সম্পাদকীয়
অপরজন এবং কবিতা…
এমনটা হবে ভাবা যায়নি, তেমনটা কখনও ঘটেওনি। এমনটা হয়তো অনিবার্য ছিল। পুরো একটা মাসের প্রতিটি দিন প্রতিটি মুহূর্ত, দেশ হোক বা দুনিয়া, সর্বত্র—অতিমারি কেবল মৃত্যুকে স্পর্শ করেনি, আলিঙ্গন করেনি, অনিবার্য করেনি, পায়ে পায়ে ছড়িয়ে দেয়নি, কবিতার জন্যে উপাদান হয়ে উঠে এসেছে, নানা আঙ্গিকে চোখের সামনে—পথঘাট, রেল লাইন, অসম্ভব দূরত্ব হাঁটার জেদ, অসহায়তা—সব কিছু যেন মাথা তুলেছে, লজ্জাবনত হয়েছে, স্পর্ধায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে, এক নিমেষে দুনিয়াকে নির্বাক করেছে পর মুহূর্তেই আবার হিলিয়ে দিয়েছে।
গত শতকের ষাটের দশক…
সেই ছবিটা—
ভিয়েতনামে মার্কিন বোমায় নিথর নিস্পন্দ এক মায়ের বুকে ক্ষুধার্ত শিশুটির অমৃত সন্ধান…
রীতিমত স্তব্ধ করে দিয়েছিল! মনে পড়ার কথা নয়, স্মৃতি সতত দুর্বল…
বা এই সেদিন ‘ঝিক ঝিক ঠান্ডিগড়’ মুজরফফরপুর। চাদর সরিয়ে সেই মা’কে অবুঝ শিশুর ডেকে তোলার দৃশ্য… মা তার আসবে না আর না—শিশু কিছু বোঝে না কি! সব কোথায় যেন একটা ছন্দের মিল বা পতন ঘটিয়ে দেয়… হাতের মুঠোয় এনে দেয় কিছু একটা, হারিয়ে আবার পেয়েও যায়—‘অপরজন’ সেই মুহূর্তে কেবল ছুঁতে চায় কবির কল্পনার পৃথিবীকে, আবেগকে, যেখানে নিঃস্পন্দ ঘটমানতা অস্বীকৃত হয়। সূচীত হয় এক অন্য পৃথিবী।
একটা অব্যক্ত যন্ত্রণার তাড়া এক সময়ে ঘরছাড়া করে, কাজ সারার পর ‘না ঘরকা না ঘাটকা’ আবার পাল তোলে, জীবন খুঁজে খুঁজে ঘরে ফেরার অসংখ্য হাজারো রহস্য মাখা জীবন-মৃত্যুর ছবি, হাজারো কবিতা জন্ম দেয়—তাকে ধরবার বাঁধবার ষড়যন্ত্র বলতে পারেন কেউ–যা ‘অপরজন’ এবারে চেষ্টা করেছে।
এই সেদিন কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের ঘাড়ের ওপরে বসে এক শ্বেতাঙ্গ, দু হাঁটু চেপে যেন সাঁড়াশি। ‘আমি আর শ্বাস নিতে পারছি না’…তবু ছাড়া পায়নি জর্জ—অবশেষে ঢলে পড়ল মৃত্যুর কোলে…সভ্যতা জানান দিল ‘আমি আছি’ আর সেটাই তার শিশুর অনুভূতিটা বদলে দিল—দুনিয়া বদলে দেবার অনুভূতি! দিয়ে গেল তো!
মৃত্যু সব কিছু নিয়ে যেতে পারে না… রেখে যায় অনেক কিছু…
মে ২০২০