মুন্নি সেন-র কবিতা
১
জোছনার দিকে একনাগাড়ে তাকিয়ে থাকলে মাথা ঝিম ধরে। অদ্ভুত সেই ঘোরের সুড়ঙ্গ খুঁড়তে খুঁড়তে চলে যাই মায়ের কবরের ভেতর যার প্রায় রোজই কফিন বদলে দিই আমি। এই যে জীবন তার আর কোনো আলো অবশিষ্ট নেই। ঘাস ফুল খুঁটে খুঁটে নাকছাবি বানিয়ে নিই। ডবকা শাপলা ফুলগুলোকে ঝুঁটি ধরে ঝুলিয়ে দিই গলায়। আমিই তখন ঈশ্বর। তোমার আপনার তোর পেয়ারের পরমপিতা আমিই। আমাকে পূজা করো খিস্তি করো রগড় করো, হে নাথ!
ভাজা মাছ উলটে খাওয়ার সময় এসেছে এখন। অথবা আসেনি। আমার কথা এত ধরবেন না। আর ওভাবে তাকিয়ে থাকবেন না একদৃষ্টে। ছবিতে হলেও, আমার একটু একটু লজ্জা করে। আপনার দৃষ্টি পড়লে আমি নগ্ন হয়ে যাচ্ছি আর শাপলা ফুলে গুপ্ত রোগের মত ফুটে উঠছে কালশিটে দাগ। অপ্রত্যাশিত গর্ভের মত মায়ের কবর দ্রুত বেড়ে উঠছে শরীরে আর জোছনার যোনি ফাঁক করে আমি টেনে আনছি কাগজ ও কলম
২
মা বলেছিল ফুল ফোটা অবধি অপেক্ষা করতে হয়। আমি বলি প্রাপ্তবয়স্ক হলে মা বাবার থেকে সরে গিয়ে মাথা রাখতে হয় হাড়িকাঠে। কাগজ ফুলের মত পাতলা এই জীবন নিয়ে ফেরি করে বেড়াচ্ছি ভিন্টেজ হাহাকার। শ্মশানের ছাই ঘেঁটে খুঁজছি বাবার শেষ দাঁত। বই খুললেই পাতার ভেতর থেকে ইনিয়ে বিনিয়ে আসে আরতি মাসির কান্নার সুর। তাই ঘুমিয়ে পড়া অবধি অপেক্ষা করতে হয়। পাড়ার শেষ কুকুরটিও ঘুমিয়ে পড়লে তুমি এসো এই দেশে। বেগুনি রঙের মশারি তুলে দেখো বাবার জঙ্ঘা অবধি গিলে নিচ্ছে ওই সোহাগী মাগী। তুমি এসে আঁচলে বেঁধে নাও এই অস্থিসার জীবন আর পাতার ভেতর থেকে বের করে নাও আরতি মাসির সুর। বাবার চোখে পলাশ বুলিয়ে দাও আর আমাকে দাও গরম ভাতের ঘ্রাণের সঙ্গে ঘুমপাড়ানি গান
৩
এই প্রতীক্ষার আঁশটে গন্ধযুক্ত সময় সাজিয়ে দিলাম আপনার নামে। শ্রীরাধিকার অভিযোগের মত তারা দিনরাত কেঁদে কেঁদে ফিরুক আপনার পায়ে। মাথা ঘুরিয়ে দেবার মত চমৎকার আয়োজন নেই আমার কাছে শুধু তীব্র এক মাথা যন্ত্রনা চৌকাঠ আগলে বসে থাকে সারাক্ষণ। শেকল তুলে দিলে এপিসোড শেষ। কাঙ্ক্ষিত ভিডিও খুঁজে না পাওয়ার অস্থির অপেক্ষা ভাসিয়ে দিলাম আপনার জলে। বন্ধ ঘরের ভেতর আঠালো ঘোরের ভেতর ঘুমিয়ে পড়ছি আমি। পরম কৌতুকতায় নিজের বোঁটা নিজে কচলিয়ে কী অপার এই বেঁচে থাকা! আসুন একবার। এই থকথকে সময়ের গান হয়ে, ঘ্রাণ হয়ে আমরা ধৈর্য ধৈর্য খেলি। আমার সমস্ত বন্ধ্যা লেখা ফুল হয়ে ঝরে পড়ুক আপনার পায়ে…
Posted in: May 2020 - Cover Story, POETRY