যখন সবাই ছিল সংখ্যালঘু অথবা বাথরুমের জানলা থেকে চাঁদ দেখা যাচ্ছে : নীলাব্জ চক্রবর্তী

যখন সবাই ছিল সংখ্যালঘু অথবা বাথরুমের জানলা থেকে চাঁদ দেখা যাচ্ছে

পঞ্চদশ পর্ব

২৭

= = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = =

মানুষ হইতে সাবধান

= = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = =

# * # * #

— আজ, জানো, তিনজনকে অপমান করতে পেরেছি। খুব ভাল লাগছে… মেজাজটা একদম ঠিক হয়ে গেছে তারপর… রাতে ভাল ঘুম হবে আজ…

— আরে পড়তে বস পড়তে বস… বল তো একজন লোক একেকটা চল্লিশ হাজার টাকা দামের ছাব্বিশটা গরু কিনে… বল তো একজন দোকানদার তিরিশ টাকা দামে বারোটা খাতা বিক্রি করলে… বল তো এক কেজি পটলের দাম যদি পঞ্চান্ন টাকা হয়… বল তো…

— এই বালের ইসলামোফোবিক, হোমোফোবিক, রেসিস্ট সমাজের কাছে কী-ই বা আশা করা যায়…

— টের পাচ্ছ? উপন্যাসটা আস্তে আস্তে কেমন শেষ হয়ে আসছে…

— অথচ গ্রাম দিয়ে শহর ঘিরে ফেলার কথা ছিল…

— কবিতা আদৌ ভাষা দিয়ে লেখা হয়ই না… কবিতা লেখা হয় কবিতা দিয়েই… বা, বড়জোর, এভাবে বলা যায়, কবিতা আসলে সিনট্যাক্স দিয়ে লেখা হয়…

— আরে এ আবার কী কথা? ‘বাবার হ্যাঁ আছে’, মানে? হিন্দিতে তো ওরকম হয়… ‘উসকি তো হাঁ হ্যয়’-টাইপের… বাংলায় এভাবে বলে না তো! ‘বাবার সম্মতি আছে’ বলতে পারো… বা, শস্তায় ‘বাবা রাজি আছে’… বা, ‘বাবা হ্যাঁ বলেছে’… এভাবেও সারতে পারো আরও শস্তায়… কিন্তু ‘বাবার হ্যাঁ আছে’ না প্লিজ… এতে ‘বাবার “না” আছে’…

— লিসন, আই হ্যাভ টু কাম আউট অফ দিস টেরিবল ডিপ্রেসন… আই অ্যাম রিয়েলি ফিলিং ডাউন… আই নিড আ ওয়ে আউট…

— কবিতার রাজনীতি ও রাজনীতির কবিতা, এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য লেখ। পাঁচ নম্বরের প্রশ্ন…

— আরে এতো সোজা অঙ্ক! বোঝো না কেন? ইনভার্সলি প্রোপোর্শনাল তো! মাইনে অর্ধেক হয়ে গেছে মানে কাজ ডবল হয়ে যাবে… স্বাভাবিক তো… সোজা হিসেব… যাকে ব্যাস্তানুপাতিক বলে বাংলায়… এরপর মাইনে ওয়ান ফোর্থ হয়ে গেলে… কাজ, নিশ্চিত থাকো, চারগুণ হয়ে যাবে… এভাবে যতদিন না চাকরী চলে যায় অথবা আমরা আমাদের সহ্যশক্তি পার করে ফেলি… এটা তো চলবে… চলতেই থাকবে…

— আচ্ছা, আমরা এতক্ষণ কী নিয়ে আলোচনা করছিলাম?

— প্লিজ প্লিজ… জ্ঞান দিচ্ছি ভেব না… মাথা ঠাণ্ডা রাখতেই হবে… সময়টা এরকমই… রাগ করে চাকরী তো এক্ষুনি ছেড়ে দিতে পারি… তারপর… ওয়েল, হুঁ, খানিকক্ষণ ব্যাপক আরাম লাগবে, এটা ঘটনা… মাথার মধ্যে চব্বিশ ঘণ্টা অফিস নিয়ে ঘুরতে হবে না, মাথার মধ্যে চব্বিশ ঘণ্টা ওই লোকগুলোকে নিয়ে ঘুরতে হবে না… কিন্তু, তারপর… এইটুকু টাকাই বা কোত্থেকে আসবে…

— ভাল কথা, নেপাল কিন্তু আর হিন্দুরাষ্ট্র নেই… জানো তো? অনেকদিন হয়ে গেল কিন্তু…

— কী মনে হয়? কোম্পানি কি উঠে যাবে?

— আগে তো প্রসেস অফ আনলার্নিং শেষ হোক… তারপর না হয় রি-লার্নিং শুরু করার কথা ভাবা হবে’খন…

— ওয়ার্ক ফ্রম হোম তো… খেতে বসার সময়েও ফোন নিয়ে বসতে হয়… যখন–তখন… এরপর তো মনে হচ্ছে স্নান করতে বাথরুম করতে গেলেও প্রোজেক্টের গ্রুপে মেইল করে সবাইকে জানিয়ে দিয়ে যেতে হবে… কে জানে, ফোনের কাছে ফিরে এসে হয়তো দেখব সাড়ে তিনখানা মিসড কল… বসের কাছে কমপ্লেন চলে যাবে, ‘নট অ্যানসারিং টু মাই ফোনকলস’… আর পারা যাচ্ছে না…

— আচ্ছা, আমরা এতক্ষণ কী নিয়ে আলোচনা করছিলাম?

# * # * #

প্রথম কাক — লোকটা পাগল নাকি? গাছটার গায়ে হাত বোলাচ্ছে!… আরে! গাছটাকে প্রণাম করছে!!…

অন্য (দ্বিতীয় বলে কিছু হয় না আসলে) কাক – ছাড় তো… মানুষদের অমন অনেক কিছু উদ্ভট ব্যাপার থাকে…

২৮

কালো ডায়েরী

হোসে সারামাগোর ব্লাইণ্ডনেস বইটা বাংলায় পড়তে চাই। অনুবাদ আছে। ‘অন্ধত্ব’ নাম। একটা শহরের লোকজন হঠাৎ করে এক বিচিত্র অসুখের শিকার হচ্ছে, সেই নিয়ে কাহিনী। এক বিচিত্র অন্ধত্বের কাহিনী, বস্তুতঃ। কোনও কারণ ছাড়াই একের পর এক মানুষ ‘শ্বেত অন্ধত্ব’-এর কবলে পড়ছে। যারা এই অন্ধত্বে আক্রান্ত হচ্ছে, তারা সবকিছু দেখছে সাদায় আচ্ছন্ন, তাদের চোখ যেন একটা দুধের সাগরে ডুব দিয়েছে। কবীর চৌধুরী সাহেবের একটা বই থেকে এইটুকু জেনেছি… মূল বইটা পড়তে চাই।

সাদা অন্ধত্বের কাহিনী পড়তে যে চাই, এই কথাটা, এই কালো ডায়েরীটা ছাড়া আর কোথায়ই বা লিখে রাখব…

লাল ডায়েরী

প্রতিদিনের ঘেন্নাগুলো জমিয়ে রাখছি। কাজে লাগতে পারে। এবার ঘটনা হল, ‘কাজে লাগতে পারে’, এই কারণেই যে জমাচ্ছি, এটা ভেবে নিজের ওপরও একটু একটু ঘেন্না হচ্ছে আজকাল। সেটাও যে ফেলে দিচ্ছি / দিতে পারছি, এমন নয়। জমছে। জমিয়ে রাখছি। কাজে লাগতে পারে। বাকিটা, এখনও, ঠিক জানি না। দেখা যাক…

নীল ডায়েরী

সাদা একটা মাঠ। লালচে বাতাস। দূরে, কোথাও একটা সামন্ততান্ত্রিক দিন শুরু হবে হবে। স্নায়ু এক খুলে যাওয়া রঙ, দেখছে। দৃশ্যের পর দৃশ্য জুড়ে শুধু প্রিল্যুড, বেজেই চলল। জানলার পর জানলা বদলে ফেলল আমাদের স্মার্টফোন। আঙুল বদলে ফেলল, তবু, ছায়াদের স্বর এলো না। তোমার দুপুর নেই দুপুর?

পান সুপারি পান সুপারি / পান সুপারি পান সুপারি / এইখানেতে শঙ্কা ভারী / এইখানেতে শঙ্কা ভারী / পান সুপারি পান সুপারি / পান সুপারি পান সুপারি… গাইতে গাইতে, আমাদের ছেলেবেলা, সিঁড়ি বেয়ে একটা বিকেলের মধ্যে চলে গেলো…

সবুজ ডায়েরী

স্তনার্থে ভাষাবরুদ্ধ এক সহযাত্রায় নখর এবং বাদামী সংগীতের অভ্যন্তরস্থ প্রস্তরীভূত সেই মুহূর্তসমূহ কেমনে অনূদিত হইবে ভাবিতেছি। স্বীয় প্রিয় বাক্যগুলিও কেমন বিদ্রূপে! অথচ, শব্দ এক শ্রমমাত্র হইয়াই। মর্বিড এক নিবিড় অধ্যায়। যতি। সততই অপরাপর জুনগুলি সমুদয় ক্রিয়া হইল অপরূপ অভিজ্ঞান হইল। তথাপি, মুদ্রার অন্তরে অন্তরে সঙ্কুচিত হইয়া উঠিল যে সময়খণ্ড…

(চলবে)

Facebook Comments

Leave a Reply