অর্ঘ্য কমল পাত্র-র কবিতা

চারচৌকো চিলেকোঠা

১.

ঠিক বাইশদিনের দুরত্ব জন্ম দিয়েছিল আমাদের খেলাগুলোর। দেশলাইয়ের মতো চিৎ হয়ে শুয়েছিলাম খোপের ভিতর।এখনো বহুদিন ফানুস ওড়েনি আকাশে।একটাও কোনো আঁচড় লাগেনি গাছে।একফোঁটা টাটকা নিঃশ্বাসের জন্য কেউ সিগারেট জ্বালাতে গেলেই, তোর আর আমার সংসার শুরু হবে।আমার ঠোঁটে বারুদ ছিল।আর তোর ছিল সদিচ্ছা।

২.

একটা কান্নার ভূমিকায় পৃথিবী শুকিয়ে গেছে। কেন এত কুয়াশা চারদিকে,জীবনানন্দ জানেন।আমাদেরও ঘর -আস্তানা আছে।বহুগামীতা-কে এখন বেশ উপভোগ করি।শাঁখের আওয়াজ ভীতু প্রেমিকের বড্ড প্রিয়।তোমার চুল থেকে নখ পর্যন্ত যতটা অস্থিরতা, যতটা রহস্য আছে, ততটা আমার কোনো কবিতায় আমি লিখতে পারিনি!সকাল ফিরে এলেই আমাদের চোখের থেকে আলো সরে যায়।আমরা দেখি বোকাচোদা নেতাগুলো গতকালের ছাপ সরিয়ে পিকনিক করতে যাচ্ছে। এই যে শাঁখের আওয়াজ হল— এসবই এখন বড্ড প্রিয় আমার। হু-হু এসে শৈত্যস্রোত গ্রাস করেছে আমার বিছানা। ওদিকে বিচিত্রানুষ্ঠানের সুর ভেসে আসছে…উঠতে ভালো লাগছে না তবু একদম!আমিও কী তবে ওল্টানো টবের মতোই শুকিয়ে যাচ্ছি!

৩.

এই সেদিন আমার সাথে গঙ্গার ঘাটে বসে লেবু চা খাচ্ছিল আমাদের কল্পনাশক্তি।কুকুরের ল্যাজের মতো একটুকরো বিষণ্ণতা বয়ে যাচ্ছিল মাছির মতো।ঘুম ভাঙা তক্ আমাদের ছেয়েছিল নাকছাবির মতন মেঘ।উঠতে হবে,চায়ের ভাঁড়টা ফেলে আসতে হবে ডাস্টবিনে।আমাদের পাশে যে কাঠের পুতুলগুলো এসে বসত,হাসতো, গাইতো, তারা এখন কল্পনার থেকে ডানা চুরি করে উড়ে গেছে…অগত্যা, এখন শুনতে হবে কল্পনার অনাবশ্যক বকবকানি…লিখতে হবে,তাকে নিয়েই…

৪.

ধীরে ধীরে একটা খোলসের ভিতর সেঁধিয়ে গিয়েছিলাম বিবেকের মতো।আমার এভাবে বড়ো হয়ে যাওয়া,বুড়ো হয়ে আসাই আমার ঘাড় বেঁকিয়ে দেয়। কোজাগরী ইতিহাসে আমার কথা আছে।কথা আছে আমাদের আর আমাদের সেই দুপুরগুলোর।কমলালেবু রঙের চাঁদে তোমার গন্ধ লেগে আছে।অথচ,চাঁদ দেখে লেখা হলো না একটাও কোনো গান।শুধু সমুদ্র আমাকে বোঝে।সে জানে,আমার আঙুলেই আছে স্বপ্ন দেখাবার ফর্মুলা। তাই সে আমার কথা ভেবে, পাঠিয়ে দেয় ঢেউ। আর প্রতিবছর বেড়াতে গিয়ে,সেই ঢেউয়ে ভিজে আসো তুমি…

৫.

একই ছাতার নীচে আমাদের হাঁটা হয়নি কোনোদিন।সুতরাং,খুলে রাখা ছাতার তলাকার বৃষ্টিতে এখনো ভেজা হয়নি।কোনো রকম উল্লাস না করে, বাঁ পকেটে একবাক্স দেশলাই আগলে বসন্ত পার করছি…রোদের সুতোয় বোণা হয়ে গেছে, একটা রঙিন মাফলার। আর তার কোণে লেগে থাকা অভিমানী ঘুমে, আমার চোখ বুজে আসে।সফল মানুষেরা ক্ষণজন্মা। এখনো আরো অনেক সূর্য দেখার ইচ্ছে, মিনিবাস চড়ার বদভ্যাসটুকু বজায় রেখেছে। ভোরবেলা নিশ্চিন্তে চোখ খুলি আমি।সারারাত নিজের একাকী নিঃশ্বাস শুনে চলার মতো ভয়ংকর আর বোধহয় কিছু নেই!

আকাশ ঠিক ততটুকুই, যতটুকু আমাদের দুচোখ দেখতে পাই…

Facebook Comments

Leave a Reply