নিমাই জানা-র তিনটি কবিতা

জ্বর

অনেক রাতে যারা রাজুর দোকান থেকে ফিরে আসে,
তারা দাম্পত্য ছেড়েছে অনেক দিন আগে। ঠোঁটে রিং অফ ফায়ার নিয়ে ধান ঝাড়াই এর পাদানিতে পা রাখে স্থলপদ্মের মতো ।
চৈতন্যদা কংক্রিটে শুইয়ে রাখে অতিমারীর নিম্নচাপ ফসলকে ।
পা ঘষতে ঘষতে হাঁটছে এক শরীর জোড়া টিউমার। ভাগ্যচক্রে স্কুল মাস্টার হয়ে যায় না কেন? ইঙ্গিতে ভাসে কুরুচিপূর্ণ কথা। কলম ছেড়ে স্টেথো হয়ে যাই না কেন বাবার অসুস্থ পিঠে। দুই হাত দিয়ে খাটের উপর শুয়ে রাখি মহাপুরুষকে। মুখে রাখি মাউথ ডিজলভড। জ্বর আসলে এক রকমের হয় না। শরীরের বাম দিকে জ্বর হলে, গরম জল পটি। ডানদিকে শিরশিরে ঠান্ডা হাওয়া। পান্থপাদপের রোঁয়া ওঠা শিলিগুড়ি বাতাসে ক্রোমোজোম জমে। ভেতরে বাড়তে থাকে জ্বরের গভীর উপসর্গ ।।

পরিযায়ী

মুড়ির লাইনে বসে থাকি উবু হয়ে
কাঠের উপর কালো পিঁপড়ের সারি,
ভনভনে সংসারে বৈতাল ফুল ভাজা আর পান্তা ভাতে পরিযায়ী হাঁটছে দেখো হাজার কিলোমিটার। এদের চোখে বৃষ্টি নেই, ভেজা বাতাস নেই,গনগনে তাপ নেই, শিরীষ ফুলের মতো গোল গোল চোখ বৃত্তের কেন্দ্র ছাড়িয়ে ঢুকে পড়েছে ক্রমশ বিন্দুর ভেতরে।
অদৃশ্য অঘটন জেনে শীতলদার পুরুষেরা সাইকেলে পাড়ি দেয় পোড়াপোড়া গমের রুটি নিয়ে। মাথার ওপর ছাদ হারানোর স্বপ্ন দেখছি আজকাল।
পোড়া কাঠ, জলে ডোবানো চাঁই, স্থির হয়ে আসা সাইকেল প্যাডেল, অসম্পূর্ণ পরীক্ষার খাতা আর জগদীশ মাস্টারের অসুস্থ শরীর। সিড়িভাঙা অঙ্ক,
প্যারাগ্রাফ রাইটিং।
ঘরের ভেতরে কেমন দাউদাউ করে মহামারী বেড়ে উঠছে এখন।

পুরুষ বিভাগ

ত্রিশূল এর অসম্ভব নিরাময় জেনেও হাসপাতালে দরজা আগলে বসে আছি ডিসচার্জ নিয়ে। পুরুষ বিভাগে নীল জবা দেখিয়েছে রুদ্র। রাতে অসুস্থ হলে মুখ বেঁধে চুপ করে ঘরে খিল দিয়ে শুয়ে থাকে একান্ত প্রতিবেশী। পেছনে পেছনে দৌড়ায় শুধু নিতাইয়ের কুকুর।
বাড়ির কেউ না থাকলে আলু সেদ্ধ লাল রংয়ের শুক্রগ্রহ আলো ছড়িয়ে যায় গভীরে অসুখের উপর। নোটের উপর ইস্ত্রি চালিয়ে জীবাণু মারছে শ্যাম দা। ডিটারজেন্ট এ ফেলে দেয় নীল মুদ্রার সরস্বতী গুলোকে,
নির্জন শহরে এই বুঝি গাড়ি এসে থামল ।।

Facebook Comments

Leave a Reply