অরিত্র চ্যাটার্জি-র কবিতা

শাদা রঙের কবিতা

তারপর আমায় বল তোমাদের শীতকুয়াশার মাঠে গত শতাব্দীর চিঠি সংগ্রহের কথা যেইখানে ইটচাপা ঘাসের নীচে অনেক খুঁজেছ পুরনো কাগজের লেখাজোখা এখনো বোঝা যায় কিনা, তার অক্ষরবিন্যাস এবং আশ্চর্য জ্যামিতি অনুধাবন কর, ঝুঁকে পড়ে ওইখানে আমি দেখেছি ভেজা ঘাসের ওপর কাগজ থেকে গড়িয়ে গিয়েছে গ্যাসীয় বল আর ভগ্নপ্রায় বর্ণমালা, পোড়া সিগারেটের ছাই অনুসরণ করতে করতে গোধূলি থেকে জ্যোৎস্নায় রড কোষ সহযোগিতায় দিব্যি দেখতে পাই শোলার হ্যাট পরিহিত ঈশ্বর বালিহাঁস ও ফেরারি চিঠিদের এয়ারগান সহযোগে সখেদে মাটিতে টেনে নামাচ্ছেন, তোমাদের শীতকুয়াশার মাঠে আদিদেব, এইখানে বিগত শতাব্দীর অপরাহ্ণে আমি আঙুল কেটে লিখেছিলাম পিতামহীর তৃতীয় সন্তানের উদ্দেশ্যে চিঠিসমূহ, তোমাদের শীতকুয়াশার মাঠ ও প্রজাপতিবিহীন সুউচ্চ মিনারেটের ওপর থেকে পিতামহীর সেই অরন্তুদ দীর্ঘশ্বাস ও মাড়িসর্বস্ব স্খলিত হাসি ভরপুর তৃতীয় সন্তানের জন্মের ও সপ্তাহান্তে মৃত্যুর পেন্ডুলাম স্বরুপ আখ্যান লিখতে গিয়ে হলুদ কাগজে, আদিদেব, কিভাবে শাদা রঙের কবিতা ফুটে ওঠে আমি জানি….

রংলি -রংলিওট

তুমি কখনোই আসলে ঠিকঠাক পেরিয়ে যেতে পারছো’না এইসব বিপ্রতীপ রেলব্রিজ ও সংযুক্ত গলিপথ, জোড়া রাস্তার বাঁকে ইতস্তত ভাসমান মানুষ ও গ্যাসবেলুন, সূর্যাস্তের লালচে অনুপান গেলাসময় চুমুক ঠোঁটের কষ বেয়ে নিম্নগামী গড়িয়ে পড়ে, দারুমাংস মুখে কয়েকটি নিস্তেজ মাতাল ও তাদের মোচড়ান তুরুপের তাস কেড়েকুড়ে নাও, এইসব লঘু ক্রীড়াভূমি ত্যাগ করতে চাও বহুকাল যাবৎ, এহেন ঘুমসময়ে কলকব্জা শীতল হয়ে আসে, লালচে বালির ময়দানে হেলান দেওয়ার জন্য ব্যক্তিগত পিরামিড খুঁজে ফিরছো, বালি ও পাথর আদিম নিয়মানুসারে পরস্পরকে আহ্বান করছে, স্বপ্ন এবং আধাবাস্তবের ভেতর কলেজ স্ট্রীটের ফুটপাথ বরাবর একটি গোলাপি ওড়নার পাশাপাশি কয়েকটা বছর হেঁটে দেখেছ কিভাবে পরিযায়ী ট্রামের পিছনে নিজস্ব পিরামিড ও ফাঁকা বাসস্টপ ধুয়েমুছে এক হয়ে যায়….

আমি আর আদিদেব

আমি আর আদিদেব, দুজনে মিলে হারিয়ে গিয়েছি অনেক
সাঁলো দেখেছো কি তুমি? রোগাটে আঙুল আর বিস্ফারিত চোখে
সে আমায় প্রশ্ন করেছিল প্রথম সাক্ষাতে, আমি চমকে উঠি
আমার যে তোমার মত দানবীয় রাগ নেই আদিদেব,
তবু আশ্চর্য ভাবে আমরা দুজনেই কবিতায় ‘শাদা’ লিখি
এইসব খুচরো আমোদগেঁড়েমো, আস্তাকুঁড়ের সামনে লন্ঠন
হাতে একটা লোক, তার পেছনে লেজ নাড়ছে কুকুর
তুমি আর আমি দুজনে আলাদা কারণে বলে উঠলাম “দিওজেনিস”
কলকাতার অলিগলিতে, আমরা হাঁটতে হাঁটতে অনেকদূর
যেন জেরুসালেম, ব্যাবিলন, হিদারাম ব্যানার্জি লেন অবধি
ঘন বর্ষার রাতে যা সবই ধুয়ে মিশে যায়, যেরকম রাতে
প্যারিসে ভায়েহো, নিজের মৃত্যু হবে লিখেছিলেন;
আসলে দুঃখরোগ আমাদেরও কম কিছু ছিলনা,
তবু হাজার পঁচিশেক টাকা পেলে একটা সিনেমা বানানো যেত
মৌলালী এলাকার একটি নড়বড়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে যেতে যেতে
আলোচনা করি, আর অনায়াসে ঢুকে পড়ি নিজস্ব বুদ্বুদের ভেতর
যেখানে জ্বলজ্বলে চোখ, জ্যান্ত রেখা সমাবেষ্টিত, ভাঙ্গাচোরা একটি লোক,
নীল ব্যালেরিনা এগিয়ে দেয়, সুহাসিনীর পমেটম আমি একশ বার পড়েছি,
যেন দৈববাণী ভেসে আসে চলমান লাইনের ভেতর, ওহ কি অসম্ভব মাদকতা
মদ খেয়ে দেখেছি, এইরকম নেশা হয়নি কোনদিন
আদিদেব, তুমি বলতে মদমুখে বসে আছি, যে শব্দ আমার অত্যন্ত
পাশবিক মনে হয়, নেশাতুর মাতালের লালচে ঠোঁটের পাশে
খুব মনোযোগ সহকারে আমি মদের রেখা খুঁজে দেখেছি
শিকারের রক্তের মত ঠোঁটের পাশে শুকনো মদের দাগ থাকলে কি
আমার লেখায় তোমার সেই মহাজাগতিক রাগ ফুটে উঠবে আদিদেব?

Facebook Comments

Leave a Reply