সুদীপ্তা সর্বজ্ঞ-র কবিতা

ছাদ ভরে গেলে
লাল সিঁড়ি বেয়ে জল নেমে আসে,
বাঁধ ভাঙে ইছামতির।
শুনেছি ইছামতির ধারে বাবা জমি কিনেছিলো –
সূর্যাস্তের ব্যস্ততায় পাড় জুড়ে মৃদুমন্দ দ্বিধা
খোঁজ নেয় আজও
কেমন আছি আমরা কোলকাতার উত্তুরে বনেদিয়ানায়।
মোটা সাপের মতো জলের স্রোত সিঁড়ি ধুয়ে ঘরে ঢুকলে
হাহাকার ওঠে নদীর কোল ঘেঁষে
উড়ে যায় পরিশ্রম
নিয়মিত অভ্যাস ফাঁকি দিয়ে;

একতলা, দোতলা জল থইথই হলে
চোখ মোছে নদীর বুকে জেগে ওঠা ওপারের চর
শুনেছি দাদুর চোখে এরকমই জল এসেছিল এপারে দাঁড়িয়ে
যেমন মাটির ঘরে শুয়ে সুমেরীয়রা দেশ জয়ের স্বপ্ন দেখেছিল
কিছু মানুষ এখনো সেভাবেই জেগে ওঠার স্বপ্ন দেখছে,
ত্রাণ শিবিরে শুয়ে।

নিরাপদ স্থানে যাওয়ার প্রয়োজন বুঝছে না পায়রা দুটো
প্রেমেরও তো জল চাই, স্থল ও সামান্য জোগাড়
অতি আবশ্যক যতটা তার কমে
মন কষাকষি –
ঘুরে গেলে বছর ঝোড়ো হাওয়া ও সাপ্তাহিক আদর
স্পর্ধাহীন। পোড়া রুটি পরে,আগে
চাঁদ চাই, ঈদ তবে আজ।
এই বুঝি ঘোর ভাঙা ভোর? পালকে পালক ঘষা লাগে না
জ্বলে ওঠে না উত্তাপের জৌলুষ
অপরিণত চারদিক, শুধু আশ্রয় সব নয় –
শেষ কথা আশ্বাস।

বেনজির কিছু ঘটার আগেই সোজা হয়ে দাঁড়ালো গাছটা
দু’-একবার ঘাড় ঝাঁকিয়ে
ঠিক করে নিলো ডালপালা
পাখির বাসা, সাপের খোলস যেখানে যা পড়েছিল
কুড়িয়ে বাড়িয়ে গুছিয়ে রাখলো জায়গায়
ক্ষতি বলতে কাঠের দোকানের চাল আর রুটি বিক্রির আয়োজন –
সমূলে বিনাশ দেখতে এসেছিলো কিছু ছেলে ছোকড়া
এখন তারা কয়েক ফুট ছড়িয়ে ছিটিয়ে, ছত্রভঙ্গ
আরো এক দল –
ইলেকট্রিক কুঠারে ভাগাভাগি করে নিতো তারা
ছোট বড়ো টুকরো জুড়ে নিলে পেল্লায় এই গুঁড়ি।
কিন্তু এখন হতভম্ব শিস্ দিতে যাওয়া জিভ, মোবাইলে স্থির চোখের মণি,
নিত্যসুরে ফিরতে চাওয়া পরিবার, পরিজন, মানুষ।

Facebook Comments

Leave a Reply