তমোঘ্ন মুখোপাধ্যায়-এর কবিতা
শিকার
কাচ ও দেওয়ালের মাঝে শুয়ে আছে যেসব পেন্টিং,
তাদের ফ্রেমের কাঠ জঙ্গলের ইতিহাস জানে?
শেয়ালের দাঁতের গায়ে খরগোশের মাংস যেটুকু,
গাজর-খুনের কটু গন্ধ তার থেকে নাক ছুঁতে আসে।
যে-যার অভয়ারণ্যে হাঁসডাকা ডেকে ডেকে
নধর রমণী নিয়ে যাই। রমণী ঘাসের পেট দাঁতে ছিঁড়ছে;
ওহ্, সুড়সুড়িতে রুহ্ কেঁপে ওঠে! একটু পরে সন্ধে হবে,
জ্বলে উঠবে বাঘ-বাঘ চোখ। আবার থাবার নিচে
এক মাসের অপূর্ব খোরাক। পিঁপড়ে বোঝে এঁটোর মহিমা।
অথচ ফ্রেমের কাঠ এসবের কিছুই জানে না।
সে শুধু রয়েছে ঘিরে মুনিপুত্র : মৃত আর্টপেপার।
অদূরে তুলিটি শুয়ে… শব্দভেদী, বোকা দশরথের।
নাভিচিহ্ন
আলো ঘুরিয়ে কোন মুখ দেখি? পাথুরে শুশ্রূষা হয়ে
প্রেম নাম্নী অলীক এসেছে। আসন দেহজ মাঠ,
এসো, বসো, শবমাংস খাও।
জোনাকিময় একটি ক্ষেত সারারাত্রি টর্চ দ্যাখায় বাদাড়ে—
অভিসারে প্রেতগন্ধ। কটিদেশে ঘষো মহুলফুল।
উন্মুখ তো ছিলই দেহ। একটু যা আচমনের ঢঙ বাকি।
আলো নাচিয়ে দেখি কোন চোখ? কৃষ্ণ অন্তে গহ্বর,
গহ্বর বলে গীতা সারাৎসার। মানবচক্রে সূর্যমুখী,
ঋতুচক্রে নারী সৌম্যগাছ।
আমরা শুধু স্তব জানি। অথচ স্তবের রক্তে সাঁকো এঁকে দিলে
শেষরাত্রে নেমে আসে স্বর্গীয় ইঁদুর।
জবাকুসুম সৌরমুখ রাত মেরে দ্যাখে—
ব্যক্তিগত কুশপুতুল ছড়িয়ে আছে ছিন্নভিন্ন মাঠে।
নাভি বলতে যা বুঝি একটিতেও সে-চিহ্ন লেগে নেই…
সংবেদ
দুটি পা এমন শত্রু সমঝোতায় হাঁটেনা এখনও
বিপরীতে আলো ছুঁড়ে সমার্থক কালোটি নিকষ
চোখের স্বভাবে যত মুশায়েরা দৃশ্যের ক্যাডার,
পদ্যের তত বেশি নয়
ছেনি জানে অজাচার পাথর ও মূর্তির
অটিজ়মের
ইদানীং ধূপ জ্বললে মনে পড়ে ঈশ্বরের রোগ
ঘিলুর দ্রিঘাংচু ওঁর বাঙ্ময় অভিমানে চাপা;
কর্নিয়ার মতো,
গান্ধারীর
পরিবার
ফুটে ফুটে
চুঁয়ে গেছে
হাঁড়ির থলিতে
হাতার কানাচ দিয়ে
কুড়ে কুড়ে কুড়ে
উঠেছে যেটুকু
তাতে মাখা পিতৃচর্বি
ম-ম করছে থালা
মায়ের বোঁটার গালে কচি ফুস্কুড়ি
নিচে
অ্যালুমিনিয়াম বালতিটি হাঁ
কোমরে বসলে মাছি
ল্যাজ ঝাপটে তাড়াচ্ছে
ধনেখালি
হুই উঁচু অনন্ত উঠোনে
গোবর-ন্যাতাটি
সন্ধে মোছে…