বীথি চট্টোপাধ্যায়-র কবিতা

ভালো-ভাষা

অনেক কিছুই হারিয়ে ফেলেছি , কত কী ভুলতে পারি,
তবু ঢাকা থেকে ফোন-আসে;আজকে একুশে ফেব্রুয়রি

আবোলতাবোলে জমে আছে বহু অনাদরভরা ধুলো
ঝরে পড়ে থাকে প্রচার না-পাওয়া কাব্যগ্রন্থগুলো।

কলেজস্ট্রীটের ভিড়-কোলাহলে, প্রেসিডেন্সির গেটে
বাংলা-বইয়ের পাতা উল্টোয়; ফুটপাত হেঁটে হেঁটে।

অনেক কিছুই ভুলে যেতে পারি শহরের পথে নেমে
হে কারুবাসনা, জীবন মরণ নিঃশেষ প্রেমে প্রেমে।

ভাষা শহীদের নাম ক-জনের সত্যিই মনে থাকে?
মহীনের ঘোড়া অন্ধকারের আড়ালে নিজেকে ঢাকে।

ফ্লাই ওভারের দিগন্ত ছুঁয়ে শহরের উচ্ছ্বাসে,
বাংলাভাষাকে এখনও বলো কে মন থেকে ভালবাসে?

আকবরের বারান্দা

বৃন্দাবনের রামতনু মিশ্রকে
তানসেন বলে চেনে ভারতের লোকে।

সুর বাঁধলেন সুদূর গোয়ালিয়রে                                    গান চলে গেল মোগল রাজার ঘরে।

বারাণসী থেকে ফতেপুর সিক্রিতে
সম্রাট চান সে সুর ছড়িয়ে দিতে…

মেঘ নেমে এসে বৃষ্টি পড়ছে জোরে
আকবর স্থির; তানসেন বীণা ধরে,

সেই বীণাখানি ভারতের কোণে কোণে
ছড়িয়ে গিয়েছে ঘন মেঘ গর্জনে;

বারাণসী থেকে ফতেপুর সিক্রিতে
শালগ্রাম শীলা ও দীন- ই- ইলাহিতে।

ভৈরবী সুর দূর থেকে ভেসে যায়
আকবর গিয়ে দাঁড়ান বারান্দায়..

বৈষ্ণবের নামগান লেগে থাকে
মুঘল প্রাসাদে শ্বেতপাথরের তাকে।

বারানসী থেকে যমুনার তীরে কত
প্রেম আছে তাতে থাকুক হাজার ক্ষত;

যমুনার ধারে মুসলমানের ঘরে
রাধাকৃষ্ণের প্রেমকথা ঝরে পড়ে।

গঙ্গার জলে শিবঠাকুরের দেশে
সূফি সাধনার আঙ্গিক এসে মেশে।

রাধাকৃষ্ণের পদাবলী ভেসে যায়
আকবর এসে দাঁড়ান বারান্দায়…

বেঘর

প্রেম এসে সব ঘরদোর ভেঙে দিল
মুখ ভরে গেল থাপ্পড়ে থাপ্পড়ে;                                     বুক ভরে গেল বিদ্যুৎ আর সুখে
ঝড় বৃষ্টিও শুরু হলো খুব জোরে ।

প্রেম তুমি ওই বৃষ্টিরর মধ্যেই
একটি কাপড়ে বের করে দিয়েছিলে
ঘর নেই , কোনও মানসম্মান নেই
আমায় দেখে সেকী হাসি সবাই মিলে!

হাসতে হাসতে নিয়ে গেল বহুদূর
পায়ে কাচ ফোটে,টাকাকড়ি নেই কাছে
মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে দিনরাত
বুকের ভিতর বিদ্যুৎ ভরা আছে।

বুকের ভিতরে গভীর অসহযোগ
বিদ্রূপ আর থাপ্পড় পড়ে মুখে ;
দুনিয়ার লোক হাসছে আমায় নিয়ে
বুক ভরে আছে বিদ্যুৎ আর সুখে

Facebook Comments

Leave a Reply