অভিরাজ চক্রবর্ত্তী-র কবিতা

পৃথিবীটা গোল

সন্তান কাঁখে নিয়ে
যে আদিবাসী মেয়েটা
বাড়ি বাড়ি দিয়ে যায় ফুল
গতজন্মে নাকি সে ছিল ক্রীতদাসী
দেহপটে নির্মম অশ্বারোহী চাবুক
কলমি লতার মতো শুয়ে আছে অনন্ত দহন

পড়ন্ত বেলায় কালো মা আমার
মাটির চুলায় জ্বেলেছে আগুন
জমাট কালো হাড়িতে ফুটছে ক্ষুধা
কচি-কালো হাতে সন্তান তুলে নেবে সাদা ভাত
অবাক্ চলচ্ছবি–
পাঠ্য পুস্তকে মুদ্রিত হবে কুৎসিতের উপমা

বদলে যায় ভাষা, বদলে যায় নদীপথ
বদলে যাচ্ছে ক্রমশ মুখোশের রঙ
দূরান্তিক মাস্তলে খেলে যায়
শতাব্দী প্রাচীন নীলাভ বাতাস
শুধু ভিন্ন প্রেক্ষাপটে
লেখা হয় বৈষম্যের ইতিহাস

বোধন

কুয়াশাবৃত্ত স্বল্প বিভায় ধীরে ধীরে জেগে উঠছে চরাচর। পাহাড়ের ঢালে সারিবদ্ধ রডোডেনড্রন জুড়ে পাখিদের মৃদু কল্লোল। ছান্দসিক নৃত্যে স্ফটিককণার মতো নেমে আসছে পাগলাঝোরা। প্রভাত এখানে যৌবনা-হরিণীর মতো। চঞ্চল অথচ স্নিগ্ধ।

অক্টোবরের জমাটবাঁধা শীতে দোকানী সিকিমী তরুণীর হাত থেকে ধোঁয়া ওঠা চায়ের পেয়ালায় নাতিদীর্ঘ চুমুক দিতেই ধীরে ধীরে জেগে উঠল কাঞ্চনজঙ্ঘা।

এক কোণে তার পঙ্গু বৃদ্ধ পিতা। শূন্য দৃষ্টি।
“স্যার, প্লিজ, লিজিয়ে না। ইটস্ মাই আর্ট। আই নিড টেন ল্যাখ। ট্রিটমেন্ট কেলিয়ে।”
মুহূর্তেই আদিগন্ত ঢেকে দেয় অনন্ত মেঘরাজি।
পেয়ালায় ধোঁয়া উঠছে ….
সমতলে তখন মায়ের বোধন

Facebook Comments

Leave a Reply