে—- যেন চিত্রার্পিত।
সে ছুটল ভিনগাঁয়ের সেই লোকের বাড়ির দিকে। পথে সর্বজ্ঞ এক জেনগুরু তাকে থামিয়ে বললেন:
এ মুহূর্তে ভিনগাঁয়ে গমন বৃথা। যে জবাব তুমি চাইছ তা মুদ্রিত তোমার মনে। বহুকাল আগেই। আর তা তুমি মন্দিরের খিলানে উঠে তাকালেই দেখতে পাবে।
জুমাচিং মন্দির-খিলানে উঠে দূরে তাকিয়ে দেখল ১১দিন আগের দৃশ্য।
ভিনগাঁয়ের লোকটি ওইদিন বিকেলে ছুরির ডগায় ফল গেঁথে বন্ধুদের সঙ্গে নৃত্যে মশগুল।
জেনগুরু বললেন:
# অপরের মৃত্যুও গৌণ,
নিজের ব্যসন ও আনন্দের কাছে।
# একেকটি বাতাসের ঢেউয়ের অভিমুখ ভিন্ন।
টিয়ার মৃত্যুর এবং ছুরির ডগায় ফল গেঁথে নাচের।
Posted in: July 2020 - Cover Story, STORY