রাণা রায়চৌধুরী-র কবিতা
তোমার ছায়ায় আলোয়
১.
নিৎসে আজ এসেছিল,
নিৎসে আমায় ভীষণ ভালোবাসে।
নিৎসের তৈরি কাগজের নৌকোয়
আমরা বসবাস করি ইদানীং।
এসো জোনাকিভরা নিৎসে
মনে হয় তোমার কানের দুলের
ভিতর হাওয়ার
হাওয়াদের হ্যাজাক জ্বলছে
আমার খিদে পেয়েছে নিৎসে
তোমার মতো যুবক যুবক রোদে
আমার খিদে বাড়ছে আরো
নিৎসে তুমি মলয়বাতাস, তুমি নিষ্পেষণ।
নিৎসে তুমি বৃদ্ধ বজ্রপাত
নিৎসে আমার আলোচোরের বাড়ি
আগুন ধরে গেছে,
নিৎসে নেভাও তুমি আমার স্বভাব,
আমার অজ্ঞানভাব নিভিয়ে দাও মা…
২.
আমি রঘুনাথপুর থেকে আবালসিদ্ধি আসতে চাই। কিভাবে যাবো কেউ যদি বলেন, বায়ুযান আর মনযান ছাড়া আর কোনো যানবাহন বা পরিবহন নেই। আবালসিদ্ধিতে একটা বটগাছ আছে। সেই বটগাছে অনেক পাখি বসবাস করে, গান গায়, ফেলে চোখের জল, তাকিয়ে থাকে মানুষের বাণীর বা মহাভাষ্যের দিকে — ফলত সেই পাখিদের চোখের জলের ছায়া —- সঙ্গে বটগাছের ছায়া— আমি যেতে চাই সে ছায়ার নিচে
ছায়াদি, পিসতুতো দিদি, তার ছায়া আমি বালককালে পেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সে ছায়া পেয়েছিল এক মদ্যপ, কামুক কেরানি, যার মাস্তুলে মাংসের পতাকা, যার হৃদয়ে আবালসিদ্ধির রুক্ষ রাস্তা
আমার হৃদয় তো নরম, তবু আমি রঘুনাথপুর থেকে আবালসিদ্ধি যেতে পারি না কেন? কেন পাই না কোনো চোখের জল ফেলা ছায়া?
হেল্প চাইছি হেল্প। মানুষের মহাভাষ্য ডিঙিয়ে, বাণী ডিঙিয়ে আমি যেতে চাই তোমার ঐ নিস্তরঙ্গ নিঃস্বতার দিকে, যেখানে শৃগাল শৃংখলা মেনে মাঝরাতে অত্যন্ত অন্ধকার খেতে আসে, খেতে আসে অন্ধকারের ছায়া
৩.
সুদেষ্ণার দেয়ালে কবিতা খুঁজি।
মাউসের বাঁদিক টিপলে তার বালিকা বয়সের
অগ্রন্থিত কবিতা পাই।
একেবারেই কাঁচা রক্ত যেন।
মাউসের ডানদিক টিপলে কলেজকালীন কবিতা। সে কবিতায় স্নিগ্ধতার ঝাঁঝ, আগুনের অল্প আভা।
এইভাবে বাঁদিক, ডানদিক (মাউসের) টিপতে টিপতে আমি সুদেষ্ণার আরো পরবর্তী
কবিতার সন্ধানে ঘুরে বেড়াই, তার জলে ও জঙ্গলে।
সুদেষ্ণার ভিতরে ছোট-বড় টিলা পাহাড় পর্বতের সঙ্গে
অনেক লাভা অনেক দাবানল অনেক জলা-জঙ্গল, অরণ্য, হিংস্র ও নিরীহ বন্যজন্তু সরীসৃপ ও দীক্ষিত-অদীক্ষিত মানুষের সমাজ আছে।
আমি সুদেষ্ণার কবিতার ভেতর, পুরো সুদেষ্ণার গহনকে খুঁজছি।
বাঁদিকের ও ডানদিকের বায়ুমণ্ডল টিপতে টিপতে আমি সুদেষ্ণার ভিতরে এগোচ্ছি।
দেখি দূরে অল্প-সুদেষ্ণা দাঁড়িয়ে আছে আরো অনেক বেশি-সুদেষ্ণার সঙ্গে।