বেদশ্রুতি মুখার্জী-র কবিতা

আত্মহত্যার একটু আগে

নতুন কেনা ফুলিয়ার তাঁতে পুজো সেরে উঠে আয়নায়… এবার পিঁপড়ের মত খাবারের খোঁজ- রোজকার ইঁদুরদৌড়।

চুল আঁচড়াতে গিয়ে দেখি শাড়ির প্রতিটি সুতো বাড়তে বাড়তে ফাঁস হয়ে গেল। আমিও আজ পারছিনা ছাড়াতে নিজেকে, মিথ্যে অপবাদের জাল। কালুডোমের ফাঁসের চেয়েও ভয়াবহ শক্ত।

আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। গীতবিতান একটু আগে ঠাকুরঘরে ঝুলে পড়ল ‘বাসাংসি জীর্ণানি’ আর্তরবে। নিখুঁত ব্রুটাসের মুখ মনে করে শেষ বমিতে ভেসে যাচ্ছে আমার শাড়িটা।
আমার চোখ বুজে আসছে, ছটফট করছি মিথ্যা টেক্সট এর কালিতে। বার্ডম্যান- মাইকেল কিটনের মতোই একটু পরেই উড়ে যাব আকাশে।
আমায় নিতে চলেও এসেছে আনুবিস।

যদি পুনর্জন্ম বলে কিছু থাকে, তোমাকে ওসাইরিস এর রাজসভায় নিতে আসব।

মামেকং শরণং ব্রজ

অসহ‍্য অরিজিৎ ঘরের চারকোণে আরো বিষাদ ছড়াচ্ছে…
আমি পড়ছি ফ্রয়েড আর বুঝছি মদন তাঁতির তাঁতের মত খটখটাং মনোজগতে
ইকুইল্যাটেরাল ডাইমেনশনে জীবন আর আমি।
ম্যানহট্টান ডিসট্যান্সে জীবন আমায় ভেংচি কেটে পালায়।
আমিও জীবনের মুখে থুতু ছিটিয়ে মৃত্যুর নেলপলিশ লাগাই।

শুনছি আমার দ্বন্দ্বে ব্যাস নাকি পোড়াবেন চতুর্ভুজ চতুর্বেদ…
উনি এলে আমি কথ্থক শেখাবো ভাবছি।
কিংবা নীলাভ স্বপ্নিল চোখে সমুদ্র দেখাব,
নিদেনপক্ষে ওনার দাঁড়ি নিয়ে বিনুনি করে দোল খাবো।
দুই শব্দ-ব্রহ্মে ব্রহ্মার ঘুম উড়িয়ে-
আমি বিকেল পর্যন্ত গড়িয়ে গড়িয়ে ঘুমাবো।

বিছানা থেকে গড়িয়ে আমি নীচে পড়ে গেলাম হোমাগ্নিতে…
আমার জহর হচ্ছে নাকি এখানে???
দুহাতে আগুন জ্বালিয়ে সব খাক করব এইবার।
তারপর আমার মুখাগ্নির একমুঠো ছাই উড়িয়ে-
মাটিতে মিশব ঈশ্বর হয়ে।
প্রেমের অস্থি ভাসিয়ে সিজদা করব ঘৃণাকেই।
চারিদিকে এখন বারুদের গন্ধ, আর আমি তো
চিরকালই সুইসাইডিয়াল বোম্বার।
তারপর এই অপ্রেমে কেটে যাবে দু তিন জন্ম।

তারপর আবার জন্মালে ঈশ্বর হবো—
মানুষ হওয়া বড্ডো কঠিন। জাজমেন্টাল ঈশ্বরই সেফ।
আর উঠতি ছেলেমেয়েদের স্টেটাস দিয়ে যাব—
“মামেকং শরণম্ ব্রজ”…

আরেকটি খুনের গল্প

পাঁচ রাত থেকে একমুহূর্তও বৃষ্টি ধরেনি…
প্রতিটি রাত যেন মহাবলী পঞ্চপাণ্ডব,
ভেতরে-বাইরে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ চলছে।
“মা ফলেষু কদাচন”- আউড়ে ফ্রয়েডও চুপচাপ।
ক্ষয়িষ্ণু সিগারেটের মত পিষে গেছে আমার
বহু অর্জিত নাম, স্মৃতি -সত্তা -ভবিষ্যৎ ;
জানালায় পিছলে পড়ছে আলো, শব্দ, ভাব।

একটা করুণ সুর ভেসে আসছে আমার চিতা থেকে…
কাল নাকি আমার দ্বিজত্বপ্রাপ্তি???
এই অষ্টম মহাসাগরের জল ক্রমেই গিলছে
আলোকজন্মের চোরা মরুবালিয়াড়িটাকে।
আজীবন শুরুর আগেই চিতার কাঠ কাটি,
কালিদাসের মতোই ডালে বসে,
পার্থক্য এটুকুই— বনবাস হয়, মেঘদূত নয়।

ছায়াপিণ্ডের মত মিশকালো আমার গল্পেরা
বরাবরই খুব আত্মঘাতপ্রিয়।
অতিকষ্টে আমি তাদের অ্যাকিউরিয়ামে
টুকটাক প্লেটোনিক প্রেমের চার দিয়ে জোর করে জিইয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু- আবার শ্রাদ্ধ…
ইদানিং তারা খুনী কলমের ডগায় রোজ গলা দিচ্ছে।

Facebook Comments

Leave a Reply