প্রদীপ চক্রবর্তী-র কবিতা

ব্রহ্মসূত্র ও একটি খসড়া কবিতা

এক.

গুঁড়ো গুঁড়ো দিঘিজলে সৌধ ভেঙে গুঁড়িয়ে যায়
মানুষের গুণ ভাগ ছাড়াই রামধনু ওঠে আকাশে
নদী এক ফোঁটা কান্নাকেই খুঁজছে ,
বায়ুগতি মৃগ যায় পলাইয়া দূরে

অধর্মজাতক ময়ূর না তনহা মরীচিকা ?
নাচে যত তেষ্টা বাড়ে …
বৃষ্টির সৈকত, নীচে মায়াবী গ্রহ
ভুয়ো দাঁত চশমা ব্রা সাস্পেনসার প্যাড পরচুলা সমেত হোমো স্যাপিয়ানসগণ ছুটে যাচ্ছে
একফোঁটা নিজস্ব আকাশ কিংবা একতিল স্থির জমি নেই কোথাও

রক্তে কী বিষ ? কিংবা ক্ষণরৌদ্র ?
কেরির কুঠির ,
ধুলোমাখা গ্রাম্য বালকের মতো পড়ে আছে
বঙ্গের প্রথম বিদ্যাঘর
একটা রাস্তা আর রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি থাকতে নেই এমন বারোয়ারি নৈঃশব্দ
লোকগুলো কোথায় ? কোনো দেশ কী ছিলো তাদের ?
পায়ের শিরা ছিঁড়ে যাওয়া রক্ত আর দগ্ধ মাংসের ঘ্রাণে
শহরের শেষ বাড়ি থেকে উড়ছে সামান্য কোহল

দুই.

অলীক আষাঢ়ের গজমোতি — সে কী তোমার নকল গহনা ?
অনগ্রবাঁধা নীলঘন মৃৎক্রীড়াসক্ত মত্ত মাতঙ্গের রঙে মাটিমাখা
আশরীর সাঁওতাল মেয়েটি
কদমের বনে বাঁশি বি মাইনর …সি শার্প !
মাঠ ও আকাশ ভরে ঝাপটায় কেকা …
অলকের আরশি নগরে ঢেউ , ক্রমে দেশগ্রাম
ব্রহ্মশশী ফকিরের মাটি দুলে ওঠে
বনের কাঁপে হাওয়া , শিশির দেয় কাঁটা
কিছুটা কুন্ঠিত ঘরের আসবাব হয়ে …

নির্বিকল্প যাদুকর জ্ঞানী সমকামী
সবুজ নপুংসক জীবাণু চোর ও নিরেট গেরিলা প্রতারক
আমাদের পিতামহ মৃত্যু অতিথিদের অতিক্রম করে গেলো
এখন বনভোজন যেমন চলছে চলুক ,
এমনই যে চলার কথা ছিলো …

তিন.

জমানো দৃশ্যের কুহকে সন্ধ্যা নামে | হরতালের এই ব্রহ্মটোলে ক্রিয়াকর্ম সন্ধি ও সমাস শিখি |
ব্যাকরণের চেয়ে বড়ো হয়ে যায় রঙ এবং স্যালাইন | ফুলের ফোটা নাভিমূল , বনে বনে গাছ ফাঁকা হয়ে আসে শিশ্নের প্রতীকী পুজোয়

একটু একটু করে পুরোনো হচ্ছে মাছের সময় |
আঁশবটির অনন্তপ্রসারী কামড় ঝুলে থাকে চৌমোহানীর হাটে …
রক্তকমল যোনি নয় , একটি ভ্রুণের জন্য সৌন্দর্য শিকারী রমণী শবের গুপ্তধর্ম জানুন | যতটা মুখোশ স্বরচিত রন্ধনশিল্প , তাদের ফেলে যাওয়া দু ‘ ভ্রু’ র মাঝে বসে আছে লুব্ধ পিপীলিকা —- হে মুয়াজ্জিন ! অন্ধকারের দিকে তাকান , আলোকিত অধঃপাত নেই …তদন্ত কমিশন তো নেই – ই …

চার.

ঢেউ পাবে না ডানা ,এ কথা জেনেও
চূড়ায় অতঃপর পাখিদের ওঠানামা করে ছায়াভীতি ,
রাগানুরাগ বহু বর্ষতাপে বুঝেছি …
অথৈ সাধিকা লুপ্ত বসুধার শঙ্খধ্বনি
ওই দূর নগরীর প্রান্তদেশে শমীবৃক্ষ ছায়ার কুটিরে
যে যজ্ঞের সূচনা হয়েছিল দুরারোগ্য মৈথুনের পরে
প্রিয় বর্ষাবাসে গুহাচিত্রে টিকে আছে আজও
জতুকক্ষের রক্তবীজ …একা এবং একাকী

পাঁচ.

আত্মহত্যা ছাড়া কাফকার অন্য কোনো বিকল্প ছিলো না | তোমার আঙুলগুলো এই ঘোর অনাধুনিকতার অন্ধকারে হাতে জড়িয়েছো ,
ইক্কত নকশার মতো | টানা ও পোড়েনে কতো রক্ত ঝরে গেছে | তুমি আমার সঙ্গে যে যে খেলা খেলেছিলে , শব্দহীন এনাস্থিসিয়া থেকে সে জাগছে | দুর্লভ চকমকি জ্বেলে একসঙ্গে হরিণ পোড়াও | লোলিত অপলা তুমি , পুরুষলিঙ্গের সারাৎসার | একটা নদীর বনে বনে বিজন যাযাবর ….তোমাকে খুঁজে চলেছে | তেজারতির মতো কিছু পুঁজি যার পুস্তিকা হয় না | রাতের আকাশে শশ মৃগ রাকা নৌকো গজ আজ নয় , ছোটো হতে হতে একটা ইঁদুরের মতো ছায়া দরকার …

ছয়.

সেই উদয়পদ্ম অলীক
বাড়ির নাম আকাশকুসুম

কখনও ভাবসম্প্রসারণ লিখতেই পারতো না
যে মেয়ে
হাওয়াই চটি ছিঁড়েছিলো বলে
বনে বনান্তরে রঙের আঠা দিয়ে জুড়ে দিতো পথের প্রসন্ন …

সে ভুল বানানে নতুন নতুন বেড়াল রচনা করে

তার ঝিরিঝিরি বৃষ্টি আপনমনে পৃথিবী হয়ে যায়

বজ্রাহত বৃক্ষটি আজ একা ঝলসানো চোখে দেখছে তাকে
রূপসী নর্তকী সলাবতী এই নীলগ্রহ
কতো মজার দৃশ্যে ভরপুর …

সাত.

যা কিছু ফুটে ওঠা একেকদিন ফুরিয়ে যায় …
রাতের আসনাই দেখার জন্য জলের শুকনো দাগ …
এঁকে বেঁকে ঠেলে দেয় মেঘের ভেতর দিয়ে ,
ফলপ্রসূ ফসলের ক্ষেত
ওড়ে ঘুঘু

বর্ষণের পরে হাসপাতালের জানলা দিয়ে দেখা,
এতো রক্ত
মহাশ্মশানের তোরণ এবার খুলে যাবে
এই তার সান্ধ্য ভোজ মাংসময়ী
নিয়মসম্মত পললমৃত্তিকা
অপরূপ চিবুকের ব্যবহারবিধি …

এই চলে যাওয়া রাস্তার বাঁকে গাছের সারাংশ
ধীরে ধীরে হাওয়া বাড়ে নিজগুণে নখদন্তধার
ঘরের ঘন শূন্য , প্রভূত মৈথুন
মৃত্যুর নিঃস্বলীন সয়ে গেছে মাটি
তুমি একা , মুগ্ধ শিকারী
দিকে দিকে গ্রাম ও বাংলার কেউ ডাকছে
ভিনগাঁর ফলের বাগানে
কৃষিজীবী রক্তের রুগ্ন ক্রেতাগণ
আর্মানি টোলাতে ধূপ দিও ,
দিও শস্যদানা ,
পৃথিবীর গ্রূপফোটো
শরীর মারফৎ …

Facebook Comments

Leave a Reply