অতনু বন্দ্যোপাধ্যায়-এর কবিতা
শরীর ভরা আগুন হিজিবিজি আর পাজরের মাইল ফলক
মুদ্রাদোষ
থাপ্পর একটা অপরাধ হয়ে পড়ুক গালে গালে।
কেউ দেখছে। দেখেই যাচ্ছে সেই কবে থেকে এই শহর আর সেইসব দাগ যা ভুলে যায়নি তার প্রিয় মানুষজন।
জন্মগত ঋণের আবেদন। শোধ দিতে হয় না।
অপরাধ ঘটে যায় নিজে থেকেই। যেমন কালকে আবার। চেনা সকাল। চেনা লোকটা হেঁটেই যাবে একটা রাস্তা ধরে সারাক্ষণ।
আর হাঁটতে হাঁটতে চিনতে পেরে যাবে প্রতিটা ঋতু কি অসম্ভব দুঃখ নিয়ে আসছে নিজের জন্য। ফেলে আসা বারান্দার জন্য। সমস্ত একলার জন্য।
প্রলাপ
মৃতদেহ চলে যাচ্ছে ভ্যানরিক্সায়
পাগলীকে কেউ নজর করবে না। এটাই স্বাভাবিক।
ওর এখন ছেঁড়া কাপড়টুকুই সম্বল
এই শুনশান আর
নতুন কান্না নিয়ে।
তুমি কোথায়। গীটারে দেখ এখনো কারুর চোখ গেঁথে আছে।
গাইতে গাইতে আরেকবার বলো
এইযে আদমশুমারী
তাতে যেন ওদেরও হিসেব থাকে নাম সমেত। ঠিকানা সমেত।
নিষিদ্ধ পানশালা
চমৎকার এই মগজের গোড়ায় খানিকটা নিশ্চিদ্র এখনো পরস্পরের বিশ্বাসঘাতকতার আদর্শে যাবতীয় লিপির উপলব্ধি গুলো মাইলের পর মাইল দেখ হেঁটে যাচ্ছে প্রিয় মাতৃত্বের উদ্দেশ্যে।
প্রহরের বেদনা জ্বালিয়ে প্রকান্ড হচ্ছে শত্রুশিবির পর্বতের শীর্ষ ছুঁয়ে ফেলার জন্য। লাফিয়ে উঠছে থানা চৌকিদার আত্মহননের যাবতীয়।ক্যালেন্ডারের হাতলে বসে আছেন পিতৃদেব আকালের সন্ধানকে চূড়ান্ত করতে।
জ্বলছে আগুন। ভিতরে বাইরে আশ্রয় সাশ্রয় সব ওয়েসিসের জন্মান্তরে যথার্থ জনকল্যান আর দখল হয়ে যাওয়া জমিগুলোয় লৌকিক ফোটালো।
রাস্ট্র একটা বিধিসম্মত সতর্কীকরণ। স্বীকৃত পরবর্তীগুলি ওই এলো বলে।
আপাতত বিস্তার তার সর্বস্ব নিয়ে নেমে পড়েছে মগজের গুলতি বের করে চেতনায় ধাক্কা মারতে। অপরূপ তার চেহারা। আদর্শ তার উপলব্ধি। আসুন ঈশ্বরকে বরং উল্টেপাল্টে দেখি। তার ভরাট যৌনতা নিয়ে কিছু কথা বলি হারামি সন্ত্রাসের আগে।
চলবে
চুম্বিত পরিব্রাজক
এখনও সকাল হল না। হল না তো কি আসে যায়। যারা যায় তারা চলেই যায়। আর যারা আসে তারা আসতেই থাকে। থাকে একটা নামহীন নদী। আর তার বিস্তৃত বেয়ারিশখানা। যখন মেঘ না চাইতেই জলের ছায়ায় ব্রিজ ভেসে যাচ্ছে। আসছে আমাদের শরীরের পচা গন্ধ। মারণাস্ত্র মেশানো অশিক্ষিত এই মুসাফিরখানায়
তোমার গৃহপালিত তখন ঈশ্বর। তোমার নখের গোড়ায় লেগে থাকা রক্তের দাগ অলৌকিক অন্তর্বাস। আর ফতোয়া পেরিয়ে ডেকে নেওয়া পাহাড়ি রাস্তার বাঁক থেকে ফিরে আসা মানুষের উন্মাদ । আতঙ্কের প্রকৃত ধারণা র জন্মদাতা এই মহত এবং অক্ষয় মিথ্যাচারীদের মনখারাপের নাটক লেখা আমাদের পুনর্জন্ম।
রোদ আর চাইতে পারছে না সকল তাকিয়ে থাকাকে। ঘুরতে থাকা মাথায় বসানো শবদাহ। পাখিরাই পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে মানুষকে খোয়ারের দিকে। শিকারের অস্বীকার তখন পরীদের হাত ধরে ডুবে যাচ্ছে স্বপ্নদোষে। পোড়া মাংসের কাছে গেলেই বুঝতে পারি যারা পাড়ি দিয়েছে ঘুমের গভীরে তাদের জন্য আর গেয়ে উঠবে না এই ফুলের বাগান। মালি আর ছিটমহল থেকে নিংড়ে নেওয়া খোলসটা টাঙানো থাকবে শুধু এই দপ্তরে। আরেকটা নতুন দেশে।
সকলের অলক্ষ্যে
গৃহস্থের অস্তিত্ব ছুঁতে চাওয়া সেই অলিখিত দেশলাইবাক্স…
এমন সময় ওয়ারিশ আর আজান নৌকার এই পাটাতন জুড়ে শুয়ে পড়লো ঠাকুরের বাতাসা সামলাতে। হিম হয়ে আসা রক্তদিশায় গরু’র গাড়ির সেই ক্যাচক্যাচ আর দুলতে থাকা লন্ঠন দেখতে পাচ্ছি। পাচ্ছি বোঝাই বাঁশ চলেছে আমাদের জাল ফেলে তুলে আনা নতুন বাঁশহাটিতে।
ভোর হয় হয়। হাফ ছেড়ে বাঁচলো নৌকোর গোলুই। আবছা আলোয় এখনো আন্ধারের পীরিত আর পাড়ার বটগাছটা যখন কুয়াশার চাদর খুলে স্নানের প্রস্তুতি নিচ্ছে ঠিক তখন সমস্ত লজ্জা ভয় আর আনন্দ শুকিয়ে কাঠ। পানিতে মানুষের দীর্ঘশ্বাস ডুবে যাচ্ছে উল্টে আসা আকাশের সাথে।
শকুন এসব আগে থেকেই বুঝেছিল ডুবসাঁতারের দৌলতে। এতসব কান্ডের পর আর দুদিন বাদেইতো সব্বাই মিলে রফা হবে। জ্বরের নতুন তাবিজ বেরিয়ে আসবে ঘন্টি বাজিয়ে। গতর কাঁপিয়ে।
এই যাত্রা তো সবে শুরু। প্রমোশন পাবো বলে কাউকেই ছাড়ছি না। আড়চোখে আবার দেখে নিচ্ছি উঠোনে চাঁদ এলো কিনা। দীঘির ওইপারে মেলা বসলো কিনা ঠিকঠাক কুপি লন্ঠন আর হ্যাজাক জ্বালিয়ে। এভাবেই মাখনের মত মানুষ। কাটতে কাটতে অন্ধকার ঢুকে যাচ্ছে পেটের সেইখানে
যেখানে উদ্বাস্তু বসে আছো সব খুবলে নিতে। কপালের দোষ বলে সব স্বীকার করিয়ে নিতে।