মলয় রায়চৌধুরী-র কবিতা

নায়কত্ব


আটাকলের চনমনে গমদানার কায়দায় নাচতে-নাচতে
জুতোপায়ে বাজারে গিয়ে যখন খালি পায়ে নিজের মধ্যে ফিরি
বাসন-ধোয়া আওয়াজে চমকে ওঠে কাঁসাপেতলের রান্নাবাড়ি
বুঝতে পারি না অতো গান কেন ওইটুকু গলায় ধরে রাখে পাপিয়া
মাটিতে কান পেতে শুনতে পাই আরশোলাদের শোকপ্রস্তাবের ফিসফিস
.
বয়স হবার পূর্বাভাস আয়না তো অনেক আগেই দিয়েছিল
আমিই বরং ভেবেছি কাঁধে পাণ্ডবদের কালাশনিকভ নিয়ে বেরিয়ে পড়ব
কিন্তু মাঝরাতে হাতের মুঠো যে উন্মাদ হয়ে যাবে তা কে জানতো
.
প্রথম চুমুর স্মৃতি রোমন্হন করতে যে বৃদ্ধ এখন ইনটেনসিভ কেয়ারে
নিজের ভুলগুলোকে সন্মান জানানো হয়ে ওঠেনি বলে
মদ খেয়ে নর্দমায় পড়ে থাকার উচ্চাকাঙ্খা পূরণ হল না
সমুদ্র তো অবিরাম ঝাঁপাই ঝুড়ে স্বাধীন হতে চায় তবু পারে না
.
ঝড়ের সঙ্গে লড়ছে বাড়িটা অথচ ভেতরে বসে লোকটা ভাবছে ওইই লড়ছে
উত্তরটা কী ? উত্তরটাই তো প্রশ্ন ! প্রশ্নটা কী ? প্রশ্নটাই তো উত্তর !
.
অতো বেশি পালক রঙ রূপ নাচ নিয়ে ময়ূর ওড়ে না
ওকে কেবল দেখুন আর প্রশংসা করুন ; ও-ই তো নায়ক ।


ইকড়ি মিকড়ি চাম চিকড়ি


চারিদিকে হিজিবিজি স্পষ্টবাক বোবাদের গেঁড়িচোখ ভিড়ে
কে যে পরশ্রমজীবি নয়, সত্যি বলতে, টের পাওয়া যেত যদি
ঝড়েদের লেজ ধরে বৃষ্টিতে ঝুলে তারা পিঁড়ি-ছেড়ে ওঠা
বরেদের পাঁয়তাড়া ফ্রাই-করা প্রজন্মের বৈদ্যুতিক পুং
নেমন্তন্ন পাওয়া মাত্র পত্রপাঠ ছিঁড়ে ফেলার আনন্দে ভোগে–
তা ভুগুক, ক্ষেতি নেই। ডানার খাপে-খাপে যে-মস্তি লুকিয়ে রয়েছে
নিজেরই গলার স্বরে প্রতিধ্বনি সেজে তা তো বেমালুম হাওয়া
তাদের আঙুল নোংরা বরফের কোমল মোবিলে
তাহলে কাদের থাকে নখদর্পণের মতো মাথামোটা চিজ
বলো দিকি ! হ্যাঁ ঠিক, টিভি না থাকলে শ্যালে টেনে নিয়ে যেতো


দেহ


নোংরা ঘোলাটে পদ্মা আর গঙ্গা যেভাবে বঙ্গোপসাগরকে নীল করে তুলেছে
ঠিক সে-ভাবেই আগুনের দু’চার কলি নিঃশ্বাসে গড়া গান গেয়ে আমি
রুদ্রাক্ষহীন আঙুলে হাওয়ার শুটি ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে জব্বর এক গপ্পো বানাই
অনেকটা যুবতী শোকাতুরাকে জড়িয়ে মৃতকে ভুলে দেহতাপের মাতনে
আমারই দুটো ছায়ার মাঝখানে দাঁড়িয়ে যেন কানে-কানে বলছি
হ্যাঁ গা মেয়ে, ব্যকরণ যদি জানো, বলো দিকিন এই দেহ ব্যাপারটা কী?

Facebook Comments

Leave a Reply