অনিন্দিতা গুপ্ত রায়-র কবিতা

আলোকচিত্র

জল তার ছায়া চেনে, কেঁপে ওঠা প্রতিকৃতির আবছায়া সে খুব যত্নের অনাদরে ভুলে থাকা পুরনো চিঠির মত আসলে গুছিয়ে রাখে। যতটুকু আলো তাকে চিহ্নিত করে, ফোকাসের দূরে থাকা পাখির একাগ্র ধ্যান তার কাছে আরো কিছু দাবী করে। অথচ বলে না কেউ—না জল না পাখির চোখ। শ্যাওলার ঝাঁক এসে সেই অবসরে পিপাসার কাছে তাকে অচ্ছুৎ করে। খিদে ও ঘুমের কিছু শর্ত পুরোনো—দিনকে গড়িয়ে যেতে দেয় চিরাচরিতের থেকে অনেক তফাতে।

জ্যামিতিক

কোন কোন বিন্দু থেকে ফেরা নেই অন্য কোথাও। আভাস ও ইঙ্গিত পরস্পরে মিশে গিয়ে যে স্বরলিপি, মূর্ছনার যতটুকু ইতিহাস, তাকে বদলে যেতে দেখে বিভ্রান্তের মত ভুল রাস্তায় সকালের সূর্য উঠে আসে। তীব্র অনাহারের মত ভুলতে না-পারা অস্বস্তি স্নায়ু ও শিরায়। প্রাচীন কাছিম হয়ে থেমে থাকা সময়ের পিঠে বসে স্থাণু—হেঁটে যাওয়া ছায়াদের কথা শুনি, পড়ি, দেখি শিকড়ের মায়া খুঁজে দীর্ঘতর হতে। অতঃপর ঘুম নেই—দুঃস্বপ্নের নিচে জন্মবৃত্তান্ত মনে পড়ে হারানো নদীর, যার কাছে ঢেউ স্রোত উপশম চেয়ে চেয়ে দুইচোখে স্বাদু জল। গোপন অস্ত্রগুলো দ্বিধাহীন ভেসে গেলে গলাজলে ধুয়ে নেওয়া হাতের মুঠোর সব বালি আর রক্তের দাগ। একলা বিন্দুটিও ততদিনে বৃত্ত ভীষণ। যাকে ছুঁয়ে উড়ে আসা সোনালী ভ্রমর—মধুভ্রমে শুষে খায় ব্যথাময় ক্ষত।

ছবি, ছায়া

ইচ্ছেমত রঙ মেশানোর অধৈর্যে কিছুটা জল উলটে ফেলি ক্যানভাসে। তক্ষুনি পাশ দিয়ে বেরিয়ে যেতে শুনি ভারী একটা ঝমঝম শব্দ। ফিকে অন্ধকারের গায়ে সেসময় ধাতব পাতের মসৃণ ধাক্কা অনির্দেশের দিকে গড়িয়ে যায়। উগরে দেয় গরাদ হীন করোটির খোপ থেকে ডানাকাটা দুপেয়ে পাখি ঝাঁক। বাতাস ধাক্কা মেরে তাকে আবার ফেরায় নিরুদ্দেশে। বেলা বাড়লে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অজস্র ভাঙাচোরা কাচ জড়ো করে দেখি প্রতিটিতে নিজেরই বিষণ্ণ মুখ। পরিভ্রমণের শেষে কোন পরমান্ন নেই, শোকহীন ছায়া নেই প্রাচীন গাছের। শুধু রোদ, ঠা ঠা রোদে পুড়ে যেতে যেতে ঝড়ের গন্ধ নিয়ে থেমে আছে উদ্ধত মেঘ কাছেই কোথাও। উদাসীনতার ভিতর পথ হারিয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় যেসব নদী… তাদের বাষ্পীভবনের খবর হিসেবে থাকেনা বলে আবহাওয়া সংবাদ ভুল হয়ে যায়।

Facebook Comments

Leave a Reply