ইন্দ্রনীল চক্রবর্তী-র কবিতা
পাঁচটি কবিতা
(১)
বিজ্ঞানের দেওয়া অন্ধকারে অমৃতের চোখ খোলে । ঐতিহাসিক রোম্যানটিসিজমে পৃথিবীর আদিম রহস্যের সমাধান চোখের সামনে ভাসমান হয়ে ওঠে। যা কিছু জানলার বাইরে তা পরিষ্কার হয়ে যায় জ্যোৎস্নার গাছের মতন। সমস্ত নিস্তব্ধ জগত এক সাথে বলে ওঠে “সাধু, সাধু”। এক অনিশ্চয়তার উপর নিজেকে এলিয়ে, কাছের অন্ধকারকে এড়িয়ে বিদ্দজনের মত বিজ্ঞানকে প্রশ্ন করি ,” তুমি এই কয়েক শতকে কি দিলে মোরে সখা ?” বিজ্ঞান সমান হেসে উত্তর দেয়, “এই প্রশ্ন, ভাববার অবকাশ, আর পরবর্তী কবিতাগুলি…।”
(২)
“আমার সভ্যতাকে ” আমার মত করে খুঁজতে খুঁজতে রোজ নটা বেজে যায়। ঘড়ি গুলো যৌন চাহিদায় জেগে থাকে আর বলে, “ঠিক, ঠিক, ঠিক ।” উদ্দেশ্যহীন সত্যান্বেষী আমাকে বলে যায়, “আপনি তো শুধু ফেসবুকে বিপ্লব করেন।” সে জানেনা আমি কোনও বিপ্লব করিনা। আমি বৃহত্তর চাহিদায়, মুখে পেন্সিল নিয়ে বসে থাকি। প্রশ্নের উত্তর পাওয়া হয়ে গেলে, কিম্বা ছবির মত বাস্তবে ঘড়ি গুলো গলে গেলে “কা কা ”বলে উড়ে ডালে গিয়ে বসব।
(৩)
একদিন সকালে দরজা খুলে খবরের কাগজ নিতে গিয়ে দেখে , তার মধ্যে কেউ মৃত প্রজাপতি রেখে দিয়ে গেছে। এরপর প্রতিদিন সে খবরের কাগজে মোড়া প্রজাপতি পেতে থাকে। সে প্রতিদিন তা ফেলে , কাগজ নিয়ে ঘরে চলে যায়। জানতে চায়না কোত্থেকে প্রজাপতি আসছে? আর কেই বা দিচ্ছে? সে চা খায়, অফিস যায়, বাড়ি ফেরে। ছুটির দিনে হাঁটতে বেরোলে দেখে সামনের পার্কে অনেক প্রজাপতি উড়ে বেড়াচ্ছে। প্রজাপতিগুলো তার খুব চেনা। গাছের পাতায় লুকিয়ে থাকা টিকটিকিও দেখতে পায় সে।
ভয় পায় না। টিউবওয়েল থেকে জল নিয়ে আকাশের দিকে ছুঁড়ে পরখ করে দেখে নেয় মধ্যাকার্ষন শক্তি ঠিক আছে কিনা? ঠাণ্ডা মাথায় বাড়ি ফেরে, কাগজওয়ালাকে ফোন করে বলে দেয় যে কাল থেকে কাগজ লাগবে না।
(৪)
তারা সবাই গানের দল খুলেছে । সবাই কিছু না কিছু করে, কিন্তু একজন তাদের মধ্যে শুধু লা লা করে , আর কিছুই করেনা। তাকে সবাই লা লা বলে ডাকে । প্রত্যেক গানের কোনও একটা জায়গায় তার লা লা করা চাই। সবাই বিরক্ত হয়, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারেনা বন্ধু বলে। এরপর একদিন গানের দল ভেঙ্গে যায়। যে যার মত বাক্স প্যাটরা নিয়ে বাড়ি চলে যায়। কিন্তু সে “লা লা ” করতেই থাকে। অন্য কোন কাজ করতে গেলে সে সেখানেও লা লা করে। সময়ের সাথে সাথে তার লা লা করার প্রবণতা প্রচণ্ড বেড়ে যায়। ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে জনতা তাকে সঙ্গীত একাডেমীতে নিয়ে যায় বিচারের জন্য। বিচারকরা জানতে চায় তার দাবি কি? সে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে, “আজ্ঞে, আমার নাম প্রমিথিউস, আমার একান্ত ইচ্ছা, “সা, রে, গা, মা, পা, ধা, নি, সা” র দুটো সা এর মতন সরগমে যেন দুটো লা যোগ করা হয়।”
(৫)
রূপকথায় বিশ্বাস করত বলে সে ডোবা থেকে তুলে এনে ব্যাঙকে বিয়ে করল। বাড়িতে আনার পর, পরিবার আর পাড়া প্রতিবেশীদের কি চিৎকার। “ও মা গো। ও মা গো”। কিন্তু ও বাকিদের বোঝালও যে চুমু খেলেই ব্যাঙ রাজার ছেলে হয়ে যাবে। কেউ মানল আর কেউ মানল না। কিন্তু সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগল কখন সেই ম্যাজিক হবে। ম্যাজিক কিন্তু হল, তবে ব্যাঙ রাজপুত্র হল না। প্রতিদিন এক একটা চুমুর সাথে একজন করে অপেক্ষা করা দর্শক ব্যাঙ হয়ে যেতে লাগল, এবং ডোবায় গিয়ে বাসা বাঁধতে লাগল। শেষে বাবা, মা ব্যাঙ হয়ে যাওয়াতে তার ধৈর্যে কুলালোনা। ব্যাঙ কে বলল,” তুমি ডোবায় চলে যাও বাপু, আর না। ” বলার সাথে সাথে শেষ ম্যাজিকের মতন সে নিজেও ব্যাঙ হয়ে গেল।
Related posts:
Posted in: May 2020 - Cover Story, POETRY