অনিন্দিতা গুপ্ত রায়-এর কবিতা

উড়ানলিপি

এক ##

মেনে নিতে না পারার নাম হয় অবিশ্বাস আর  ডানা মোচড়ানো পাখি এলোমেলো উড়ে যায় সন্ধ্যা  পেরিয়ে। অথচ শস্যখেতের বাদামী সবুজ জানে ওই ঘুঙুর এর মত বেজে ওঠা একেকটা শব্দ ভাগ করতে চাইনি কোথাও…হালকা তুলোর মত যাদের আজ মুঠো খুলে উড়িয়ে দিলাম! সাদাকালো থেকে গলে পড়ে যাচ্ছে সব খিদে তেষ্টা এইবার। খাঁচার জন্য কখনো কোন গান লিখিনি আমি, বরং অক্ষরেরও ডানা লেখা হোক? 

দুই##

সোনালী হরিনছানার গল্প রাস্তা হারিয়ে ফেলে, রোদ হারিয়ে ফেলে, চোখের কাজল হারিয়ে ফেলে এমনকি চোখ হারিয়ে ফেলে অন্ধ দৌড় শেষে পাহাড়তলি অবধি পৌঁছে দেখে প্রস্তরীভূত দুই পা। তার নাম কখন বদলে গেছে ঘুমের ভিতর। দৌড়পথে অজস্র কাচের গুঁড়ো ঝকঝকে আয়না হয়ে যা ছিটকে দিচ্ছে তা আসলে প্রতিবিম্ব নয়। স্থবিরতার গল্প পেঁচিয়ে উঠেছে শরীরে, হাঁ করে গিলে নিচ্ছে ভেষজ গন্ধের ভোর। মঞ্জুরীকৃত সব অপেক্ষা সহ্য সীমায় ঠেলতে ঠলতে আলো তার গা থেকে ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলছে অলংকার, নিভে আসার আগে। অন্ধকারের ভিতর চোখ সইয়ে নিলে ত আর দৃষ্টিহীনতার গ্লানি নেই, বল?

তিন ##

যে দীঘির সজলতা মেঘ এঁকে এতটা প্রবল, তার গভীর থেকে বিন্দু বিন্দু বাস্প উড়ে ভেসে অন্য কোথাও। নিশ্বাসের মৃদু ওঠাপড়ায় নৈ:শব্দ্য ঘন হয় আর ভাবো—‘চলে যাচ্ছি’ বলে ওই তো কিছু পথ গিয়ে ঘুরে তাকাবেই হাওয়া! মোরগটি জানে শুধু আসা বা যাওয়ার গায়ে স্থির কোন বিন্দুর অভিমুখ নেই।

চার ##

বিচলনশূন্য গাছের মত স্থির হতে পারি। পাতার যতটুকু মর্মর, তা খুব একান্তে কিছু পতঙ্গ স্পর্শে পায়। কাঠচাঁপার হলুদে একবিন্দু জলে লেখা সকাল।  একেকটা ঘোষণার গায়ে ডাকটিকিট সেঁটে অনির্দিষ্ট পথে তাকে উড়িয়ে নিয়ে যায় সময়। যতিচিহ্ন ঘষে ঘষে মুছতে গিয়ে পৃষ্ঠার সাদা ঘোলাটে হয়ে ওঠে, রুক্ষ হয়ে ওঠে। ওই গড়িয়ে আসা বাক্যের ভিতর আটকে পড়ি আর বেরোতে চেয়ে হাবুডুবু শ্বাসরোধ সহ্য করি খুব। সে তোমাকে খুঁজতে গিয়ে পথ হারিয়ে ফেলছে নাকি তুমি পথ খুঁজতে গিয়ে তাকেই—!

খননের পর পড়ে থাকা গর্তে ঘোলা জল। পাখিটি নদীর খোঁজে বাধ্যত ওড়ে বহুদূর।       

Facebook Comments

1 thought on “অনিন্দিতা গুপ্ত রায়-এর কবিতা Leave a comment

  1. অনিন্দিতার কবিতা, বিন্দুর গভীরতায় সাগরের সৃষ্টি। শুভেচ্ছা।

Leave a Reply