গৌতম চৌধুরী-র কবিতা

ভয় ও তিনটি কবিতার মোলাকাত

১.

ধরা দিতে ভয়, না কি ধরা পড়িতে
ভয়, না কি দ্বিধা
না, বিঁধিয়া-থাকা কাঁটার যন্ত্রণা
সমস্যা শনাক্তকরণের
মুখে চোখে কাদা মাখিয়া পাঁকের ভিতর যে ডুবিয়া আছে
তাহা কি কোনও আত্মগোপনের অছিলা
না কি স্রেফ আরাম স্রেফ আলস্যের উদ্যাপন
না কি আরও কঠিন কোনও ব্যাধি, যেমন স্মৃতিভ্রংশ
এসব উপসর্গ শয়তানির না অসুস্থতার
সেই সূক্ষ্ম বিচারের অবকাশ কাহার আছে
এত বিকল্পের বাহানাই বা কেন
পরিস্থিতি যুদ্ধকালীন
ভালোমন্দ বাছাইয়ের ফুরসত নাই
বাহিনীর কাজ একটি পুরা গ্রাম জ্বালাইয়া দেওয়া
শান্তি সকলেই চায়
তাই, বাহিনী হামেশাই ন্যায্য

২.

সেই মুখের দিকে তাকাইতে হাড় হিম হইয়া আসে
ঝলসানো, খুবলানো, থ্যাঁতলানো
যেন একটি উল্কাপিণ্ড আসিয়া
চাটিয়া লইয়া গিয়াছে খানিক ভূত্বক
বনানী জ্বলিয়া সাফ
মাটি উঁচুনিচু গহ্বরে ছয়লাপ
যেন এক গভীর অপরাধবোধের চিহ্ন
স্থায়ীভাবে লটকাইয়া গিয়াছে চোখের কোলে
যেন বশীকরণ-তাড়িত আনন্দ
কাঁপিতে কাঁপিতে আসিয়া আছড়াইয়া পড়িয়াছে
প্রকৃতির আঙিনায়
কালো দ্রবণে ধুইয়া দাও তাহার চোখ
কালো দ্রবণে ধুইয়া দাও তাহার মুখ
অন্তত সেই কালিমার আড়ালে চাপা পড়ুক
তাহার বেবাক ক্ষতচিহ্নের বীভৎসতা

৩.

প্রাচীর মনকেই আড়াল করিয়া রাখিয়াছে
তাই এত শ্বাসকষ্ট, এই বোবায়-ধরা গোঙানি
নিজেকে ভয় পাইয়া চাঁদের মতো জলে নামিয়া আসিলে
ছ্যাঁৎ করিয়া খানিক বাষ্প উঠিয়া আসে

প্রতিটি অর্ধসত্যের আড়ালে যে মিথ্যা
তাহার ভিতর পড়িয়া আছে সেই ভয়ঙ্কর আলেখ্য
রক্তজবা দিয়া ঢাকা যায় না
অশ্রু অবরুদ্ধ, হয়তো রক্তবিন্দু হইবে
ভিজিবে পদনখ

শূন্যতার ভিতর দিয়া ভাসিয়া চলিতেছে বীণা
অনেক আনন্দে সে আজ রাজহংসের মতো
কিন্তু তাহার তারগুলির শরীরে আজও মায়া
আঙুলের স্পর্শের জন্য তাহারা নামিয়া আসিতে চায়
মাটির বুকে ঘাস, ঘাসের বুকে শিশির, শিশিরের বুকে আলো

Facebook Comments

Leave a Reply