তন্ময় ধর-এর কবিতা

বৃক্ষজন্ম

শিকড়

প্রাচীন তিয়াসার অভ্যেস থেকে গহন মাটিতে বৃক্ষের দাগ পড়ল। ক্ষুধার নীচে শ্রমরেখা আঁকলে তুমি। তার তীব্র বিন্যাসে মৃত-আলো কামড়ে ধরছে ঈশ্বরের ভয়ার্ত মুখ। প্রসবের সান্দ্র আলো থেকে আমরা অভিনয় বদলে ফেলছি।
আলো জ্বলে আছে নিজেদের ভেতরে, অনেক অনেক দূরে। মোৎজার্টের স্থির আঙুলে কাঁপছে স্মৃতিভ্রষ্ট নকটার্ণ। নিয়ন্ত্রণহীন এক উত্তাপ ও রক্তচন্দনের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে হাওয়ায়। পাখির ঠোঁটে চুপ হয়ে আসছে পরাগজন্ম।
বৃক্ষশিশ্নজন্মের ছায়ায় ঘুমিয়ে পড়েছে ঈশাবাস্য ভিক্ষুক। তার অনুভূতির বাইরে পড়ে আছে আমাদের খাবার। খাবারের পরের ওষুধটা তুমি এবারেও ভুলে গিয়েছো।

ফুল

অবুঝ একটি বিন্দু যাত্রা শুরু করছে। তোমার-আমার দুর্বলতার ভিতর হিমাংশু দত্তের সুরে ভুল হচ্ছে বারবার। ধীর পায়ে নেমে আসা রঙ কাঁপছে। পূর্ণ পরাগের ইচ্ছা আঘাত করছে আংশিক শাশ্বত অনিচ্ছাকে।
ক্ষতবিক্ষত একটি পাখি ফিরে আসছে রঙের অন্ধ পর্যায়ে। টুকরো আলো তোলার চেষ্টা করছে এই বর্ণিকাভঙ্গ থেকে। একটিই জন্মান্ধ শব্দের ঠোঁট থেকে আমরা অভিনয়ভ্রষ্ট হচ্ছি। আরো স্থিরত্বের পাশে ছিন্ন পায়ের নাচ শুরু হচ্ছে সাধনা বসুর।
অতীতবৃন্ত থেকে আমরা বারবার তুলে এনেছি এই নিঃশব্দ ফুলের গর্ভ। কুঞ্জ সাজাও তুমি। এই ফুলেই ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হবে। ভোরের ওষুধের দাগের পাশে পড়ে থাকবে না শূন্যতা।

ফল

ফলের আশ্চর্য ব্যবচ্ছেদ থামিয়ে পুনর্মৃত্যুর সামনে অদ্ভুত এক কমলা রঙ ফেলে দিলে তুমি। আমাদের দৃশ্যের ব্যথা থেকে উড়ে এল সংঘন পাখির ধুলিখেলা, ছাপ ও আয়ু। সমস্ত বীজের সামনে পড়ে রইল হলুদ আলোয় অর্ধেক-ঢাকা ভ্যান গঘের আত্মহত্যার ছুরি, বন্দুক, রহস্য।
হত্যার স্তর থেকে আমাদের প্রেমে মিথ্যে আলো ঢালছেন গঘ। ফলের বিতর্কিত অংশ থেকে আততায়ী ঝাঁপিয়ে পড়ছে আমাদের সুখে। প্রেমের অনেক নীচে শীতল শবদেহ টেনে নিয়ে যাওয়ার শব্দ স্পষ্ট হচ্ছে।
ক্ষুধার্ত মুখের অভিনয় আবার শুরু করি আমরা। গাছের ছায়ায় একরঙা তীব্র রক্তের মত রোদ নেমে আসে আবার।

Facebook Comments

Leave a Reply