ঔরশীষ ঘোষ-র কবিতা

জ্বরা ও জন্নাত

ফিরে আসি পোড়া দেশে, নিয়ত মিছিল অনুরাগে
শব বাহকের দল হেঁটে যায় রাতের গভীর
কালরাত্রি ডেকে আনে আড় বাঁশি স্মৃতির পরাগে
শাদা ফুল ফোটে বুকে, ভিজে যায় পাতার শরীর

‘আবার আসিব ফিরে’ বলে যারা চলে গেছে দূর
ভিরু ট্রাম নিয়ে যায় প্রতিদিন লাশকাটা ঘরে
দেখি জেগে আছে একা, শতছিন্ন বিষাদ মাদুর
বড় চেনা তার মুখ স্বপ্নভূক মাড়ীর শহরে

মৃত্যুনাম লিখে রাখি, আমি সেই রাখাল বালক
যার সাথে দেখা হলে এক মুঠো খই রেখে যায়
দেহ জুড়ে ফুটে ওঠে কৃষ্ণঘোর পাখির পালক
একপেট খিদে নিয়ে নিজের শরীর ছিঁড়ে খায়

এই জ্বরা ও জন্নাত – দুই মিলে আয়ু লিখে রাখে
নিয়তির পথে একা, মৃত্যু দেখি জন্মালোক মাখে

জাহাজীর গান

সারাদিন সারারাত চলে শুধু ছায়ার খনন
ভীরু শামুকের মতো সেও জাহাজীর গান গায়
যারা আজ ছিপ ছোঁড়ে, তিমির শিকারী কিছুজন
নিয়ত আদীম জলে তাদের শরীর মিশে যায়

কবেকার ঋণ বুকে চেপে রাখি নাভিশ্বাস তার
কাটা পড়া ঘুড়ি সেজে আকাশের শূন্যতা চিনেছি
আকাশ সমুদ্র আজ, সমুদ্র আকাশ কবেকার
আত্মাকে বিকিয়ে আমি নিত্য তার শরীর কিনেছি

মৈথুনের পর ঘাম মুছে দেয় বসন্ত বাতাস
স্বপ্নশীলা ভেঙে দেয় অযাচিত স্নেহের আঙুল
মৃদু তার যাতায়াত, গভীরে প্রবেশ করে শ্বাস
নাবিকের দড়িসুতো মেপে রাখে অতীত নির্ভুল

ইতিহাস কথা বলে, ইতিহাস বোবা হয়ে যায়
মৃত নাবিকের দেহ নতুন শরীর খু্জে পায়

জন্মের সঙ্গীত

অথচ ধ্বংসের শেষে শোনা যায় জন্মের সঙ্গীত
প্রতিবার হেরে যাবো এই ভয় জিতিয়ে দিয়েছে
সম্বল ছিল না কিছু, শুধু এই স্বপ্নের ব্যতীত
অন্ধকার গর্ভে তার আলোকিত ফুলেরা ফুটেছে
চরম আঘাত নিয়ে উঠে বসি রিঙের ভিতর
মুখ থেকে রক্ত মুছে খেলে ফেলি আরেক অধ্যায়
সহস্র মৃত্যুর দৃশ্যে দেবশিশু ছড়ায় আতর
মানুষের সঙ্গে আজ সেও ব্যস্ত কবর খোঁড়ায়

এখনো গল্পের শেষে নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যায়
শিকারী ছায়ার দল নতমুখে ফিরে গেছে ঘরে
অন্ধকার ছিন্ন করে অপার্থিব আলোর রেখায়
মনের ভিতরে তার জন্মবীজ বৃষ্টি হয়ে ঝরে

সমস্ত ধ্বংসের শেষে জন্ম নেয় পৃথিবী আবার
সূ্র্যালোক ছুঁয়ে যায় অগণিত লাশের পাহাড়

Facebook Comments

Leave a Reply