সম্পাদকীয়

‘অপরজন’ ধরার চেষ্টা করে সমকালকে। অনুসন্ধান ও আলোচনা করে সমাজের উত্থান-পতন, তার কারণ। সবটাই করে সমাজে যারা ‘সভ্যতার পিলসুজ’ এবং যাদের গা দিয়ে গরম তেল গড়িয়ে পড়ে তারা। কিন্তু ‘অপর’ বলে চিহ্নিত যারা, যারা অপমানিত, যাদের কোন হক নেই—তাদের দৃষ্টিকোণ কি উপেক্ষিত থেকে যাবে? ‘পরিযায়ী’ এই সময়ের সবচেয়ে বেশি আলোচিত এবং বিতর্কিত শব্দ। সেই কারণে এই সংখ্যার শিরোনামে এসেছে। সবার অংশগ্রহণ চাওয়া হয়েছে, অংশগ্রহণে ঋদ্ধ হয়েছে ‘অপরজন’।
‘পরিযায়ী’ একটা নিত্য সত্য—মনে করা যাক মায়ের পেটে দশ মাস থাকার পর বা শল্যবিদের নিদেন-নির্দিষ্ট সময়ে পৃথিবীর প্রথম আলো দেখার পর, প্রথম চিৎকারের পর থেকে নিয়ত সব কিছুর পরিবর্তন ঘটেছে, কোন অবস্থান—ব্যক্তি বা সমষ্টি জীবনে স্থায়ী হয় নি। হওয়াটা নিয়ম নয়। সে অর্থে সবটাই পরিযায়ী অথবা পরিযায়ীর মতো। এই প্রবাহের মধ্য দিয়ে চলতে চলতে ‘স্থায়িত্ব’—রোজগার বা আশ্রয় সুরক্ষা অধিকার—ব্যক্তির জীবনে যাপনে ন্যায্য একমাত্র দাবি হয়ে ওঠে। অথচ ব্যক্তি মানুষ চায় সমাজের পরিবর্তন, ব্যবস্থার পরিবর্তন! জিজ্ঞাসা তখনই ওঠে দুই চাওয়া কি মেলে বা মেলানো যায়? ব্যক্তি জীবনে স্থায়িত্ব আর সামাজিক জীবনে পরিবর্তন! সেটি সম্ভবত হবার নয়। তবু রাষ্ট্রিক জীবনে পরিবর্তন ঘটে, দিল্লি ওয়াশিংটন বদলায়—কিন্তু গতি বড় শ্লথ। ঘর, ঘর-ছাড়া, ঘরে ফেরা—এর মধ্যে কোন বৈপরীত্য নেই। ঘরে’র দূরত্ব একশো, পাঁচশো বা হাজার—এর মধ্যেও অমিল কিছু নেই। ওরা যে পথ দিয়ে হাঁটবে সেটাই পথ, মালগাড়িটা ওদের অপর দিয়েই যাবে, দেখলেও থামবে না, ব্রেক থাকলেও ফেল করবে—এও নির্মম সত্য। অথবা রুটিই ছড়িয়ে পড়বে ট্রাকের ওপর। কারণ ব্যাগের ভেতরে গুলি থাকার কথা নয়… এসবই কারও কাছে নিয়ম, কারও কাছে নির্মম… এমনই নানা ভাবনা ‘অপরজন’ সবার সঙ্গে শেয়ার করতে চায়। টিকি কোথাও বাঁধা নেই।
জুন, ২০২০