যখন সবাই ছিল সংখ্যালঘু অথবা বাথরুমের জানলা থেকে চাঁদ দেখা যাচ্ছে : নীলাব্জ চক্রবর্তী
যখন সবাই ছিল সংখ্যালঘু অথবা বাথরুমের জানলা থেকে চাঁদ দেখা যাচ্ছে
চতুর্দশ পর্ব
২৫
= = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = =
তরমুজে থাকে টোনার
তরমুজ ব্যবহার করুন
আপনার ত্বককে আরও হাস্যোজ্জ্বল করে তুলুন
টিংটং
= = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = =
# * # * #
— বলো তো বাবা, ফিউডালিজম মানে কী? বলো তো, হোয়াট ইজ মিক্সড ইকনমি?
— প্রতিবার ফেসবুক লাইভে এই একটাই পাঞ্জাবী! এই লাল পাঞ্জাবীটা ছাড়া আর পাঞ্জাবী নেই তোমার? ঘরে পরার তো কী সুন্দর সুন্দর সব হাফ-হাতা পাঞ্জাবী পাওয়া যায়! সবাই ভাবে সারাক্ষণ তুমি এটা পরেই থাকো…
— মাধাই হালদারকে মনে আছে? চেনা চেনা ঠেকছে একটু নামটা? মাধাই হালদারকে নিয়ে কথা হোক…
— এই যেমন আমি যদি লিখি, আমাদের এলাকায় রক্ষাকালী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে ইদানীং অসামান্য মিষ্টি দই বানায়। আমার মনে হয় না গোটা উত্তর চব্বিশ পরগণার কোথাও অত ভাল দই পাওয়া যায়। এই দু’লাইন ফেসবুকে পোস্ট করলেও কতলোকে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে জানো? কতলোকের ‘মানসিক অনুভূতি’-তে আঘাত লাগতে পারো জানো?
— সেদিন একটা বিজ্ঞাপন এলো মোবাইলে, যেমন আসে, ফেসবুকের নিউজফিডের মধ্যে মধ্যে… আগে কখনও এই অদ্ভুত জিনিসটা দেখিনি… বাচ্চারা কীভাবে পেন / পেনসিল ধরবে, সেই গ্রিপটা পর্যন্ত স্ট্যান্ডার্ডাইজড করে দেওয়া হচ্ছে! একটা টুল এসে গ্যাছে বাজারে! আপনার বাচ্চা ঠিকভাবে পেন, পেনসিল ধরছে তো? আমাদের মেশিন ব্যবহার করুন, ওর গ্রিপের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকুন… ভাবো একবার!
— চুপ চুপ! জানিস না? এরাজ্যে প্রগতিশীলরা সবাই সিপিয়েম!
— চোখকে ক্যামেরা ভাবতে হয় আর ক্যামেরাকে চোখ… এভাবে, একসময়, সত্যি সত্যিই চোখ ক্যামেরা হয়ে ওঠে আর ক্যামেরা চোখ…
— আমাদের বাড়ির উত্তরদিকের আমগাছটায়, জানো, আগে ফল আসত না একেবারে। একবার, এই ধরো, একজ্যাক্ট তো মনে নেই, ধরো, বছর বাইশ-চব্বিশ আগে, গাছটা কেটে ফেলার কথা হয়। নির্ধারিত দিনে দড়িদড়া, কুড়ুল, দা, কোদাল অমুকতমুক নিয়ে কয়েকজন এসে হাজির। আমি, এসবের কিছুই জানতাম না তার আগে। টের পেয়ে বেঁকে বসি। গাছে কাটতেই দেব না কিছুতেই। মেনে নিতে হয় সবাইককে। কিছু টাকাপয়সা দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয় গাছ কাটার লোকদের। বিশ্বাস করবে না, তার পরের বছর থেকে প্রচুর আম হতে শুরু করে ওই গাছটায়। তবে, ইয়ে, মানে স্বাদে অবশ্য খুব একটা ভাল না ওই গাছের আম, কিন্তু, প্রতিবছর, তারপর থেকে প্রচুর আম, ওই গাছে, এটা ঘটনা। তবে এটাও ঘটনা, আমাকে এটা কেউ বললে আমি হয়তো বিশ্বাস করতাম না…
— অন্ধ হয়ে যাওয়া পর্যন্ত লিখে যাব… লিখেই যাব…
— অ্যাসটেরিক্স পড়ি আজকাল প্রচুর। বাংলা যা ছিল সব শেষ করে ফেলেছি। বাকিগুলো এখন ইংরিজিতে পড়ি। এই যে ধরো ইংরিজি পড়া শুরু করলাম, এ থেকে তুমি নির্দিষ্ট করে বলতে পারো আমি কখনও জয়েস বা বোর্হেস পড়ব কি পড়ব না? প্রব্যাবিলিটি কী বলছে?
— এই যে অফিসে এত বড় মেজো সেজো ক্ষমতাশালী লোকদের দেখি আমরা, এই লোকগুলোর ক্ষমতা মানে আসলে ক্ষতি করার ক্ষমতা। তোমার উপকার করার চেষ্টা বা ক্ষমতা কোনটাই এদের নেই, উপকার দূরে থাক, তোমার প্রাপ্যটুকুও তোমাকে দেওয়ার সদিচ্ছা (অ্যাণ্ড আই রিপিট) বা ক্ষমতা কিস্যু নেই এদের…
— নাইন্টিজ বলতে যে ক’টা গান মনে পড়ে, তার মধ্যে অন্যতম হল… ‘মেরা চান্দ মুঝে আয়া হ্যয় নজর’…
— এই প্রোফাইল অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘লক’ করা হল…
— একদিন… একদিন… জ্যে ভ্যু আলের ভের ত্বোয়া…
# * # * #
তোমার কাছে যাব ভাবতে ভাবতে
দেখি
সম্পর্ক একটা গাছ
ফেনার ভেতর
কে একটা দশকের বারবার নাম
বইছে
কাঁচের ওষুধে
আরও ভারী হয়ে আসে এই নোনাজল
এভাবে আয়না করছি
এভাবে
রিপিট
সাধনা
মানে
ঝুমকা বিষয়ক কয়েকটা সাদাকালো ফ্রেমের সুর
একভাবে…
# * # * #
= = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = =
আপনার ক্রাইসিসটাই আপনি
নিজের ক্রাইসিসকে চিনুন
নিজেকে চিনুন
= = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = =
# * # * #
অনুরোধ, তাহা হইলে কেবল একটি আসরমাত্র। যেমত এই ভার্টিক্যাল রিডিং। নোকিয়া টিউন। তন্মুহূর্তেই যে বিসর্পিল গতি, এই মন, অথবা যাহাকিছুই বা বিপন্মুক্ত অথবা ধারণযোগ্য না রহিয়াছিল । ইত্যবসরে, হে রিপু, হে পাঠাভ্যাস, প্রত্যক্ষ হও… ধ্বনি উন্মোচিত হইতেছে। অহো, শব্দ স্বয়ং তার রূপোন্মোচিত করিতেছে। অর্থাৎ শিল্প একটি বোধের নামটুকুই মাত্র, আর কিছু নহে। ভালবাসা অবধি বিচরণ করিতে করিতে একটি প্রভাত পুনর্ব্বার মাদাম দেবানন্দ হইল এবং ফিরিয়া গেল দৃশ্যের নিকট। পত্র হইতে পত্রান্তরে যে ব্যাপ্ত বিষাদ, তাহার নাম, এইরূপে, চিরকালীন হইল। অথচ বৃহদ্বঙ্গ (বৃহৎ + বঙ্গ) একটি সন্নিকটস্থ তথাপি প্রারম্ভিক স্বপ্নের নাম হইয়া উড্ডয়ন করিতে থাকিল। ফরিদপুর, কলিকাতা, জলপাইগুড়ি, ঢাকা, দিনহাটা, মাথাভাঙা, কোচবিহার, শ্রীহট্ট, চট্টগ্রাম, শিলচর, আগরতলা, বাঁকুড়া, বর্দ্ধমান, মালদহ… সব সমস্ত সমুদয় লইয়া এক নূতন মানচিত্র, নূতন পতাকা… কেন না, ঈশ্বর নাই, এবং, সংস্কার একটি লৌকিক ডাক মাত্র হইয়া, কেন না স্থূল দৃশ্যরাশির মধ্যে মধ্যে যে ক্ষীণাকাশ বিদ্যমান, স্থিতি ও বিপ্লব একই অঙ্গে অবস্থিত ভ্রম বা পারম্পর্য মাত্র… কেন না মহামতি জাঁ-লুক-গোদার বলিয়াছেন, ‘আমরা (এই প্রজন্ম) মার্ক্স ও কোকাকোলার সন্তান’। তদুপরি, মহামতি অমিয়ভূষণ মজুমদার বলিয়াছেন, ‘এবং, কোকাকোলা অবশ্যই শীতল’। সুতরাং…
২৬
কালো ডায়েরী
আজকের বিশেষ বিশেষ খবর একবার দেখে নেওয়া যাক…
১) ভাগ্যশ্রী কি আবার অভিনয়ে ফিরছেন?
২) পথেই প্রসব, দু’ঘণ্টা পর সদ্যোজাতকে নিয়ে ফের হাঁটা শুরু তরুণী মায়ের
৩) দামিনী ছবির স্বত্ব সানি দেওলকে ছেড়ে দিলেন শাহরুখ খান
৪) একটি বিশেষ সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়ার অপরাধে ত্রাণশিবিরের খিচুড়ি পেল না গ্রামের ছ’টি পরিবার
৫) গৃহবন্দী দশায় বাসন মাজলেন শাহিদ কাপুর
৬) সাড়ে তিন মিনিটের ভিডিও কনফারেন্সে ৩৭০০ কর্মী ছাঁটাই
৭) আরও এক শিল্পপতির ৪০০ কোটিরও বেশী টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশ পালানোর খবর ফাঁস
৮) প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে ভিটেমাটি সব খুইয়ে ৭ ঘণটা পেয়ারাগাছের ডাল আঁকড়ে থেকে প্রাণে বাঁচলেন প্রৌঢ়া
লাল ডায়েরী
আপনার ব্যবহারই আপনার কবিতা
নীল ডায়েরী
বিশেষণহীন একটা সকাল। ছাদে উঠে আসে কেউ। কালকে বৃষ্টি বন্ধ হয়েছে। অল্প রোদ উঠেছে আজ। না কি ওঠেনি, কিছুই যেন নিশ্চিত করে বলে ফেলা যাবে না এখন। কী করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারে না লোকটা। এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখে। প্রচুর ডালপালা ভেঙে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে চারদিকে… ইলেকট্রিক তার, টিভির কেবলের ওপর আমগাছের একটা বড়সড় ডাল ভেঙে পড়ে আছে… উল্টোদিকের বাড়ির সুপুরিগাছগুলো ভেঙে সেবাড়িরই ছাদের ওপর পড়েছে… ইলেকট্রিকের পোস্ট বেঁকেচুরে রাস্তার ওপর এসে ঝুঁকে পড়েছে… কোথা থেকে ফাইবার শিট উড়ে এসে পড়েছে পেরেক-টেরেক সমেত… সবটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না… সম্ভবতঃ ব্যাপক বীভৎস মাত্রাছাড়া ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গেছে বহুজায়গায়, বহু মানুষের। প্রাণ, ঘরবাড়ি-ভিটেমাটি, চাষ, রাস্তা, খাদ্য, রুজি… ‘ভাল আছি ভাল আছি’ বিড়বিড় করে লোকটা। ‘ভাল আছ?’ বলে। কাকে বলে? কেউ কোথাও নেই। বাঁহাতটা তুলে একবার মুখচখে বোলাতেই ‘উহ’ করে ওঠে লোকটা। বাঁ চোখের ওপর কপালে একটা ছোট ফোঁড়া মতো হয়েছে টের পায়। ‘যাচ্ছেতাই’! বলে ওঠে। ঠিক বুঝে উঠতে পারে না এখন কী করবে। এই অঞ্চলটা একটু নীচু। বছরে অন্তত এক-দু’বার এক-দু’দিনের জন্য জল হয় প্রতিবারই। ওইটুকু অভ্যাস। কিন্তু, এবার, এখন, এরকমভাবে জল বাড়ছে তো বাড়ছেই… সেই ১৯৭৮-এর কথা শুনেছিল… তারপর এত জল… কখনও… গত চল্লিশ বছরে যেসব বাড়িতে রাস্তায় কখনও এত জল দাঁড়াত না, সেই সবজায়গাতেও প্রচুর জল… বন্যা! কালকে বৃষ্টি বন্ধ হয়েছে। অল্প রোদ উঠেছে হয়তো। অথবা ওঠেনি। ঠিক নিশ্চিত হয়ে কিছুই বলা যাবে না। বিশেষণহীন একটা সকাল।
সবুজ ডায়েরী
তরমুজ খাই না। অথচ কোথাও তরমুজের অনুষঙ্গ এলে ভাল লাগে। স্নানের মধ্যে একটা লেবুর দানাদানা গন্ধ ঢুকে পড়ে কেমন। শহীদুল জহিরের ‘আমাদের কুটির শিল্পের ইতিহাস’ গল্পটার কথা বারবার মনে পড়ে তরমুজের কথা এলেই। আসলে, সেইজন্যই তরমুজের কথা ভাল লাগে। আর মনে পড়ে রিচার্ড ব্রটিগানের কথা। অর্থাৎ, মনে পড়ে রিচার্ড ব্রটিগানের ‘ইন ওয়াটারমেলন সুগার’। অবশ্য ইংরাজি তেমন জানি না, শুভঙ্কর দা-র অনুবাদ করা বইটা পড়েছিলাম।
এই পর্যন্ত লিখে স্যুইচের দিকে হাত বাড়ালাম আর তক্ষুনি সামনের জলে ডোবা রাস্তাটায় একটা ভারী ধাতব মুহূর্তের গড়িয়ে যাওয়া খুব স্পষ্টভাবে টের পেলাম। বরং, ভাঙা ভাঙা কিছু গান আলাদা করে রেখে দিই এখন। দুহাতের তালুতে ওই ভাঙা টুকরোগুলো ঘষে ঘষে নিজেকে স্যানিটাইজ করে ফেলার চেষ্টা করব পরে কখনও…
(চলবে)
Posted in: May 2020 - Serial, NOVEL, SERIAL