তুষ্টি ভট্টাচার্য-র কবিতা
কাঠের প্যাঁচা
৩৭
এক অলীক বার্তা এসেছে এই অন্তরীন দেশে
কাঠপ্যাঁচাটিকে যেতে হবে।
যেতে হবে সেই দূরদিগন্তে,
যেখানে কখনও চাঁদের পিঠে তার ছায়া খেলেছিল।
ও জড় পাখনা, তুমি কি উড়ানে সক্ষম হবে পুনরায়?
আবার পালকে বেঁধে নেবে মেঘের নির্যাস?
বায়ুবিদ্যুতে ঘর্ষিত হবে তোমার ঝাপটা?
আমাদের আকাঙ্ক্ষা ঘিরে পড়ে আছে সেই দৃশ্য
আমাদের মোহ জুড়ে বিস্তার করেছে তোমার চঞ্চু।
অগ্নিগোলকের ভেতর থেকে একজোড়া চোখের সঞ্চার-
আমাদের ঘুমন্ত দৃষ্টি থেকে আলো কেড়েছিল।
বার্তাবাহী মেঘ আজ তোমায় বহনে প্রস্তুত!
তুমি কি যাবে সেই দেশে-
যেখানে অর্গলমুক্ত আকাশ, বাঁধনহীন বাতাস তোমার অপেক্ষায়…
ও আমার কাঠের পক্ষী, ফিরে যাও সেই দেশে আরও একবার।
৩৮
সে এক নেশার দেশ।
মদের নদীতে সাঁতার দিতে থাকে মাতাল মাছেরা
হাওয়ায় গঞ্জিকা ওড়ে
শ্বাসপ্রশ্বাসে ঘোর এসে বসে।
নিছক এই কাঠের দেশ ছেড়ে কাঠের প্যাঁচাটি কি
মানিয়ে নেবে সেই অঘোর বিভ্রম?
জল, বায়ু, মাটি ছুঁয়ে অস্তিত্বসংগ্রামের কথা জেনে নিয়ে
সেও কি যোদ্ধার রূপে নেমে আসবে তলোয়ারহীন?
মায়াজাল বিছিয়ে রেখেছে শিকারি গাছে গাছে
রাতের অন্ধকার টুপ করে তাকে জড়িয়ে ধরে যদি?
যদি বিক্রি হয়ে যায়, পাচার হয়ে যায় পিঙ্গল মানুষের দেশে?
যারা ওর ঠোঁট কেটে নেবে, নেবে নখ, পালক ও কলিজা…
যেতে দেবে ওকে সেই দেশে?
এইখানে বন্দিদশায় তবুও তো দানাপানি, তবুও তো কাঠের সঞ্চয় আছে!
৩৯
কাঠের প্যাঁচাটি স্থির।
কোথায় যাবে সে এই দেশ ছেড়ে?
নিশ্চল ছায়ার শিকড় আজ বহুদুর বিস্তৃত
প্রসারিত করতে চেয়েছে তবু তার কাঠের ডানা।
এই পাথরের শরীর তার কতদূর যেতে পারে আর?
আজও মনে পড়ে ওর—কোনও একদিন গিয়েছিল সেও স্বর্গের পথে,
মাংসল শরীরে।
সুরলোক থেকে বিতারিত হয়েছিল যথারীতি
পুনরায় এই ধরাধামে ফেরা—তাও কি সম্ভব?
সেই থেকে কাঠের শরীর তার ঝুলে আছে আজও ত্রিশঙ্কু হয়ে।
কোথা যাবে সে? কোথায় ফিরবে তবে!
এই অনিয়মিত নিরলম্ব ভার আজ তার একান্ত সহচর
কাঠের ডানাটি স্থির, কাঠের শরীর তার ভাসমান…
মৃদু মৃদু কাঁপে দেখো ওই মধ্যবর্তী আশমান…
বোকার স্বর্গ ব’ল না ওকে!
Posted in: May 2020 - Cover Story, POETRY