স্বপন রায়-এর কবিতা

স্রোতোস্বঃলা

নদী

জল আমার চোখও আমার
জলপাই এমন রং
দেখলেই দেশ চিন চিন করবে
সেই প্রথম যেবার গল্পটা ভারী হয়ে গেল
কী বৃষ্টি
আকাশহানা
সেদিন থেকে আজ অবধি কাঁটাতারের নিরালা বুলেটে
রাগ সেরেব্রাম
ও রাগিনী,আমার তো হাঁসের বেওসা ছিলনা, ছিল এক দিব্য এনফিল্ড
গিডি গিডি গিডি গিডি

নদী থাকলেই টা এটা টাটা ওটা কেমন জলোমতী
আমি এক প্রবেশ্য
তুমি অবশ্য ইথারঞ্জিত স্কুটিতে
এইতো মুভির কারসাজি ঢোকার জন্য একটাই হৃদয়
টাটা টু মাঠাবুরু ইথারে আমার পটানোঘাঁটানো তরঙ্গগুলি
শব্দ হয়
লি লি
বাঙালিই এই রোগা টোকামারা খাল কেটে নিয়ে আসে
কেল্লা ভাসে
তিতুমীর কী আর করবে একঝাঁক কুমীর এলে,কোথায় রাখবে
চোখহারা জল
জলকাড়া চোখ
আর তুমি এই অর্থব্যবস্থার বাইরেই কীভাবে যেন চালাচ্ছ
স্কুটি
আমি এনফিল্ড
যেন কোথাও কোনও ছাদাকাশ নেই
বুলবুলি নেই যে তারে বসবে
শিস দেবে
তুমিও সানগ্লাস নামিয়ে
বলবে
শিস আর বলার গাধোয়া রঙ আজ আবার সুবর্ণরেখা্য ট্রেন পেরোবার শব্দে কেঁপে গেল
এরই নাম প্রেম
মান্না দে গাইলেন

জল

নদী যে বিয়োগে এক বিরোধী
মস্তদিল
বইতে জানলে মাইল মাইল অববাহিকার
জানলেই পাখির দামে আকাশ বিলি শুরু
আমার চক্ষে চোখকে
চোখের খেলায় কী এক অস্ত্রে পড়ে শান
মণি
রিংটোনে ঢুকে যায়
নদী বুকের একপেশে গুল্ম
আমি ঘড়িতে লাগাই
টিকটকের বদলে ঢিপ ঢিপ
শব্দ
মোহ বানায় চোখে, বানায় নৌকোবাসার গান
কলকলোচ্ছলতান
গঙ্গা আমার মা
তো,তিস্তাও আমার মা
ঘাট দেখা যায় আমি তো আঘাটার ছেলে
মায়ের পা ভেবেছি
জলকেই
স্রোতগুলো ক্ষয়ে যাওয়া আঙুল
ওঠে
নামে
মা চলে যাচ্ছে তাই এই জল
কী খেলা যে এই নালিখিত কাশ-আ-কাশের
ছুঁলাম
ডুবে গেলাম

স্রোত

ফেলা আলোর শেষে পাখিসাঁ বিকেল
সিঁথি না হলেও
কপট একটা রোদে শাঁখাশাঁখা হাহাকার
যেন বলত
কেন বলত
কিনারায় থাকা এক ঘনঘোর বাড়ি
বসুগুপ্ত কথা
শিরিণা নামের কেউ গান গাইত

পা বাড়িয়ে নাধরার বাহানা
জল থাকে বলে
স্রোতও
শোক
চাপা চাপা জঙ্গলে
উঠোনে পাতা রোদে
ইকড়ি টাইপ
মিকড়ি হাইপ বোনে
আজ তো জলেরই দিন
শ্রাবণ আজ খুলবে

বৃংহণ
বনরক্ষীরা পাশের জঙ্গলে
একটা শব্দ না আরো বেশি
জঙ্গল ভাবল না
পোচাররা তৈরি হয়েই আসে
হাতি,গণ্ডার,বাঘ,ভাল্লুক,সাপ,মানুষ
পোচাররা টায়ারের দাগে এই শব্দগুলো পিষতে পিষতে আচমকা ব্রেক,আলো অফ, আসছে
কালো স্ক্রিনে অন্ধকার
অন্ধ
কার আছন্ন ছিন্ন কা র ছি
দাঁত খুলে নেওয়ার সময় হাতির বেগানা জীবন ছটফট
ভেঙে গেল শব্দ
একা
খুব একা এই বনের ভাবনা নেওয়া শোক
শ্লোক
বা সুর হয়ে শিরিণের গলায়
কাটা দাগ
দেওয়ালে লেখা ছিল না যে বিপ্লবের বাবা এখানে গণসংগীত গাইতো
বিপ্লব হারিয়ে গেছে

নদী

ফেরার সময় এক বোতল চাঁদনি
রোস্ট করলে স্টার্টার
ডায়না কাঁদল,নদী হয়ে
চাঁদনিকে রোস্ট করার আগে রেপ করা হয়
ডায়না একটা নদীর নাম,কাঁদল
চাঁদনিকে তন্দুরে দেওয়া হচ্ছিল, বাজেট পড়ার সময়
বাজেট সেই সূঁচ, পেছন দিয়ে ঢোকে,ফাল হয়ে বেরোতেই থাকে
দাঙ্গা হলে খুশি হয়
একটা রেপ থেকে গণরেপে
একটা ভোট থেকে কোটি কোটি ভোটে, তন্দুরের আবহাওয়ায় বইতে থাকে
একটি লোকের মহা তেজ
যে বিয়ের পরের দিনই বৌকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল
বাজেট নিয়ে যে কথা বলে
না বুঝে
যারা শোনে তারাও না বুঝে
বলে তর্ক করে
দাঁত বা সূঁচ লেগে থাকে উদার চায়ে
নৈতিক ঠোঁটে

পরে রেপ নিয়ে কথা বলার সময় ভারতীয় পুরুষদের চোখ চকচক করে
রাস্তার কুকুররা ভয় পায়
গলা উঁচিয়ে কাঁদে
ডায়নাও কাঁদে,ডায়না মেয়েমানুষ
নদ নয়
ডায়না একটা মেয়েমানুষ নদীর নাম

জল

ফুরিয়ে যাওয়ার আগে পরে তিশীল গতিশীল প্রগতিশীল
তিশিল নামই দিলাম
গ প্র ঠিকই আগে লেগে যাবে
কচুরি ভাজার সময়
আলুর খোসাওয়ালা তরকারির কারিতে
ঠিক আসবে খদ্দের
জলখাবার আর খাওয়ার জল নিয়ে এই তিশিল তো মুখপত্রই
বাঘের গন্ধ পায়
হাতির আওয়াজ
তিশিল এক আজব ডাকঘর, জড়ো করে লুপ্ত চিঠিদেরঃ

১.

ময়লা গুলির শব্দ নেই,গন্ধ আছে।এক সাহেবের লেখা।গণ্ডারটা ছটফট করেছিল।সাহেব ডিজায়ার শব্দটার নিচে দুটো মুখ এঁকেছে। গণ্ডার আর ডরোথি। ডরোথি লেখা,লাল কালিতে। (১৯৪৪)

২.

চা-বাগানে কাল মিছিল ছিল।লালঝান্ডা,খুনপিয়াসি চিতার দাগ,লালছড়ি ময়দান খড়ি, চোঙাফোঁকা পাট্টি কা বাবু, মালিককা বিবি, বিবিকা লিপস্টিক, ম্যানেজার আর বিবি, মিছিল যাচ্ছে পাশ কাটিয়ে। পুলিশ। মিছিল ফুঁসছে।পুলিশ চুপ।দাদা সামনে ছিল। এখন গ্রেপ্তার। মাথায় ব্যান্ডেজ। আজ আবার মিছিল। আমি যাবো। সুরঞ্জন আসবে না। ও ভয় পেয়েছে। (১৯৬৫)

৩.

বেড়াতে এসে প্রথম আমার হল।চাঁদ দেখা আর চাঁদনিকে…ভালবাসা তো অবসর মাড়ানো (মারানো নয়) চিতার অস্ফূট হারিয়ে যাওয়া।বিছানায় ডাক পড়ে থাকে,শিশিরে লালা।আমি আকারে ইঙ্গিত বসাই।তুমি ভাবলে ব্যবহার।তোমার স্কার্ফে কাল রাতের শীৎকারগুলো বেশ কারুকাজ এখন।আমি তো চিৎকার করছিলাম,কেন বললে?কেন আমি তোমায় এরপরে চিতার গল্প শোনালাম।বললাম,আজ আবার আসবে..(১৯৬৮)
তিশিল আগে ডাকঘর পরে আমার দোকান।
তিশিলে ভোর থাকতেই
প্র আর গ
তারা কথা বলে হাতির সুরক্ষা নিয়ে, আদিবাসিদের নিয়ে, গান নিয়ে, কবেকার চারমিনার সিগারেট তাদের কথায় ফুক ফুক করে।তিশিল প্রগতিশীল হয়।

স্রোত

ফেরোজল ফেরাজল
কলচ্ছাসোলিকারিন
চা ভাবলে চা, নয়তো মাঝির অভিমান
জলে
পুরদুপুর থেকে লেহ্য বিকেল পেরিয়ে পেয় সন্ধ্যায়
যা তিরতির করে
আলো
না চাঁদের লিকারে ধরা ভাটিয়ালি সূঁচ
তিরতির করে যা
চায়ের মাপ নেওয়া হাঁসের গলায়
গ্রীবা আর গ্রিস এই দুটো শব্দে ঘুরতে ঘুরতে
আমার খিদে পেল
স্রোত বিস্রোত
মাছে মাছে রাঙা ঠোঁটগুলি
লাইব্রেরিতে বলত,পড়ো
পা ফাঁক করে বলত, ঢোকাও
এত বলার ফাঁকে এই যে অর্থহীন
ফেরোজল ফেরাজল
কলচ্ছাসোলিকারিন
এইতো আমার প্রেম ওগো
না, এই যে তোমার প্রেম ওগো
আমার ভুল হয়ে যায়
ভাবলে না ভাবলেও একেকটা দরজায় মনে হয় ফ্রেম নেই,তুমি ছাড়া

স্রোতোস্বঃলা

বাজারের দিকে হেলানো সকাল।এত দাম।কোয়ারেন্টাইন শব্দটা সবাই জানার পরেও দাম বাড়ছে,সুদ কমছে এমন একটা সময়ে
খুব একলা একটা রোদ তিতলি হল
প্রজাপতির চেয়ে তিতলি বেটার না?
যাইহোক,উড়বে,ফরফর করবে, দাম টাম নিয়ে এই তর্কের রেশ ধরেই সাতটা রঙ ধরে উঠে যাওয়া ফ্লাইওভার
গান গাইবো?
প্রজাপতি ও প্রজাপতি
তিতলি উড়ি
একটা সকালে যে বাজার শুধু হঠাতই কুয়াশাপ্রবণ হয়ে গেল
হিন্দু মুসলমান হয়ে গেল
আমি গেয়ে উঠলাম,সব লোকে কয়
ভাটরোদ
কবাটকারবাঁ হাসছে
নদীভারানত তোমার বুকে দুধ এসেছে
মা
কারখানায় কারখানায় তৈরি করা হচ্ছে মা’কে ছুটি দেওয়ার ডানা
কারখানা যখন মন
মন যখন ভোঁ
ভোঁ এই ভোরের ভৈঁরো
মা ছেলেকে এগিয়ে দিল লাঞ্চপ্যাক
মা পেটে থাকা মেয়েকে বলল,কিক বেবি কিক
সকাল হলেই তর্কে মায়া জমে,পাখিতে সারাংশবিধুর রোলকল
‘আজ নয় গুনগুনে’র গায়ে ‘আমপাতা লাম্বা লাম্বা’
ফিউশন
বাবা,মা,ব্রেকফাস্ট
শুনছে একটা লোক কত সহজে বেচে দিল বাপ ঠাকুর্দার চোখ,নাক,হাত,পা,মাথা
লোকটা ঘুরতে ভালবাসে
খুব সখ উড়োজাহাজের
রাস্তাগুলো মেরুন হয়ে যায় বেগানা হয়ে যায়,লোকটা
এলে বা উড়লে

কোয়ারেন্টাইন,বেশ জামায় ঢুকে গেল, ঘাগরা বা শাড়িতে, একা ঘরের নসীবি হ্যাঙ্গারে ঝুলছে উপোষী পাগুলো,প্যান্টের।
লোকটার একটা বন্ধু আছে।
নিরামিষ বন্ধু।
বাঙালি, ঘরের জানলায় রাখে চিন চিন ব্যথা,মায়ের কোল খালি হয়।মিডিয়া ঝাঁপিয়ে পড়ে।মিডিয়া,মৃত্যু চায়।বলেই না যে লোকটার কন্সটিপেশন আছে।বাত আছে।
বন্ধুর গায়ে সব্জিছাড়া আলো। বন্ধুর হাতে দিনাবসানের টাকা।
তিতলি বাংলায় প্রজাপতি।
তিতলি একটি নামও যে হঠাৎ বৃষ্টি আসায় ছাতার সুষমা খুলছে

Facebook Comments

Posted in: June 2020, POETRY

Tagged as: , ,

Leave a Reply