অলোক বিশ্বাস-র কবিতা

ভাইরাসকে ধাওয়া করছি

আলোক রশ্মি দিয়ে ভস্ম করে দিচ্ছি ভাইরাস। একটা ভাইরাসকে ভস্ম করছি তো অন্য একটা ভাইরাস চলে আসছে। আলোক রশ্মি কমে এলে ইঁট, পাথর ছুঁড়ছি। সমুদ্রের নোনা ঢেউ ছুঁড়ছি। গাছপালা, অ্যালজেব্রা, পোস্টার ও চোরকাঁটা ছুঁড়ে মারছি ভাইরাসকে। সারা দেহে বিদ্যুৎশক্তি মেখে, মশালের ঘটনা জ্বেলে, সারা দেহে ঘাসের শ্বাশত মেখে, পৃথিবীর যাবতীয় অ্যান্টিবডি উঁচিয়ে ভাইরাসকে ধাওয়া করি। ভাইরাস, বন্ধু হতে চায় ছদ্মবেশে, প্রেমিকা হতে চায় ছদ্মবেশে, মায়াবী রেলপথ হতে চায়। শঙ্খ বাজাই, ঘণ্টা বাজাই, সমুদ্রকে ডাকি, রেলের চাকা ও রঙিন পেনসিলদের ঘুম থেকে ডেকে বলি, দ্যাখো, কিভাবে আমার প্রিয়জন, উচ্ছ্বসিত প্রাঙ্গণ, কিভাবে চাঁদের আলোমাখা পরিবর্তকে ঘিরে ফেলছে ভাইরাস। পৃথিবীর যতো পাখি আছে, বৃত্তান্ত আছে, কচ্ছপ ও জন্মদিন আছে সকলকে বলছি, আমাকে আরো অলোক রশ্মি দাও, যাতে মৃত্যুমুখে ঢলে পড়ে ভাইরাস সকলের চোখের সামনে…

ভাইরাস বলছে

ভাইরাস বলছে, আমি নাকি পৃথিবীকে ভালোবাসি না। আমি নাকি ফুলের প্রতীকে পেচ্ছাপ করেছি। সাদাকে কালো করতে আমার দু’মিনিটও সময় লাগে না। আমি নাকি ঈশ্বরকে ডাকতে গাঁকগাঁক চিৎকার করি। ভাইরাস বলছে, মিথ্যুক শহরে সে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম থেকে যাবে। আমি নাকি নদী ও সমুদ্রের জলে নৃত্য করি, পর্বতের হাই অল্টিটিউডে ঢাক ঢোল কাঁসর ঘণ্টা বাজিয়ে পশু বলি দিই, অন্যের জানলা থেকে ফুলকপি, ঝর্না, মেধাবী পোস্টকার্ড ও আপেল চুরি করি। আমি নাকি চাল ও গমের যৌবন, শ্রমিক ও গণতন্ত্রের গান চুরি করি। যেখানে যেখানে কারখানাগুলো গ্যাস লিক করে, যেখানে পরমাণু অস্ত্রের মহড়া হয়, যেখানে শিশু ও নারী বিক্রির হাট বসে, এসবের প্রতিটি জায়গায় নাকি আমার নগ্ন-মগ্ন মুদ্রা আছে। ভাইরাস বলছে, আমি নাকি অন্যের আকাশে বহুবার বিষ ছড়িয়েছি, তাই সে আমাকে কেবলি তাড়া করে যাবে। আমি আগুনের সম্মুখে এসে, খাদের সামনে এসে, মৃত্যুর সামনে এসে হাত তুলে দাঁড়াবো…

ভাইরাস ভর্তি হাওয়া

একরাশ ভাইরাস ভর্তি হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। বসে আছে ভাইরাস পাখির পিঞ্জরে। তেলেভাজা সহকারে মুড়িমাখায় শূন্যতা লেগেছে। গীতবিতান হাতে তুমি তাকিয়ে আছো ধূসর কোথাও। চিঠিপত্র, বইয়ের পার্সেল হাতে অলীক পোস্টম্যান দরজায় কড়া নেড়ে গেল। ভয়ে বাইরে বেরোলুম না। গতকাল যতো মানুষ মারা গেছে ভাইরাস যুদ্ধে, কেন বলছি, তারা কেউ আমাদের ছিল না। যে বৃক্ষের ছায়ায় বড়ো হয়েছি, যে বৃষ্টির জলে আনন্দ করেছি, যে আলোটির সঙ্গে দিবারাত্রি খেলেছি, তাদের সঙ্গ পেতে কেঁপে উঠছি ভয়ে। স্টেশনে আজ কোনো যাত্রী নেই, হ্রদে কোনো কৃষ্ণ রাধা নেই, পার্কে কোনো বৈয়াকরণিক নেই। ওষুধের দোকানে কেউ আর প্রেগনেন্সি নিরোধক ট্যাবলেট খুঁজতে আসছে না। টার্মিনাসে কয়েকটি কুকুর নির্জনতার কারণ বোঝার চেষ্টা করছে। বাড়ির সামনে হঠাৎ অ্যাম্বুলেন্স এসে নীলুদার পরিবার তুলে নিলো। নীলুদাকে আমি বহু জিজ্ঞাসায় দেখেছি। যিনি সারাজীবন ভাইরাসের জন্য কফিন ভেবেছেন। আজ নাকি নীলুদার নিঃশ্বাস থেকে ভাইরাস নির্গত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। আজ নাকি বৃষ্টির প্রতিটি বিন্দুর নাম শয়তান। ভার্টিগোয় পেয়েছে তোমাকে ভালোবাসা…

Facebook Comments

Leave a Reply