অরিজিৎ পাঠক-র কবিতা

দেওয়াল

রাস্তার দু’পাশ অন্ধকার হয়ে এলে
ভারী মিলিটারি ট্রাকে করে
শহরে পৌঁছল এসে পরবর্তী যুদ্ধের রসদ
যারা যুদ্ধকালীন ত্রাণ পেতে চায়
আর যারা ত্রাণ দেবে বলে ভেবেছে
তারা সকলেই যুদ্ধবন্দীদের সাথে পা মিলিয়ে
মোটা কাপড়ে ঘেরা পলিথিনের ছাউনি দেওয়া
অস্থায়ী সৈন্যশিবিরের দিকে চলেছে
আমি নিজেকে ছাড়া কখনো শত্রু ভাবিনি কাউকে
ওরা আমাকে ত্রাণ দিতে এলে
আমি সদর দরজা বন্ধ করে
ক্রমশ দেওয়ালের দিকে সরে যাই
গভীর রাতে সাইরেন বেজে উঠলে
আমি নিকষ কালো দেওয়াল আঁকড়ে ধরে
রঙীন সকালে যুদ্ধহীন বাঁচার কথা ভাবি ।।

হে আকাশ… শূন্যপ্রভা

শোকভস্মে ওষ্ঠপুট ছোঁয়াতে পারলে
তবেই জ্বল্যমান মেঘ হওয়া যায়
তীক্ষ্ণ নখের ডগায় যারা বেদুইন সাজে
তাদের জন্যে মদিরাক্ষী আকাশ মেলে ধরে
শেষ বিকেলের সোনালী পাখসাট

বাকি সিদ্ধসময় জুড়ে আকাশ তো আগুনআখর
দুহাতে জড়িয়ে থাকে সন্তাপের বিশল্যকরণী
দিগন্তের পরিত্যক্ত ধ্যানগুহায় বেধে রাখে
ধোঁয়া ধোঁয়া রোদবাষ্পের পাথর ময়াজম

এত যে আলোকিত শূন্যগর্ভ
যাকে উপাস্য সত্য বলে মেনেছি চিরকাল
অনন্ত উজ্জ্বলতার মায়াবী রূপটানে
আমাকে অষ্টমার্গের সন্ধান দিলে
বলো, কিভাবে সেই স্পর্শসুখ উদ্ভিন্ন করি ।।

তীরন্দাজ

সাদা রঙের চালচিত্র জুড়ে
এখন সন্ধ্যারতির সময়
আমি একটা একটা করে তীর হাতে নিয়ে
যত্ন করে গুছিয়ে রাখছিলাম তুণীরে
অনবরত কানের পাশে শীৎকারের আওয়াজ
আমাকে বিরক্ত করছিল বারবার
অগত্যা তীর ছুঁড়তেই হলো শব্দভেদী লক্ষ্যে
প্রথমে তেমনটা বুঝিনি
সাদা চালচিত্র কেন এমন লালচে হয়ে উঠছে
সমবেত উলুধ্বনির শব্দে বুঝতে পারলাম
চালচিত্রের পিছনে দুটো হরিণ আঁকা ছিল ।।

Facebook Comments

Leave a Reply