সেলিম মণ্ডল-র কবিতা

অস্থিপুরাণ সমগ্র

***

মালা তোমায় পরাব না

হারের চিক্কণ দাঁত
বেশি রাতে আরও বেশি জ্বলজ্বল করে

বধূ বেশে আবার আসবে কি শেয়ালিনী
তার খরগোশের পায়ে লেগে থাকবে মিছরি দানা

ঝড়ের রাতে, মিছিমিছি ভুল করে!

****

আমাদের ফেলে আসা গাছে শালিখের সঙ্গম ভুলে
ফুল এঁকেছিল যে ফড়িং
আমাদের শোবার ঘরে তার শৌখিন আসবাব
মাথা রাখি, বড়ো হয় গলা
খক খক করে, যেন নিমকাঠে ভাসিয়েছি এইসব জারণ!

***

নিম দাঁতন সংগ্রহ করি
পড়ে যাওয়া দাঁত‍‍‍‍— ঝকঝক করে

মাড়িতে ব্যথা নেই

অসুস্থ ডালপালা এতটাই সবুজ
গলা নিজেই যেন কোনো নিমগাছ হয়ে—
ছড়িয়ে দেয় ভ্রমরের গুঞ্জন

***

ওই চুপশস্য নিয়ে ভরে উঠেছে কি উঠোন?
খাঁ খাঁ মাঠ— দুপুরের দেরাজ বাজায়

ভোরের নিঃসঙ্গ আলো, কাছে পেলে
আরও হত ভালো
পোকার গর্ভে মরে যাওয়া দিন— রাতকেই বলত শাঁসালো

***

গরম তেল নেই, থাকলে—
ডলে দেওয়া যেত আজ খুব

খুক খুক কাশির সরু গলা— গানের ক্লাস ছেড়ে
এসেছে

হার-মণি-আম—
এসো তরল উপশমে বেঁধে দিই: আলো

আমাদের পিদিম ডুবে আছে
হতে পারত আরেকটু শাঁসালো

***

আওয়াজ করে এসো
ভিতরে কোনো দেবালয় নেই

একটা শরীর থুবড়ে পড়ে আছে

কার হুকুমে? ইশারা নেই…

আওয়াজ করে এসো
শরীর জাগতে পারে কোনো বটের দুগ্ধখামারে

***

এই আলো নিঃসঙ্গতার
যতদূর তাকাই— তারও বেশি পথ কাছে আসে

কাছিমের হাঁটা নিয়ে, জুয়া খেলি

জিতবই এও এক ধ্যান অথবা ধারণা
যতটা সাধনা— গভীরতম অন্ধকার

***

লেখা কাঁদে

একদা বোবা এক পাগল, কলম ধরেছিল
উপত্যকার খাদে

সেখানেই এক পাগলি এসেছিল
গর্ভে নিয়ে অক্ষরের হাসি

দু-জনে জল দেখে— বেসেছিল ভালো

এক দুধসাদা পাখি পালকে ঘুণ নিয়ে
সেখানেই আজ খুক খুক কাশে

***

আর কী লেখা যায় অস্থিপুরাণে
পাঠে কাঁধ রেখে ঘুমিয়ে পড়ে বালিশ

তুলোর রাত্রিরে ওয়ারের নাল
এতটাই বীভৎস
মনে হয়— মেরে ফেলা সন্তান, সন্তানের বাপ
এ এক শাদার অস্থিরতায় সেরে নিয়েছে কয়েকবার স্নান

***

কেউ নেই। থাকলে ভালো হত— আবহাওয়া
ঝড়ে-জলে-কাদায় লুপোপুটি করে
কেটে যেত অস্থি-মজ্জা-স্নেহ

Facebook Comments

Leave a Reply