আহমেদ মুগ্ধ-র কবিতা

জোনাকিদের অনেক নগরী

তােমাকে দেখার ভেতর দিয়ে দেখা হয়ে যায়
জোনাকিদের অনেক নগরী,
জোনাকিরা প্রেমিকার মতাে আসে লােকালয়ে,অন্ধকারে;দেখে—জেগে আছে মানুষেরা,
মৃত্যুর দ্বারে যাবার আগে জীবনের শেষ পঙক্তির পর
পূর্ণচ্ছেদ যতিচিহ্নে কোনাে জােনাকিকে পাবার আশায়।
জীবনের সিলমোহর হবার মত যদিও স্থায়িত্ব নেই আলোর—
জোনাকিরা তাে প্রেমিকার মতই
বাতাস থেমে গেলে ফোঁটায় ফোঁটায় অন্ধকার নিয়ে চলে যায় দূরে,বহুদূরে—
সমুদ্রের কাছে ধ্বনির উপধ্বনি খুঁজে;
অন্ধকারের মতাে মানুষের ওত মৌলিকত্ব নেই বলে যতটা অনূদিত হয় জোনাকি,
অন্ধকার হয় নাকি তা কখনো ?

তোমাকে দেখার ভেতর দিয়ে মন হয়ে যায় বহমান-বৃক্ষ,
অন্ধকারে খুঁজে বেড়ায় আলাে।
আলো তো এই পৃথিবীতে পালিয়ে বেড়ানাে ফেরারি মাত্র;
তােমাকে দেখার ভেতর দিয়ে দেখা হয়ে যায় অনেক পাহাড়;
দূর হতে ওদের দেখে মনে হয় মেঘেদের দালান –
বৃষ্টিরা কোনদিনই পৃথিবীতে ফিরে আসে না আর,
মেঘ ভেবে পাহাড়কে পরায় যে জীবনের অলংকার!

তোমাকে দেখার ভেতর দিয়ে এত ভ্রম জমে আসে(বৃষ্টির মত যদিও ছন্দ নিয়ে) জীবনে—
তবুও তোমাকেই দেখি অনেক না দেখার ভেতরে গিয়ে নিজেকে আড়াল করে,
তোমার টবেও প্রতি রাতে ফুটে বহমান-ফুল;
প্রহেলিকারা,আমার ঘুম,আমার বয়স, খুঁজে ফিরে পাতাল রেলে ঘরে ফিরবার জন্যে শেষ ট্রেন–
মনের কাছে দত্তক দেয়া দেহ আমার নিদ্রাহীন রাত ছাড়া কিছু নেবে না আর!
উপকূলে বসে দেখি জোনাকিদের প্রাচীন শরীর
আটকে আছে সমুদ্রের অমানিশার জালে;
প্রতি বর্ষায় নদী মানুষকে ছুঁয়ে দিলে
তার বুক হয়ে যায় জল-ভূমি;
মাটি তো ভূমি নামক আশ্রয়ের ছলনা মাত্র
জল তার থেকে সত্য আর কি হয়?
তোমাকে দেখার ভেতর দিয়ে
দেখি অনেক ভুল জীবনে,
তবুও তোমাকেই দেখি–
তোমার স্মৃতিরা পলিমাটি হয়ে আসে আমার কবিতায়।

অন্তহীন সমর্পণে

মধ্যাহ্নের মেঘলা আকাশ—অনেক দূরত্ব
কাছে এসে মৃদু কলরবে ডেকে যাচ্ছে;
আমার শিরা-উপশিরায় তোমার ধ্বনিতে
প্রতিধ্বনি দিচ্ছে বিশ হার্জ কম্পাঙ্কের উপরে  তোমার ছায়ায় শিকার অপসৃত ধূসর আত্মা আমার।
চোখে নেমে আসা তন্দ্রায় তোমাকে আমি দেখছি
অথবা দেখছি না—তন্দ্রা যে ডালে সবুজ পাতারা,
সেখানে তুমি গভীর ঘুম,গাঢ়তর সবুজ কোনো  টিয়ে—
চলে যাচ্ছো তুমি বালুরাশি ধরে দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে–
এক দোয়েল দুপুরের বুক থেকে ছিটকে এসে, তোমার পায়ের ছাপে,ভাবে;
এই মরুভূমি কোনো গভীর পুকুরের তল কিনা!
বহুকাল ধরে চলে যাচ্ছো তুমি–
তোমার পায়ের দাগ যতটা চিনি
ততটা নয় তোমার মুখ;
উড়ে যাওয়া বালুরাশি তোমার প্রতি পদক্ষেপে
যেন দীর্ঘশ্বাস আমার–মরুভূমির বুকে
অজস্র ঢেউয়ের নিশ্চল সমুদ্র এক।
কঙ্কালের ভেতর বয়ে যাওয়া বাতাসের মত এস্রাজের সুরে
বহু মৃত ঘাস জন্মে এখন গ্রন্থাগারের কাঁচে।
বহু গ্রানাইট পাথরের মিউজিয়াম চুম্বনের আতিশয্যে
পার হয়ে যাওয়ার কথা ছিল আমাদের
অথচ আমরা হেঁটে যাই দুই পথে দু’জনে
বহুদিন আমাদের তাড়া করে ফেরা মিউজিয়ামের কাছে
প্রাগৈতিহাসিক জীবনের দুই বিশ্বস্ত টুকরো হয়ে—অন্তহীন সমপর্ণে—
তবু যেন এক লাটিমের ভেতরে
ঘুরেছি আমরা দু’জনে বহু-জীবন!

ফিবোনাক্কি মৃত্যু

আরো ঘুম;আরো ঘুম নিয়ে চোখে বসে আছি
আরো অনেক ঘুম সঞ্চয় করে তোমার কাছে যাব বলে—
নিজের শবদেহ পুড়িয়ে শীতগ্রস্ত রাতে ওম নেই হৃদয়ে।
তোমার ঘরের কাছে গেলে জীবনের কথা ভাবি, জীবনের কাছে গেলে মৃত্যুর—
বেঁচে আছি কেন?জনমভর শ্রমিকের মতন খেটে,
হৃদয়ের ভেতরে গড়ে তুলি ফিবোনাক্কি মৃত্যু–
মৃত্যুর ওপারে বসে আছো তুমি অনাকাঙ্ক্ষিত আমারে নিয়ে।
তাঁবু খাটিয়ো না আর,অনেক অনুর্বর হয়েছে জমি–
একটু বৃষ্টি ঝরুক,কিছুটা বৃষ্টি আমার ব্যক্তিগত হোক!
ওয়াকিটকি ফেলে এসেছি ভুল গ্রহে–
জীবনের সাথে সংযোগ এমনিতেই বহু কম
কিছুটা তো জীবন দাও—
এবার উর্বর করে তুলো অন্তত কিছু মাইল!
অনেক মাদল বাজে এখানে–ঘুমে বড্ড যন্ত্রণা;
কিছুটা তো জীবন দাও যতটা মৃত্যুর জন্য প্রয়োজন!
জীবন-মৃত্যুর নো ম্যানস ল্যান্ডে পড়ে আছি বহুকাল—
আর কতকাল অনাহুত পাখির জীবন!
Facebook Comments

1 thought on “আহমেদ মুগ্ধ-র কবিতা Leave a comment

Leave a Reply