এ কে এম আব্দুল্লাহ-র কবিতা
মানুষ
আজকাল পকেট থেকে
বেরিয়ে যাচ্ছে মানুষ।
আর তাদের পকেট থেকে
শহর ভেঙ্গে
নামছে কলঙ্ক
বিভিন্ন রঙের—
শহরগুলো দাঁড়িয়ে আছে
পিয়ানোর রিডে।
পথ খুঁজতে হারিয়ে যাচ্ছে পা।
ক্র্যাচ দাঁড়িয়ে
কনসার্টরুমে—
ব্যাকগ্রাউন্ডে ভাসে মুদ্রিত সময়।
ভডকার দানা ভেঙে
কথার শৃঙ্গারে—
বিবেকের লেবেল এঁটে
অ্যাডিয়েন্স ক্রমশ বদলে যাচ্ছে—
পীড়িত দৃষ্টিপাত
ভোরের দেয়ালে লাগানো আয়না
ক্রমশ বদলে যাচ্ছে। আয়নার ভেতর
দৃশ্যগুলো ক্লান্ত, বহুকাল।
দৃশ্যের ফাঁকে আমরা বড় একা
আটকে আছি অসুস্থ সময়ের আচ্ছাদনে।
তবুও আতঙ্ক আর দীর্ঘশ্বাস
গোপন করে আকাশের দিকে তাকাই
দেখি, আমাদের বারান্দায় আকাশ থেকে
ঝরছে নতুন চাঁদের ভাঙ্গা আলো।
আমরা আধভাঙ্গা বিশ্বাস নিয়ে—
তাকিয়ে থাকি সেই বারান্দার দিকে।
চাঁদের জন্মদিনে কুড়োই জোছনাপুড়া সুখ
সামাজিক ব্যারিকেড ভেঙে নতুন চাঁদ
জন্ম নিচ্ছে—
এখন জন্ম নেয়া চাঁদের
নতুন হাসি আর
আমাদের বারান্দা ছ’ফিট ফারাক
যেভাবে দবদবে সাদা পাঞ্জাবী আর
আমাদের ছেঁড়া চামড়া।
এরপর আমাদের বস্তি আর পুত্র-কন্যার
নাক ফাঁকি দিয়ে উড়ে যায়
চাঁদের আলো
অভিজাত পাড়ায়—
যেখানে গোল্ডেন হুকে লটকে থাকে
ভডকার দানা। যেখান থেকে
আমাদের হাতে তুলে দেয়া হয়
লোকদেখানো লেবেলের গোল্লা সাবান।
আমারা সেই প্যাকেট
ছাইড-ডিশ ভেবে
নিয়ে আসি তিনটুকরো ইটের চুলোয়
যেখানে সারাটি বছর আমাদের দৃষ্টি পোড়ে।
আর আমাদের পাকস্থলি চৌচির হয়
কিচিনের গ্রিল ভাঙা দৈনিক ঘ্রাণে।
বুকে পোষি মধ্যরাতের বুদবুদ
সেই কবে আমাদের আকাশ থেকে হারিয়ে গেছে বিশুদ্ধ বাতাস।সেই কবে আমাদের অরণ্য থেকে বিলুপ্ত হয়েছে সবুজ চিৎকার।
আর আমরা যারা ক্যামিক্যাল আর বাণিজ্যিক শো’ডাউনে পৃথিবীবিক্রি করতে চেয়েছিলাম ; এখন দাঁড়িয়ে আছিহ্যান্ডসেনিটাইজারের দীর্ঘ লাইনে। এখন আমাদের মাথার ওপরদিয়ে ওড়ে সাবানের ফেনাবাহী অ্যায়ারক্রাফট।আমাদের চোখথেকে ঝরে ঝরে পড়ে সাজানো দম্ভ।
একদা পৃথিবীকে নিজস্ব প্রেমিকা ভেবে যারা ঠোঁটে ল্যাপটেছোজৈব-ইমেজ। শক্তপেশী জুড়ে লিখেছ নিজস্ব শপিংমলের খসড়াউপসংহার। তোমাদের তান্ডবে ছিঁড়ে গেছে পৃথিবীর পাঁজর। যেপৃথিবী গোলাপজল বুকে রেখে তোমাদের শিখিয়েছিলো সাঁতার।
এখন তোমাদের কপালের ভাঁজ থেকে ঝরে পড়া অবৈধ শৃঙ্গারদেখে— পৃথিবী হেঁটে যায়। কেবল হেঁটে যায়…
একটি ব্যাক্তিগত ইমাজিনেশন
বাবার বুকে কোনো পকেট নেই। আমাদের কিচিনে রাইছকুকারেরওকোনো সিটি বাজে না ; চুড়িরও। ফায়ারপ্লেসে পুড়ে যাওয়া কাষ্টেরমতো— মায়ের হাত।
এখন আমাদের জিহ্বার নিচ থেকে নেমে আসা তাপমাত্রা ; সমাজের প্যারালাইজড ছাদ ছিন্ন করে— আকাশের দিকে উড়েযাচ্ছে। আর সভ্যতার বগলে রাখা থার্মোমিটার ভেঙে ভেসে যাচ্ছেজ্বলন্ত পারদ। এখন আমাদেরকে ঘিরে আছে রক্তাক্তব্রাশফায়ার।
মাঝেমধ্যে বিভিন্ন রঙের ফিতায় বড় বড় কার্ড ঝুলিয়ে সাংবাদিকআসেন। স্ট্যাথোস্কোপ দিয়ে চেক করেন আমাদের বুকেরআওয়াজ। নোটবুকে কী যেন লিখে নেন ; আমাদের কোনোদিনজানা হয় না।
আসলে,আমাদের মুখে কিংবা বুকে এখন আর কোনো শব্দ নেই।আমরা নিজেদের মুখ দেখিনি বহুকাল। আসলে আমাদের ঘরেকোনো আয়না নেই। আমরা ভুলে গেছি— বাঁচার ইমাজিনেশন।
Posted in: May 2020 - Cover Story, POETRY