অর্থ-নৈতিকতা : প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়
কাজ চায় কর্মক্ষম দুটি হাত। চায় সুস্থিতি। ভিটেমাটি ছেড়েছুঁড়ে দলেদলে ‘বিশেষ্য’-বিশেষের তাই এমন দেশান্তরযাত্রা; আর এই (বিশেষণী) বিবাগী প্রক্রিয়ারই তল-অতলে কোথাও নিহিত রয়েছে নিরুচ্চার পাতালপ্রস্তরের মাইগ্রেটরি টেক্টোনিক শিফট : পরিযায়ী প্রস্থান-পরিযাণ-প্রবসন-অভিবসন, সাফকথায়—যাকে আমরা বেঁচে থাকার আকুতি বলে থাকি কিংবা জীবনধারণের দুর্নিবার-দুরন্ত প্রয়াস-কৌশল-আঙ্গিক। ব্রহ্মাস্ত্র বানিয়েছি আমরা — তথ্যপ্রযুক্তির; বেঘোরে মরেছে মানুষ, প্রায় সাড়ে চার লাখ আপাতত। অতিমারীর আত্যন্তিক মারণ-ক্ষমতায় আঁতকে উঠেছি কেবল—সদলবলে। কিন্তু, প্রতি-আক্রমণে ব্যবহার করিতে পারিনি। ইন্টারমিশন কেটে গেলেই তো পর্দা উঠবে ফের। কিন্তু সদ্য ২৩ পেরুনো চালচুলোহীন, লৌহপ্রতিম গাছগুলোয় কি মর্চে ধরবে ফের? হাপর বুকের অলিতে-গলিতে বেজে উঠবে কি যক্ষ্মাবাঁশির ধুন— গতানুগতিকের এমন মোড়বদলের অনুষঙ্গে, এ জিজ্ঞাসাও থাকে যে—ওই প্রবাদপ্রাচীর ভেঙ্গে দিয়েও গ্রাম-বিশ্বে কেন ঘোচে না ফারাক?
কেউ দক্ষ, কেউ অদক্ষ। স্বল্প-দক্ষ কেউ কিংবা অতি সুদক্ষ। এই শ্রেণিবিভাজন অনুসারে শ্রম-বিভাজন স্বীকৃত। শ্রমের মূল্যমান, কাজের দায়রা, মজুরি,সুয়োগ-সুবিধা, পে-প্যাকেট, উপরি বা ঝোপড়ি, দায়-দায়িত্ব-দান-দয়ার মাপকাঠি, গলদেশের সোনালি পরিচিতি ঝোলানো হয়। শুধু বাতিল কর, খারিজ কর—এজাতীয় শ্লোগানধর্মিতার লালা-ঝোলে-জলে ভিজিবে কি আ-বিশ্ব চিড়ে? ‘না হি প্রবিশন্তি মৃগা সুপ্তস্য সিংহস্য’ …ডট.ডট.ডট.। কবি বলছেন ‘আপেল ঘুমিয়ে আছে, ওকে দাঁত দিয়ে জাগাও।’ পরিসংখ্যান বলছে—‘ভারতে শ্রমের দাম সবচেয়ে কম। শ্রমিক-ভাণ্ডার? অফুরান, অত্যন্ত বিশাল। শ্রমের দাম? যার আর পর নেই, সবচেয়ে কম। উদাহরণ? আ-বিশ্ব গাড়িশিল্পের ন্যূনতম মজুরির হার: (জার্মানি) ৪৬.৪,
(কানাডা) ৩৮.৩, (আমেরিকা) ৩৫.৪, (জাপান) ৩৫.৪, (দক্ষিণকোরিয়া) ১৭.৭, (চীন) ২.৮, আর ভারত .০৯।
(সূত্র—আন্তর্জাল, ইন্ডিয়া ব্রিফিং, ১৭/১/১৯) যে যাহা বুঝিল, তাহাই বুঝিল।
যুদ্ধ খেলব বলে ষাট হাজার কোটি টাকার রাফায়েল কিনেছি । করোনাকালেই—কিনেছি আটশো আশি কোটি টাকার ইজ্রায়েলি অস্ত্রসম্ভার। কানাঘুষোয় আগেই জেনেছি যে নেমে আসবে নাকি ঘুরঘুট্টি অন্ধকার, নিজ নিজ প্রকোষ্ঠে আসন গ্রহণ করবে দেশবাসী; চোখের পর্দায় তখন মন্বন্তরের হাড়হিম আকাল, মৃত্যু পঙ্গপাল। একটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিই বরং! কেন এত যুদ্ধাস্ত্রলঙ্কা্র? ভুসভুসিয়ে ওঠে আরো এক প্রশ্ন—তিলমাত্র পোশাকি পরিবর্তনটুকু ছাড়া উপনিবেশবাদের আদৌ রূপান্তর হয়েছে কি কোনো? উহুঁ,‘ডি-কলোনাইজেশন’-য়ের জায়গা নিয়েছে শুধু ‘রি-কলোনাইজেশন’!!! তাই বুঝি এতো স্কাড-রাফায়েল-ড্রোণ ওড়ে এশীয় আকাশে, অতি-সক্রিয় হয় সীমান্ত-ভূতেরা কাশ্মীরে-বর্মায়-বাংলাদেশে, অসীম শান্তিতে—দারিদ্র্যরেখা নামধারী ঘুনসিদাগটি পড়ে থাকে শুধু, নীবিবন্ধভ্রমে; অগুণতি সামসা পাশ ফেরে কেবল—দড়ির খাটিয়ায় শুয়ে,তৃতীয় বিশ্বে। আহা! রোজই তো নিত্যনতুন কততো সংজ্ঞা-আলোচনা, বিভা-বিভাব-বিধান, রং-রুট-পন্থা-প্রত্যয়-প্যারাডাইম, রাগ-অনুরাগ-বিরাগের সম্মুখীন হচ্ছি আমরা। সেইসব হিমশীতল অটপসি রিপোর্টে তো কবেই লেখা হয়ে গেছে যে—
সর্বজনীন হতো যদি ভারতীয় আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি, সহযোগিতা+সহমর্মিতা+সমভাবাপন্নতার আদর্শ বরণ করে নিয়ে যদি ক্ষুদ্র চাষিদের বিতৃষ্ণার কারণগুলোকে ঘোচানো যেত, রক্তাক্ত রাজনৈতিক বিপ্লবের বিকল্প–সন্ধানের অনুঘটক হয়ে
উঠত যদি সামাজিক ঐক্যের পরিচ্ছন্নতা আর তারই পাশাপাশি গ্রামীণ দুর্দশার সঠিক মূল্যায়ণ হতো, যদি অপ্রাচুর্য-দৈন্য-হতাশা-নির্জীব বদ্ধাবস্থার বিকল্প হয়ে উঠত সামূহিক আর্থিক স্বাস্থ্য অর্জনের সাদামাটা ক্ষুদ্রঋণপন্থা—অর্থনৈতিক বঞ্চনার আশু প্রতিকারের প্রয়াস, যদি ‘মুষ্টিমেয়’ সুযোগসন্ধানীর লাগামছাড়া অর্থগৃধ্নুতার সঠিক বিকল্প হতো সম্মিলিত প্রায়োগিক প্রতীতী—সমবায়িক সমষ্টি, কুয়াশাচ্ছন্ন না হয়ে উঠত যদি গ্রাম-পুনর্গঠনের স্বপ্নময়তা …
Sandra Poncet ও Nong Zhu (কান্ট্রি পিপল মুভিং টু দি সিটিজঃ দি মাইগ্রেটরি ডাইনামিক) লিখছেন যে ১৯৮০-র মাঝামাঝি পর্যন্ত গ্রামীণ মা্নুষের শহরাভিমুখী হওয়ার ব্যাপারে বিশেষ কড়াকড়ি/নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে শহরগুলোর ওপর গ্রামীণ জনসংখ্যার বাড়তি বোঝা রুখে দেয়া হয়েছিল। বস্তুত, গ্রামাঞ্চল থেকেই চীনের সংস্কার পদ্ধতিটি শুরু হয়। পরবর্তীকালে, রপ্তানি বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে সেই প্রয়াস পৌর্ণমাসী রূপ পায়। ১৯৭৯-এর আগে, শহুরে জনগণের ব্যবহার্য কৃষিপণ্যের ওপর তখন ভর্তুকি দেওয়া হত। তাই, শহরগুলোয় অন্তত গ্রামীণ লোকজনের চলে আসার বিষয়টির ওপর কড়া নজরদারির উদ্দেশ্যে অন্তর্দেশীয় পারমিট ব্যবস্থা (hokou) চালু করা হয়। পরে যদিও সেই ব্যবস্থার বিলোপ ঘটানো হয়েছিল। সেই সূত্রেই, ক্রমে, দখিন চীনের উপকূল জুড়ে কর্মপ্রার্থী মানুষের সংখ্যা ১২২.৫ মিলিয়নে পৌঁছয়। “বিশ্বের কারখানা” অ্যাখ্যা পায় চীন।
পরিযায়ী শব্দের ব্যাখ্যা দিয়ে যে লক্ষণ দুটির উল্লেখ করা হয়েছে চলন্তিকায়, তা হল—(ক্রমাগত) যাতায়াতকারী / ভ্রমণশীল। টি.ভির পর্দায় দেখেছি অসংখ্য মানুষ দিল্লী বাসস্ট্যাণ্ডে জড়ো হয়েছেন, তাঁরা পৈতৃক ভিটেয় ফেরার জন্য পরিবহনের অপেক্ষারত। ঘরছাড়া মানুষের সংখ্যা প্রায় দু-কোটি। ট্রেন-বাস-ট্রাক প্রভৃতি সবরকমের যানবাহন লকডাউনের আওতায় পড়েছে। করোনা কাম পণ্য বয়কটের আবহে আর্থ-সামাজিক সুরক্ষার প্রশ্নটিই সবচেয়ে বেশি ভাবিয়ে তুলেছে। (৮%+)বৃদ্ধির হার বজায় রাখতে গেলে চাহিদা মাফিক কর্মক্ষম দুটি হাতই হল মূল কাঁচামাল। হ্যাঁ, এই মিল-মেশিনের বিশ-একুশেও। ওদের ছাড়া ইকনমি তো নিতান্তই বদ্ধজলা। করোনা-উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেই গচ্ছিত ধনে টান পড়েছে। ওরা ঘরমুখো। ওরা ফিরবে কি? কিন্তু তার আগে খুঁজে দেখা দরকার ওরা কেন আসে, কেন ঘর গড়ে তোলে ভিনদেশে? কেন পরিযায়ী হয়?
প্রথমত, এরা বেশিরভাগই হল ভূমিহীন খেতমজুর। দূর-দূরান্তে পাড়ি জমায় কাজের আশায়, স্বনির্ভরতার তাগিদে। কিংবা দেনার কবল থেকে বাঁচতে। অথবা কায়িক শ্রমের বিনিময়ে সোনালি দিনের স্বপ্ন পুষে রাখে প্রস্তর-প্রচ্ছদের নিতলে। এছাড়াও, ভবিষ্যতের মুখ চেয়ে অনেক ছাত্র-ছাত্রীরা প্রবাসজীবন বেছে নেয়। ন্যাশানাল স্যাম্পল সার্ভের ডেটা অনুসারে শহর নয়, এক গ্রাম থেকে ভিন-গাঁয়ে ডেরা বেঁধেছিল পরিযায়ী শ্রমিকদের শতকরা ৬২%। টিভিতে, সংবাদপত্রের বিবরণীতে পেয়েছি যে শ্রমিকেরা দলে দলে ফিরে আসার জন্য উৎসুক। এঁদের “পরিযায়ী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, এই সম্ভাষণ, বোধহয়, ঠিক নয়। কেননা ১) এঁদের অধিকাংশই স্ত্রীপুত্রপরিবার ও লোটাকম্বলসহ ফিরে আসছেন। অর্থ হয়, তাঁরা সেখানে স্থায়ীভাবে থাকার জন্যই দেশান্তরী হয়েছিলেন। অর্থাৎ তাঁরা ‘ক্ষণিকের অতিথি’ নন। এককথায়, পার্মানেন্ট। প্রবাসী—কিন্তু ভারতীয়। ভিনগাঁয়ের অভিবাসী, তবে স্বদেশি। ভারতীয়, তাই পরিযায়ী সাইবেরিয়ান পাখি নয়, কোনো মতেই।
ওঁরা কাজ করতেন শহরে-নগরে, শিল্প-তালুকে, খাঁড়িতে-বন্দরে, স্টোন-কোয়ারিতে, মাছের আড়তে, নুনের ভাটিতে, কিংবা কুলি বা কামার-পরিচারিকা-হোটেল বয়-বাস কন্ডাক্টর, রিকশাচালক, হকার-ব্যাপারি-ঠেলাচালক বা নির্মাণশিল্পে। ঠিক যেমন কলকাতাকে সচল রেখেছিল একদিন “ডি-ইন্ড্রাস্ট্রিয়ালাইজড’ অজস্র মানুষের ভিড়, কতো ভিন্ন-বিভিন্ন পেশার মানুষ। মাইল-মাইল লম্বা সে লিস্টি, কয়েক ছত্রেও ফুরোবে না। ব্রিটিশ অবশিল্পায়নের বদান্যতায় তাঁদেরও এমন হাল হয়েছিল। জমিজমা, চাষ-তাঁত খুইয়ে পথে বসেছিল। ক্রমে বিদেশি শাসকের ঘর-গেরস্থালির নিত্যসঙ্গী হয়ে কেউ খা্নসামা, কেউ হুঁকোবরদার, কেউ পাইক, কেউ বরকন্দাজ। ফলানা-ফলানা। তবাকৎ-ই-নাসিরি সাক্ষ্য দিচ্ছে যে মুঘল-ভারতে ৩২০০টি শহর-নগর ছিল, ১৫ মিলিয়ন মানুষের উপমহাদেশ। টমাস রো থেকে মাউন্টব্যাটেন এমনি এমনি ঘাঁটি গাড়েনি। চীনেও হাজির হয়েছিল তারা। কিন্তু বাড়িঘর বানিয়েছিল জম্বুদ্বীপে। আত্মনির্ভরতা ভালো, আত্মবিস্মৃতি নয়। ওদের ফিরে আসতেই হবে, নইলে সভ্যতার আয়েষী রথের চাকা রুদ্ধ হবে যে। কিন্তু কেমনতর হবে সর্বভারতীয় নফর-সমাজের আর্থ-সামাজিক সুরক্ষা?
‘রাশিয়ার চিঠি’ লেখার বহু আগেই তিনি শ্রীনিকেতনে বা তারও আগে সাজাদপুর-পতিসরে পল্লি-পুনর্গঠনের নিজস্ব পরিকল্পনা রূপায়ণে সচেষ্ট ছিলেন। রাশিয়া ভ্রমণকালে তার প্রতিফলন চাক্ষুষ করে তাঁর বিস্ময় ব্যক্ত করেছিলেন এই ভাষায় যে—“কয়েক বৎসর পূর্বে ভারতবর্ষের অবস্থার সঙ্গে এঁদের জনসাধারণের অবস্থার সম্পূর্ণ সাদৃশ্য ছিল। এই অল্পকালের মধ্যে দ্রুতবেগে বদলে গেছে …আমরা পড়ে আছি জড়তার পাঁকের মধ্যে আকণ্ঠ নিমগ্ন।” অর্থনীতি-শাস্ত্রের দিগগজ পণ্ডিত ইনগ্রিড নিয়েলসেন ও রাসেল স্মিদ তাঁদের ‘মাইগ্রেশন অ্যাণ্ড সোশ্যাল প্রোটেকশন’ (২০০৮) বইতে লিখেছেন—‘China’s metamorphosis from sleeping dragon to economic superpower has been swift & absolute.’ সরল বাংলায়,– ‘মাও পরবর্তী যুগে নব্য-লেনিনপন্থী কঠোর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বাজারীকরণের এমন এক স্বকীয়তার প্রয়োগসিদ্ধতা প্রতিষ্ঠা করেন যে মধ্য-১৯৯০ থেকে চীনের অর্থনীতি দুর্বার গতিতে বেড়ে বিশ্বের প্রথম সারির আর্থিক শক্তিতে পরিণত হয়। ২০০৬ সালে চীনের GDP ছিল US$2.7 trillion, আর বার্ষিক হার ছিল ১০.৭%”। এই অভূতপূর্ব সাফল্যের মূল হোতা হল বহুল উৎপাদন, রপ্তানিবাণিজ্যের আ-বিশ্ব বিস্তার। আর্থিক-মূল্যের হিসাবে ১৯৯০-য়ের US$ 46 billion ডলার থেকে ২০০০-য়ে US$224 billion আর ২০০৫ সাল নাগাদ পাহাড়প্রমাণ US$713 .billion । (সূত্র-মাইগ্রেশন অ্যাণ্ড সোশ্যাল প্রোটেকশন)।
কিন্তু ২০২০-এর আরশিতে কেন এমন ১৯৩০-এর প্রতিফলন। দীর্ঘ টাইমল্যাগ সত্ত্বেও দুই বিশ্লেষকের কথা ও বার্তায় কেন এমন অদ্ভুত ধ্বনিসাদৃশ্য। দুজনেরই বাক্যবুনটে স্থান পেয়েছে সময়কালের স্বল্পতার বিষয়ে গভীর বিস্ময়— “এই অল্পকালের মধ্যে দ্রুতবেগে বদলে গেছে’…কিংবা ১৯৯০-তে যাত্রা শুরু করে কীভাবে ২০০৬-য়ে “বিশ্বের প্রথমসারির আর্থিক-শক্তি’ হয়ে ওঠে চীন। কবি বলেছিলেন—‘সাধারণের দারিদ্র্য হরণের শক্তি ধনীর ধনে নেই। সে আছে সাধারণের শক্তির মধ্যেই।…কৃত্রিমউপায়ে ধনবণ্টন করে কোনো লাভ নেই, সত্য উপায়ে ধনবণ্টন করা চাই।…ধনকে খর্ব করে এর নিষ্পত্তি নয়,ধনকে বলপূর্বক হরণ করেও নয়। ধনকে বদান্যতা যোগে দান করেও নয়। এর উপায় ধনকে উৎপন্ন করার শক্তি যথাসম্ভব সকলের মধ্যে জাগরূক করা’।(সমবায়-নীতি)।…অর্থাৎ,রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন যে ‘সাধারণের শক্তি’ হল এমন এক সামর্থ্য, যা ‘ধনে” পরিবর্তনযোগ্য। বিশ্বায়নের উথলে-ওঠা জোয়ারে গা ভাসিয়ে প্রথমেই মনে আসে যে একবিংশীয় ভারতীয় অর্থব্যবস্থার প্রথম দশকেই ‘inclusive growth’ বা সার্বিক উন্নতির সাথে গ্রামগুলোকে জুড়ে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা জরুরি ভিত্তিতে অনুভূত হয়েছিল। কৃষিপণ্যের উৎপাদন নিঃসন্দেহে বেড়েছে। কিন্তু বিশালকায় গ্রামীণ দারিদ্র্য ঘোচানোয় সক্ষম হয়নি। জমির পুনর্বণ্টন না হওয়ায় চড়া হারে সুদের নাগপাশ আর ঋণখেলাপ,অর্থনীতি বহির্ভূত জোরজুলুম-বিহীন জীবনের খোঁজে মানুষ শহরমুখী হয়েছে। আর্থিক সংস্কারের (১৯৭৮) আগে চীনের কৃষকেরাও একইভাবে শহরমুখী হতে চেয়েছিল। আর ওই ‘দেশান্তরী’ মানুষের কর্মশক্তির ওপর নির্ভর করেই চীন বিশ্ব-অর্থব্যবস্থায় বাজিমাৎ করেছে। সেই ঐকতানেই রাসেল-ইনগ্রিড জানাচ্ছেন “The continued flow of migrant labour to the urban centers is vital to the sustainability of China’s rapid economic growth’.
সারা দেশ জুড়েই মৃত্যুদণ্ড জারী হয়েছে কলকারখানাগুলোয়; ল্যাজেগোবরে হয়ে জানতে পেরেছি যে আমাদের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল যেসব দেশগুলোর মৃত্যু-বিভীষিকা,সেই ইতালি-স্পেন-ব্রিটেন এবং জার্মানিতে,ইতিমধ্যেই,পেশাদার ফুটবল লিগ চালু হয়ে গেছে। অক্সফোর্ড নাকি প্রতিষেধকও আবিষ্কার করে ফেলেছে। ছিটফুট কানে এসেছে যে অমুক ভারতীয় নাকি করোনা-দাওয়াই আবিষ্কারে প্রমুখ অনুসন্ধিৎসু কিংবা মহামারীর মোকাবিলায় অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। দশচক্রের দিশাহীনতায় তাঁরা আজ প্রবাসী। তাঁদের আমরা সুবিধা-সুযোগ-ল্যাব-পরীক্ষাগা্র-প্রয়োজনীয় অর্থ-বিলাস-ব্যসন-বৈভব ইত্যাদির কণামাত্রটুকু দিতে পারিনি। তাঁরা প্রবাসী,পরদেশবাসী। দুনিয়াদারির আ-বিশ্ব খোলাবাজারে হঠাৎই অনভিপ্রেত হয়ে উঠছে—’বর্ডারলেস বিশ্ব’ধারণা । চতুর্দিকে “অ-বিশ্বায়নী’ রমরমা। এবং ব্রেক্সিট। আস্তাকুঁড়ে স্থান পেতে চলেছে সীমান্তবিহীন মুক্তাঞ্চল। সর্বত্র হাজির হচ্ছে ফের জাতীয়তাবাদী আপনাপন। সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি, কবচকুণ্ডলের সন্ধান করি। রবাহুতের মতন হাজির হয় সংখ্যাতত্ত্বের কিছু তথ্যতাবিজ—
১ ২০১০-এর একুশশতকীয় আকলনে 8.5 শতাংশের কাছাকাছি ভারতীয় উন্নয়নের হার।
২. মানবোন্নয়ন সূচকে ১৮২টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১৩১–তম।
৩. জনবিস্ফোরণে টলমল এক লক্ষাধিক ভারতীয় আধা-শহর।
৪. ২০ টাকার-ও কম আয় বিশিষ্ট অমেয় লোকবল—সাকুল্যে ৮৩০ মিলিয়ন।
৫. ভারতবর্ষেই বিশ্বের প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন গরিব মানুষের ডেরা।
৬. ২৭.৩ মিলিয়ন ক্ষুধার্ত।অর্থাৎ,প্রতি একশোজনে তিনজন।১৩৫টি দেশের মধ্যে ৮৮-তম।
৭. বর্গ কিলোমিটার পিছু লোকসংখ্যা ৭৭ (১৯৫০)থেকে বেড়ে ২৬৭ (২০০১)।
৮. শিশুমৃত্যুহার—(গড়ে)প্রতি ১৫ সেকেণ্ডে ১ জন (সি.এন.এন,১৫/১০/২০০৯)।
৯. অপুষ্টি—২১%। (হিন্দুস্থান টাইমস ১৪/১০/০৯)।
১০. বিশ্বজুড়ে সেরা ২০ জন ধনীদের তালিকায় ভারতের ৪ জন।
১১. একুশশতকের প্রথম দশক শেষে অশিক্ষার অন্ধকারে জনসংখ্যার ১/৩ ভাগ বা ৩৪% ।
১২. চাষিদের মহাজন নির্ভরতার হার ১৭% (১৯৭১)থেকে বেড়ে ২৯% (২০০৯)।
এইসব রংবেরংয়ের আকার–গোত্র-গরিমা এবং লজ্জাজনক তথ্যগুলোর কী অ-পূর্ব,নির্বিরোধ ও রোমহর্ষক সহাবস্থান।
এই স্ববিরোধই তো গতশতকের প্রথম দুটি দশক থেকে ক্রমশই জোরালো হয়ে ফুটে উঠতে থাকে।ভারতের ছোটলাট চার্লস এলিয়ট বঙ্গীয় কৃষককূলের সম্বন্ধে মন্তব্য করেছিলেন—‘আমি মুহূর্তমাত্র ইতঃস্তত না করিয়া বলিতে পারি ব্রিটিশ ভারতের কৃষিজীবী প্রজার অর্ধাংশ সারাবছরের মধ্যে একদিনও পেট ভরিয়া খাইতে পায় না।ক্ষুধার সম্পূর্ণ নিবৃত্তিতে যে কিরূপ সুখ,তাহা ইহারা কখনও জানিতে পারে না ।” আমরা কি কাগজে-কলমে, মিডিয়া-মাধ্যমে, নেতা-নেত্রীর সম্ভাষণের সূত্রে (নরমে-গরমে) অবগত হইনি যে ভারতীয় জি.ডি.পি-র টাট্টুটি নাকি যথেষ্ট টগবগে…কিন্তু সেবা দাস-দাসীদের স্বোপার্জনের উপরিভাগের ৫৮% স্তর/মালাই /ক্রীমের ভিনিভিনি সৌগন্ধটুকু ভোজবাজিতে ঘুচে গেলে? রিয়েল গ্রোথ কোথায়, বাবুমশাই? শিল্প কই? নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী তো ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে অনেক এগিয়ে।ধরাশায়ী করে ফেলেছে খোদ আমেরিকাকেও। উপায় লঘু উদ্যোগ, উপায় অণু-শিল্প,জনসংখ্যার ৫৪ শতাংশের অ-বাধ যোগদান, উপায় ফুটকর-খুচরো ব্যবসা। আমরা রাজনৈতিকতার মধ্যেই গণতন্ত্রকে সীমিত রেখেছি। ভোটদানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকতার সার্থকতা চেয়েছি। হ্যারল্ড ল্যাস্কি সাহেবের উচ্চারণকেই ঘুরিয়ে পেশ করি বরং যে—সার্বিক, সার্বজনীন হয়নি কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক স্বাধীনতা; করগোনা কয়েকজনেরই কুক্ষিগত হয়ে রয়েছে। কারণ, মুক্তবাজার। কারণ, কর্পোরেট ধনবাদ। কারণ, অবিশ্বাস। কারণ,অজ্ঞতা। কারণ, হীনমন্যতা। কারণ, জাত-পা্ত-বর্ণ-ধর্মের অন্ধ আঘাত। কারণ, ষড়যন্ত্র। কারণ, পরনিন্দাপটু নিমরাজি সমাজ।
দারিদ্র্য একটি অতিমারী। ক্ষুদ্রঋণ তার টীকা। নিছক পাইয়ে দেওয়া নয়; কোলাটেরাল, থুড়ি, স্থাবর-অস্থাবর নয়; চাই উৎপাদনমুখী বাস্তবিকতা। দারিদ্র মূলধন ছিল না কখনো। আর হতেও পারে না। এককালীন পনেরো কিংবা ত্রিশহাজারি অথবা একলাখী SEPUP/SEEUY/ PMRY-র দান-খয়রাতি নয়, চাই রাষ্ট্রীয় দেখরেখ, নিয়মতান্ত্রিক কঠোর নিয়ন্ত্রণ। ১৯৯০-তে বাজারমুখী উন্নয়নপন্থার হাইওয়েতে জুড়িগাড়ি নিয়ে আমরাও ঘোড়া ছুটিয়েছিলাম। কিন্তু নিয়ন্ত্রণের বালাই ছিল না । বেফিকির বেহিসেবীপনা। আর (অ)নিয়ন্ত্রণের ওই ফাঁকফোঁকর দিয়েই মহাচীন আমাদের ওভারটেক করেছিল। বিতৃষ্ণ সংক্ষোভে, ইকড়ি-মিকড়ি ইস্টাইলে আমরা কেবল নিজস্ব দেওয়ালে আঁক কাটি—
দৃষ্টান্ত ছিল যদিও স্বকীয় (সমবায়িক) ‘আনন্দ’-য়ের, দুরগ-দুর্গাপুর, ভিলাই-বোকারো, কান্দলা-কোরাপুট, সিন্ধ্রি-ট্রম্বের। দক্ষ-অদক্ষ, শ্রমবিনিময়ে, কর্মঠ মানুষের নিত্যনতুন খাসতালুক শিল্পের—শহরমাত্রিক প্রকল্প বুনিয়াদি, পরিকল্পনা সেইসব, জনমুখী সুরক্ষা আর্থিক। লোকবল বেড়েছে শুধু স্বাধীনতার সত্তর বছরে ১৩০ কোটি+; উঠেছে নাভিশ্বাস—কলকারখানা, অমেয় কুটিরশিল্পের—চিরতরে। মুক্তবাণিজ্য ও গ্রামবিশ্বের জেরে—ভাগচাষী আজ, জোটবেঁধে, চাষের বদলে শহর গড়ায় ছোটে। তবুও সোয়াস্তি, হ্যাঁ, শহুরে খোলায় কোনোক্রমে মাথা গুঁজে, ওইসব হতদরিদ্র খর্বুটে, ফাই-ফরমাস খাটে। ফুরসতে, মুঠো পয়সা জোটে, মাঝেমধ্যি, আদিম ব্যবসাতে। হাঃ, বাঁচা যাবে শুধু এভাবেই, রুখাসুখা-অভাবী হাভাতে। আণবিকের সাথে গরিব শস্ত্রহীন লড়ছে খালিহাতে, ওর অস্ত্র ক্যারাটে; আইনক্স-মল আছে, আছে মাল্টিপ্লেক্স, মধ্যবিত্তের কাজ কী ঝঞ্ঝাটে? শস্যের বদলে পাওয়া গেছে হাজামজা যুবকের লাশ, হে নব্য রাখালদাস, হুররা—এপথেই খুঁজো তবে ত্রিংশের ইতিহাস!!!
নিয়েলসেন-রাসেল (সূত্র—‘মাইগ্রেশন অ্যাণ্ড সোশ্যাল প্রোটেকশন’ (২০০৮) মন্তব্য করেছেন যে পরিযায়ী শ্রমিকেরা হলেন সেই ইঞ্জিন-রুম, যার দৌলতে ক্রমান্বয়ে 10% + বাৎসরিক বৃদ্ধির বদান্যতায় চীন আজ আমেরিকাকেও ছাপিয়ে গিয়ে ২০২০ নাগাদ বিশ্বের পয়লা নম্বর অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হতে চলেছে।(রিপিট করি বইটির প্রকাশকাল—২০০৮)। তাঁরা আরো জানাচ্ছেন যে চীনের পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ১২০ মিলিয়ন থেকে ২০০ মিলিয়ন। এবং এই শ্রমিকদের শতকরা ৮০-ভাগ নির্মাণকাজ আর শতকরা ৫০-ভাগ নানারকম সেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত। এই দুই সেক্টরের জন্যই বিশ্বের কারখানা হিসাবে চীনের সুখ্যাতি। তাঁরা লিখেছেন—আইনি ব্যাখ্যার দিক থেকে একজন গ্রামীণ অভিবাসী শ্রমিক আর শহুরে কর্মীর মধ্যে কোন পার্থক্য করা হয় না। সুতরাং,অভিবাসী শ্রমিকরা শ্রমবিষয়ক সমস্ত আইনি আওতাভুক্ত হন। সক্রিয় শ্রমিকনেতারা আর NGO-গুলো এইসব নতুন আইনি শর্তাবলী সম্পর্কে শ্রমিকদের সজাগ রাখার দায়িত্বটি পালন করেন।
ন্যাশানাল সোশ্যাল ইন্সিউরেন্সের এক সভায় (বেজিং,২০০৬) ডেপুটি ডাইরেক্টর পি.দেহাই-য়ের মন্তব্য(সূত্র-তদেব) অনুযায়ী জুন,২০০৬ পর্যন্ত প্রায় ১৬ মিলিয়ন ‘মাইগ্র্যান্ট’ শ্রমিক কলকারখানায় আঘাতের ক্ষেত্রে বীমার অন্তর্ভুক্ত। এগারো মিলিয়ন ‘মাইগ্রান্ট’ স্বাস্থ্য-বীমা্র আওতায় রয়েছেন। এছাড়াও, (মাইগ্রান্ট শ্রমিকের সংখ্যা কমপক্ষে ১২০ মিলিয়ন ধরে), প্রায় ১৩.৩৩ মিলিয়ন ‘দেশান্তরী’ শ্রমিক পেন্সন-বীমার আওতাভুক্ত। (লেখকদ্বয়ের মতে) সামাজিক সুরক্ষার এইসমস্ত স্কিমগুলোর জন্যই মহাচীনে একের পর এক শহর গজিয়ে উঠেছে। সাংহাই-এর পুদং, সেনঝেন, তিয়াঞ্জিন, চেংদু আর চোংঙ্কিংয়ের মতন পাঁচটি শহরে চাষি ও শহরের মাইগ্রান্ট শ্রমিকদের জন্য নানাবিধ ব্যবস্থা নেওয়া হয় যেমন বকেয়া মজুরি প্রদান, কাজের পরিস্থিতি, ন্যূনতম মজুরীর তদারকির পাশাপাশি দেশান্তরী শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা প্রদান ইত্যাদি।
শহরে আসার ব্যাপারে কড়া নিয়ন্ত্রণ আর কৃষিপণ্যের অধিক ফলনের পাশাপাশি উচিত মুল্যের জন্য গ্রামাঞ্চলেই শিল্প-সৃষ্টি বা মেহনতি মানুষকে গ্রামেই বেঁধে রাখা সম্ভবপর হয়েছিল। কৃষি-বহির্ভূত খাতে উপার্জনের সূত্রে গ্রামাঞ্চলে প্রচুর শিল্পঠিকানা গড়ে ওঠে। লোকের হাতে পয়সা আসে। তাঁরা গ্রামেই থেকে যায়। জিন মেং জানাচ্ছেন যে (‘রিফর্মিং চায়নাজ লেবার মার্কেট’) জাতীয় শিল্পোৎপাদনের ৫৬ শতাংশ গ্রামীণ চীনেই তৈরি হয়েছিল। ড.মহম্মদ ইউনুস সাহেবের ক্ষুদ্র-ঋণ প্রকল্প বাংলাদেশে ঠিক এই বিপ্লবটিই ঘটিয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের মতোন তাঁরও স্বপ্ন ছিল ‘দারিদ্র্যহীন পৃথিবী’। তিনি সফল, বাংলাদেশ সূর্যকরোজ্জ্বল। সেসব পরীক্ষিত সাফল্য থেকে আমরা মুখ ফিরিয়ে রেখেছি।
গ্রামের মানুষ গ্রামে ফিরে এসেছে, করোনা-আবহে। আদতে, অসুরক্ষা-ভুখমরি-বেকারত্ব-মহাজনী গলাখাঁকারি এড়িয়ে যেতেই গ্রামের মানুষ শহরমুখী হয়ে ওঠে। টাকা-পয়সা-কড়ির সমুদ্রস্রোত মুছে গেছে সেই কবে—চা-কফি-কয়লা-কাপাস থেকে। জল নেই মাঠজোড়া শুখা পাটে, জাহ্নবীকূলে (শিল্পবিহীন) ভুঁইফোড় কত্তো শহর-নগর, সেবাধর্মের তোড়ে—খিদমদগারী নগর-জীবনে হাজির অ-চিন শব্দবন্ধেরা—ছাঁটাই-লে অফ-উচ্ছেদ-উদ্বাসন। ভেখ বদলিয়েও, স্থিতি সেই হদ্দ পুরোনো, যেথা যাবে যাও: কোচি-আগ্রা-ভুজ-কাটিহার: নেশনব্যাপী টেলিভাইজড হয় সেই একই চিত্রহার—জীবিকাপ্রার্থী অযুত বেকার; লিটল রেড রাইডিং ও হায়েনা চতুর, নব্য ঔপনিবেশিক— তার নব-নব অস্ত্রসম্ভার। ৮০ ভাগ ছিল কৃষিজীবি সেদিন। অধুনা নেবেছে পঞ্চাশে। সবুজ বিপ্লব হয়েছে বটে। কৃষি তবু লাভজনক ব্যবসা হয়ে ওঠেনি। উপার্জনের দায়ে, ঋণের জ্বালায় বেঘর-বেসাহারা হয়েছে অগুণতি মানুষ।গত চার বছরেই শুধু বৃহৎ বাণিজ্য-সংস্থাগুলোর ৩.১৬ লক্ষ কোটি টাকা অনাদায়ী ঋণ মকুব করেছে সরকার।
১৯৭০—কান পাতলেই শোনা যেত “গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরো’। পেরিয়ে এসেছি দীর্ঘ পঞ্চাশটি বছর। শহরগুলো ফুলে–ফেঁপে উঠল। পরিসংখ্যান বলছে—উবে যাচ্ছে গ্রামগুলো, মিশছে শহরে—শিল্পোন্নতিহীন দেদার বরোয়, হালে। সাকুল্যে—সাড়ে চার লক্ষ-য় নেমেছে। সাতলক্ষ পল্লি ছিল, ১৯১১-র ভারত-ভূখণ্ডে, কবি-মহাত্মার কালে। সীমান্তে গোলাগুলি চলেছে। কিন্তু ভালোছেলের নোটবইতে উঁকি মেরে নিজের আখের গোছানোয়—দেশপ্রেমের মুন্সিয়ানা, অবশ্যই, আছে। চীন আজ বিশ্বশক্তি। প্রকৃতপ্রস্তাবে, উদ্ধৃত ঐ তাত্ত্বিক শ্লোগানটির সফল প্রয়োগ ঘটেছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র—চীনে। ইস! ওরাই নাকি একসময় সাট্টা-জুয়া-আফিমে বুঁদ হয়ে থাকত। তা প্রায় একশো বছর পরে, সেদিনের বিশ্বশক্তি লন্ডন-আমেরিকা আজ চীনের নামে গুজব ছড়াতে ব্যস্ত। দারিদ্র্য মুলধন নয়। নিশ্চিতই। বেলাগাম কমফর্টের শহুরে বিলাস-বুর্জ নয়, এবার গ্রামগুলোর উন্নতি হোক। সৎ,মার্গদর্শী, ভিন্নপন্থী পশ্চিমেরই ইতিহাসকার Paul Bairoach, Nick Robbins-রা বলছেন ১৭৫০ নাগাদ চীন আর ভারত মিলে বিশ্বের ৫৫% পণ্য উৎপাদন করত। যুদ্ধ নয়,পিতঃ, সেই স্বর্গে—মোরে করো উন্নীত।
Posted in: ARTICLE, June 2020 - Cover Story