সুদেষ্ণা ঘোষ-র কবিতা
অভিমান বা সীমাবদ্ধতা
১
কারও চলে যাওয়া দেখে কী মনে আসে তোমার?
মৃত হলুদ ফুলের পাপড়িছাওয়া বিষণ্ণ বিকেল
নাকি ট্রেনে জানলার ফ্রেমে আটকে পড়া রাতের স্টেশন?
কেন মনে হয় না নিঃশব্দ এক ছুঁচের রক্ত তোলপাড় করার কথা ছিল
কেন মনে হবে না ঘড়ির কাঁটা বেয়ে নামছে এক বেহায়া সরীসৃপ
কেন ঘন-ঘন শ্বাসকে আড়াল করে খুলে যাবে অবিশ্বাসী শিথিল মুঠো
কেন, কেন, কেন আমি বালি আর হাওয়ার গোপন সন্ধি আরও অনেকদিন
এভাবে মেনে নেব?
মেনে নেব একদম পাতাহীন গাছে ফ্যাকাশে লাল রিবনের থেকে যাওয়ার গল্প।
২
মাঝে-মাঝে কিছু কবিতা লিখে জলের নীচে ফেলে রাখি
কিছুদিন পর তাদের গায়ে জমতে থাকে মখমলি শ্যাওলা
কিছুদিন পরে তাদের ঠুকরে খেয়ে যায় জলের গভীর মাছ
তারপর তাকে অস্বীকার করে রিবনবাঁধা শা্ন্তির বিছানা আঁকড়েছি
তারপর সেই কবিতার খোঁজে একাধিক স্বপ্নের পিঠে গ্রেনেড বেঁধেছি
পায়ে জড়িয়ে ধরা গাছের হিম-হিম শরীর মনে আছে তোমার
মনে আছে প্রথম সাঁতার শিখলে ফুসফুসে কতটা চাপ পড়ে!
জলের ভিতরে সবই সবুজ, সবই বিমল, সবই শোভন…
জল প্রাথমিকভাবে অবস্থান স্পষ্ট করতে বলে।
জল খালি প্রয়োজনীয় আর্দ্রতার কথা বলে।
ক্রমশই থিতিয়ে যাওয়ার কথা বলে। ক্রমশই…
এইভাবেই একদিন কবিতা আর আমার মাঝখানে
গড়ে ওঠে জলের এক পরিকল্পিত স্বচ্ছ প্রাচীর।
আমি স্বপ্নের গায়ে বদলাতে থাকি একটার পর-একটা রঙিন পোশাক।
ইতিহাসে ভরসা রাখি, জল কখনও অযাচিত সুড়ঙ্গের কথাও বলে।
নিঃসঙ্গ বাতিঘরের গোড়ালি অপলক ছুঁয়ে থাকার কথাও।
কিংবা একধরনের লুমিনিসেন্ট শ্যাওলার কথা, যারা অন্ধকারের সংশ্লেষে জ্বলে ওঠে
একবারই আচম্বিতে।