করোনাভাইরাস মহাসঙ্কট – শ্রমজীবী মানুষের সর্বনাশ : পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়

(১)

যে কথাগুলো মিডিয়াতে তেমনভাবে বলা হচ্ছেনা তা হলো বিশ্বব্যাপী এই মহাসঙ্কটে গরিব মানুষের কী দুর্দশা হচ্ছে। এবং তারপরে যে কথাটা বলা হচ্ছেনা তা হলো, কেন এই সর্বনাশ হচ্ছে। সেই বিশ্লেষণটা নেই। ইচ্ছাকৃতভাবেই নেই।

কর্পোরেট মিডিয়াতে, মূলস্রোত মিডিয়াতে সংখ্যা বলা হচ্ছে। হ্যাঁ, আমরা সবাই জানি গত তিন মাসে আমেরিকায় এক লক্ষ কুড়ি হাজার মানুষ মারা গেছে কোভিড-১৯ মহামারীতে। আমাদের জানানো হয়েছে, ব্রিটেনে বেয়াল্লিশ হাজার মানুষ মারা গেছে। স্পেন, ইতালি, ফ্রান্স — সর্বত্র মৃত্যুর সংখ্যা খুব বেশি। আর এখন ব্রেজিলে ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে সংক্রমণ। আজ পর্যন্ত সে দেশে পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি লোক মারা গেছে। হয়তো এই সংখ্যাগুলো আমরা এখন সবাই জানি। ভারতেও আজ পর্যন্ত চোদ্দ হাজারের বেশি মৃত্যু হয়েছে করোনাভাইরাসে। তবে, ভারতে সরকারিভাবে মৃত্যুর সংখ্যা যা বলা হয়, সচরাচর তার চাইতে সংখ্যা অনেক বেশি হয়। এ অভিজ্ঞতা আমাদের দীর্ঘদিনের।

তাছাড়া, মৃত্যুসংখ্যা তো আছেই। কিন্তু আজকে সারা পৃথিবীর মধ্যে ভারতে সংক্রমণ চতুর্থ। আমেরিকা, ব্রেজিল ও ব্রিটেনের পরেই ভারতে সংক্রমণের সংখ্যা। এর মধ্যে কতজন যে আগামী দিনগুলো মৃতের তালিকায় নাম লেখাবে, তা আমরা জানিনা। সত্যি কথা বলতে, এরকম কোনো তালিকা আদৌ আছে কিনা, তাও আমরা জানিনা। ভারতের মতো বিশাল জনসংখ্যা ও সীমাহীন জটিল ভৌগোলিক ও সামাজিক অবস্থায় কোথায় কতজন কীভাবে মারা যাচ্ছে, তার কোনো হিসেব সরকারিভাবে রাখা হচ্ছে কিনা, তাও আমাদের জানা নেই। বিভিন্ন মিডিয়া এবং স্থানীয় সংগঠন ও অ্যাকটিভিস্ট গ্রুপগুলোর পরিসংখ্যানই আমাদের ভরসা।

এমনকি, যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া হয়, ভারতে এই তিন মাসে সত্যিই চোদ্দ থেকে পনেরো হাজার মানুষ মারা গেছে করোনাভাইরাস অতিমারীতে, এবং মোদী সরকারের দ্রুত লকডাউন ঘোষণার ফলেই আমেরিকা, ব্রেজিল বা ব্রিটেন ইতালির চাইতে ভারতে মৃত্যুসংখ্যা অনেক কমিয়ে রাখা গেছে, তাহলেও এই মহাসঙ্কটে সাধারণ মানুষের, গরিব মানুষের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কথা কিছুই বলা হয়না। মিডিয়া সেভাবে শ্রমজীবী মানুষের দুর্দশার কথা বলেনা। শুধু ভয় দেখানো, উত্তেজনা সৃষ্টি করা, রেটিং বাড়ানো, মুনাফা বাড়ানোর জন্যে যেসব খবর প্রচার করতে হয়, সেগুলোই করে। অর্থাৎ, রেল লাইনে কাটা পড়ে কয়েকজন পরিযায়ী শ্রমিক মারা গেছে, কারণ তাদের আর কোথাও ঘুমোনোর জায়গা ছিলোনা — সেটা খবর। কারণ, সে খবর উত্তেজনা সৃষ্টি করে। রেটিং বাড়ায়। লোকে বার বার সে খবরগুলো দেখে। যদি মৃতদের ছবি দেখানো যায়, আজকের দিনে তাও একধরণের উত্তেজনা। একধরণের বিনোদন। মানুষ ড্রইং রুমের নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে বসে বসে দেখে। তারপর ডিনার খেতে যায়।

কিছু কিছু মানুষ সমবেদনা প্রকাশ করে। চোখের জল ফেলে। কিছু মানুষ প্রশ্ন করে, কেন ওরা রেল লাইনে বোকার মতো ঘুমিয়েছিলো? কেউ কেউ বলে, ওরা ঐভাবেই মরে। এ নিয়ে এতো কথার কী আছে? এইভাবেই এই খবরগুলো আস্তে আস্তে মানুষের মন থেকে মুছে যায়। তারপর আবার আরো নতুন, আরো উত্তেজক, আরো ভয়ঙ্কর খবর আসে। পুরোনো প্রদীপের বদলে নতুন প্রদীপের মতোই পুরোনো খবরের বদলে নতুন খবর এসে আলাদিনের মতো আমাদের মায়াজালে ঘেরা এক স্বপ্নের দেশে নিয়ে চলে যায়।

(২)

ভারতের শ্রমিক, আমেরিকার শ্রমিক

শ্রমিকের কি কোনো পুংলিঙ্গ স্ত্রীলিঙ্গ আছে? শ্রমিকানি, মহিলা শ্রমিক? হ্যাঁ, মজুর আর মজুরানি আমরা শুনেছি মাঝে মাঝে। কিন্তু মজুর শব্দটার মধ্যেই কেমন যেন একটা তাচ্ছিল্যের ভাব। আর শ্রমিক কথাটার মধ্যে আছে একটু রেস্পেক্ট, সম্মান। কিন্তু শ্রমিক কথাটাই কেউ আজকাল আর বেশি বলেনা। কারণ, শ্রমিক কথাটার মধ্যে আছে শ্রম। লোকে কাজ করবে, মালিক তাদের কিছু টাকা দেবে। দুপুরবেলায় হয়তো একটু রুটি বা ভাত খেতে দেবে। তারপর তারা আবার কাজ করবে। এর মধ্যে আবার শ্রম, শ্রমজীবী, কাজের অধিকার, উপার্জনের অধিকার, স্বাস্থ্যের অধিকার — এসব বড় বড় রাজনীতির কথা আসছে কেন? ওগুলো তো সেই আগেকার দিনে লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই সেসব দিনের কথা। ওগুলো তো আজকাল অদৃশ্যই হয়ে গেছে প্রায়।

পুঁজিবাদী এক নতুন শাসনব্যবস্থা, যাকে আজ বলা হচ্ছে নিওলিবারাল সিস্টেম — তাতে শুধু যে শ্রম, শ্রমজীবী এবং শ্রমিক শব্দগুলোকে মুছে দেওয়া হচ্ছে তাই নয়, অধিকার শব্দটাকেই আস্তে আস্তে মানুষের মন থেকে মুছে দেওয়া হচ্ছে। মিডিয়া, সিনেমা, থিয়েটার, যাত্রা এবং আজকের নতুন সোশ্যাল মিডিয়াতে অধিকার শব্দটা প্রায় অশ্রুত, অদৃশ্য। যাদের হাতে অনেক অর্থ, সম্পদ আছে, পুঁজি আছে, তারা ইচ্ছেমতো কাজের লোক — পুরুষ অথবা মহিলা — ডেকে এনে কাজে লাগবে। তাদের কাজের জন্য কিছু পারিশ্রমিক দেওয়া হবে — দেশের আইন যে ন্যূনতম রুজির কথা বলেছে, তার চেয়ে কম পারিশ্রমিক তাদের দেওয়া হবে। কিন্তু কাজই যেখানে নেই, যেখানে গরিব মজুররা খেতেই পাচ্ছেনা, সেখানে আইনসম্মত ন্যূনতম রুজির কথা আর কে ভাবে? কাজ পেলেই তারা খুশি। এবং বেঁচে থাকার মতো কোনো একটা অর্থ পেলেই তাদের চলে যাবে। আর একটা মোবাইল ফোন — যাতে পরিবারের সঙ্গে, সহকর্মীদের সঙ্গে একটু যোগাযোগ রাখা যায়।

সে কল সারাবার মিস্ত্রিই হোক, রঙের মিস্ত্রিই হোক, বাচ্চা দেখার মেয়ে, কিংবা বারুইপুর অথবা জয়নগর বা চম্পাহাটি ক্যানিং থেকে ট্রেনে বাদুড়ঝোলা হয়ে আসা রান্নার মাসি বা বৃদ্ধ বাবামাকে দেখার জন্যে আয়াই হোক। সুতোর কারখানায়, কিংবা পুরোনো জাহাজ ভেঙে ফেলার অতি বিষাক্ত পরিবেশে কাজ করা বারো, চোদ্দ, ষোলো বছরের ওই হাফপ্যান্ট পরা ছেলেগুলো — যারা মাঝে মাঝেই দুর্ঘটনায় প্রাণ কিংবা হাত পা খোয়ায়।

হ্যাঁ, আইন দেশে আছে বটে। শ্রম আইন আছে, রুজি আইন আছে, পরিবেশ আইনও আছে কিছু কিছু। কিন্তু আইন থাকলেই আইন মানা হয়, এমন কথা স্বাধীন ভারতবর্ষে কে কবে বলেছে?

বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা, কিন্তু আমেরিকাতেও তাই। আমাদের দেশে যেমন রান্নার মেয়েটির আসল নাম রাবেয়া কিংবা আসমা, কিন্তু হিন্দু বাড়িতে কাজ করার জন্যে তাকে লক্ষ্মী কিংবা আরতি নাম নিতে হয়েছে, নাহলে বাংলাদেশ থেকে কাগজহীন হয়ে ভারতে সীমান্ত পার হয়ে এসে কাজ করা ও উপার্জন করার “অপরাধে” তাদের গ্রেফতার করা হবে — অথবা সহজ ভাষায় কাজই পাবেনা তারা — ঠিক সেই একই রকম অবস্থা হলো আমেরিকার ল্যাটিনো স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলা পুরুষ ও মহিলা শ্রমিকেরা। ওই মেক্সিকো, গুয়াতেমালা, হণ্ডুরাস কিংবা কলম্বিয়া থেকে প্রাণ হাতে করে টেক্সাস, এ্যারিজোনা, ক্যালিফোর্নিয়ার ভয়ঙ্কর উত্তপ্ত মরুভূমি আর ক্যাকটাসের কাঁটাঝোপ পার হয়ে আসা শ্রমিক। যাদের নিজেদের কৃষিজমি তারা জলের দরে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছে মার্কিন কংগ্রেসে পাশ হওয়া ন্যাফটা বা নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্টের দরুণ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে। যেখানে মেক্সিকান পেসো হঠাৎ মূল্যহীন হয়ে গেছে। ফসলের দাম আর নেই।

নিজের চোখে দেশে এসেছি মেক্সিকোর দিক থেকে সোনোরা মরুভূমি পার হয়ে গুপ্তপথ দিয়ে ওই “অবৈধ” শ্রমিকরা কীভাবে আমেরিকার নোগালিস এলাকার গির্জাতে প্রবেশ করে প্রাণ বাঁচায়। আর জলের অভাবে মাঝে মাঝেই এখানে সেখানে পরিবারের মায়ের মৃতদেহ পড়ে থাকে — কোনোদিন কেউ যদি তাদের দেহাবশেষ খুঁজে পেয়ে টুসন শহরের মর্গে নিয়ে যায় সনাক্তকরণের জন্যে। সেই মর্গও দেখে এসেছি।

হাসনাবাদ, টাকি, পেট্রাপোল, বেনাপোল, রাজশাহী কিংবা ওদিকে ত্রিপুরা সীমান্তে ঠিক যে গল্প, এই আমেরিকাতেও তাই। আবার দেখে এসেছি টিউনিসিয়া থেকে ইতালি, মরোক্কো থেকে স্পেন, আর ইস্তানবুল থেকে গ্রীসে চোরাগোপ্তা পথে পাড়ি দেওয়া ইমিগ্রেন্ট শ্রমিকদের। প্যারিসের রাস্তায় রোমানিয়ার জিপসীরা খেলনা আর সস্তার অলংকার বিক্রি করছে। আলজেরিয়া, লিবিয়া, মরিটানিয়া থেকে আসা কৃষ্ণাঙ্গ যুবক চাবির রিঙে আইফেল টাওয়ার বিক্রি করছে ট্রকাডেরোর চত্বরে। জীবনসংগ্রাম একই। তার পরিধি, পরিচয়, আর পরিণতি আলাদা।

(৩)

পরিণতি ও প্রতিফলন

আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল ও বিশ্ব ব্যাংকের কাছে ভারত সরকার আগেও বিশাল ঋণ নিয়েছে, এবং তাদের ঋণের শর্ট পালন করার জন্যে নিচে উল্লিখিত ঐতিহাসিক আর্থ-সামাজিক পলিসি পরিবর্তন করেছে। এগুলি হলো: (১) অর্থনীতির নিরঙ্কুশ বেসরকারিকরণ, (২) ব্যাংকের সুদের দ্রুত হ্রাস, (৩) গরিবদের জন্যে রক্ষাকবচ আর্থিক সাহায্য ও অনুদান ধ্বংস, (৪) অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জ্বালানি, পরিবহণ ও পরিবেশের ওপর সরকারের সমস্ত নিয়ন্ত্রণ শিথিল, (৫) ভারতীয় মুদ্রার আন্তর্জাতিক মূল্য হ্রাস, এবং (৬) শ্রমিক ইউনিয়ন ধ্বংস। প্রকৃতপক্ষে, এই নীতিমালা নতুন কিছু নয়। বিশ্বায়িত অর্থনীতিতে আজ ব্রেজিল, আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া থেকে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স — সমস্ত উন্নয়নশীল দেশেই এই একই পদ্ধতিতে তাদের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। ভারত তার শিকার।

নব্বইয়ের গোড়ায় ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্যে কংগ্রেস সরকার যে ব্যবস্থায় এই বিশাল ঋণ নিয়েছিল, এবং তার ফলে অর্থনীতিকে রাষ্ট্র থেকে পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল, আজ আমরা তার নতুন এবং আরো বিধ্বংসী রূপ দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু এই বিষয়ে যেহেতু মিডিয়া কোনো আলোচনাই করেনা, ফলে হয়তো নব্বই শতাংশ মানুষ জানেই না পুতুলনাচের কী খেলা পিছনে চলেছে। মোদী-শাহ-সীতারামন সরকার নতুন যে ঋণ গ্রহণ করেছে তলিয়ে যাওয়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্যে, তার মাশুল আজ চোকাতে হবে ভারতের একশো কোটি সাধারণ মানুষকে। শুধু আজ নয়, আগামী প্রজন্মের জন্যেও ভারত সম্পূর্ণ বিক্রীত হয়ে যাবে, এবং বাঁধা পড়বে আন্তর্জাতিক মহাজনদের হাতে।

আজকে করোনাভাইরাস সংকটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন এই ভয়াবহ দশা, অথবা ব্রেজিলে কেন বলসেনারো সরকার পৃথিবীর ফুসফুস আমাজন বৃষ্টি অরণ্যকে নির্বিচারে ধ্বংস করে দিচ্ছে, তা নিয়েও যেমন কোনো আলোচনা হয়না আমাদের কর্পোরেট মিডিয়াতে, ঠিক তেমনি অর্থনীতির এই নতুন বিশ্বায়িত জুয়াখেলার কোনো উল্লেখই আমরা মিডিয়াতে দেখতে পাইনা। শ্রমিক ইউনিয়ন ধ্বংস করে দেওয়ার ফলশ্রুতি যে সার্বিক অধিকার ধ্বংস, যেখানে মানুষকে আমেরিকার কায়দায় যখন তখন কাজ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া যায় কোনো ক্ষতিপূরণ ছাড়াই, তা এখন মানুষ আর বুঝতে পারেনা।

আমেরিকায় মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত করোনাভাইরাসের কারণে চার কোটিরও বেশি শ্রমিক কর্মহীন হয়েছে। কিন্তু সংখ্যাটা নিউ ইয়র্ক টাইমস বা সিএনএন বারবার উল্লেখ করলেও তা করে চলেছে কেবলমাত্র ট্রাম্প নামক দানবকে পদচ্যুত করবার জন্যে। নিয়ন্ত্রণহীন মার্কিন পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে বিশ্লেষণ করার জন্যে নয়। আমেরিকার মানুষ জানেইনা, সারা পৃথিবীতে কোথাও এই ধরণের সার্বিক বেকারত্ব বাড়েনি গত তিন মাসে। কারণ, সে খবর তাদের কাছে পৌঁছনো হয়না। বিশেষ করে আমেরিকার মানুষ জানেইনা, এই সিস্টেমের বাইরেও কোনো সিস্টেম থাকতে পারে, এবং নিয়ন্ত্রিত পুঁজিবাদের মধ্যেই থাকতে পারে। যেমন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ড, ডেনমার্ক, জার্মানি বা দক্ষিণ কোরিয়া। এসব দেশে গণতান্ত্রিক সমাজবাদ পুঁজির মধ্যে থেকেও রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও নিয়ন্ত্রণকে হাতছাড়া করেনি। এসব দেশে তাই করোনাভাইরাসের সংকট অপেক্ষাকৃতভাবে অনেক কম। কারণ, শ্রমিকদের স্বার্থে রাষ্ট্র তাদের ইউনিয়নকে স্বীকৃতিও দিয়েছে, এবং শক্তিশালী করার পিছনে মদত দিয়েছে। সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার জন্যে রাষ্ট্র অঙ্গীকারবদ্ধ থেকেছে। পরিবেশ রক্ষায় রাষ্ট্র তার দায়িত্ব পালন করেছে।

কিন্তু আমেরিকা, ভারত ও ব্রেজিলে তা করা হয়নি। তাই আমেরিকায় আজ এতো বেকারত্ব, এতো মৃত্যু, এতো পুলিশি অত্যাচার। জনরোষও তীব্র হচ্ছে, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা আমেরিকা ও অন্য বহু দেশে রাস্তায় নেমে এসেছে স্বাস্থ্যসঙ্কট উপেক্ষা করে। তারা বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে, পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে, যুদ্ধের বিরুদ্ধে, এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষার অধিকারের পক্ষে লড়াই করে যাচ্ছে।

ইমিগ্রেন্ট শ্রমিক এবং গরিব সংখ্যালঘুর স্বার্থরক্ষায় বিশ্বব্যাপী আন্দোলন তীব্র হচ্ছে। সেখানে রাজনৈতিক ডগমা গৌণ।

মানুষকে বাঁচানোর তাগিদে, গরিব শ্রমজীবী মানুষকে বাঁচানোর অঙ্গীকারে জোট বেঁধেছে আজ শিক্ষিত নবযুগের চালিকাশক্তি।

[লেখক – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিক শিক্ষক ও মানবাধিকার কর্মী।]

Facebook Comments

Leave a Reply